সুমন ভট্টাচার্য: যাঁদের কে চাটার্ড ফ্লাইটে নিয়ে গিয়ে অমিত শাহ গলায় মালা পরিয়ে গেরুয়া শিবিরে নিয়েছিলেন,সেই রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রবীর ঘোষালরা যে হারে বিজেপি কে আক্রমণ করছেন,তাতে দেশের শাসক দল কোথায় মুখ লুকোবে? এরপরে অন্য কোনো রাজ্য দখল করতে মরিয়া শাহ যদি একইরকম ভাবে দল ভাঙানোর খেলায় নামেন,তাহলে আরএসএস তাতে সম্মতি দেবে তো? পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচন যে ক্রমাগতই বিজেপি র কাছে ওয়াটারলু হিসেবে ফিরে আসছে, তার রোজই নতুন নতুন নজির দেখা যাচ্ছে|
কেন ওয়াটারলু বললাম? কারণ গত ৭ বছরে যা কখনও হয়নি, এবার অমিত শাহ জেপি নড্ডাদের সেই পরিস্থিতিরও মুখোমুখি হতে হচ্ছে| অর্থাৎ তৃণমূল থেকে ভাঙিয়ে যাঁদের বিজেপি তে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, তাঁরা গেরুয়া শিবির ছাড়তে এতটাই মরিয়া যে রাহুল গান্ধীর সঙ্গে দেখা করতেও চেষ্টা চালাচ্ছেন| অর্থাৎ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বা অভিষেক যদি এই দলবদলুদের আর ফেরত না নেন, তাহলে তাঁরা প্রয়োজনে কংগ্রেসে চলে যাবেন, কিন্তু বিজেপি তে থাকতে চান না| বিজেপি ছেড়ে এই নেতারা কংগ্রেসে চলে গেলে অমিত শাহর আস্ফালন, বিশ্বের সবথেকে বড় দল বলে বিজেপি র যে দম্ভ, তা কোথায় থাকবে?
সোজা কথায় বলতে গেলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি কে যে দুরমুশ করেছেন, তার পর থেকেই গোটা দেশে গেরুয়া শিবিরের ভাবমূর্তি হাস্যস্পদ হয়ে গিয়েছে| পশ্চিমবঙ্গে ভোটের পরে সন্ত্রাস হচ্ছে, এই প্রচার তুলে বিজেপি গোটা দেশে যে কাউন্টার ন্যারেটিভ তৈরির চেষ্টা করেছিল, তাতেও জল ঢেলে দিচ্ছেন শুভ্রাংশু রায় কিংবা রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় রা| শুভ্রাংশুও এর আগে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট দিয়ে নির্বাচিত সরকারের সমালোচনার বিরুদ্ধে মতপ্রকাশ করেছিলেন,মঙ্গলবার রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ও সেই পথে হেঁটেছেন| মুকুল রায় পুত্র কিংবা প্রাক্তন সেচমন্ত্রী বিজেপির ঘোষিত পার্টিলাইনকে উড়িয়ে দেওয়ার পরেও গেরুযা শিবির তাঁদের দল থেকে বার করে দেওয়া তো দূরের কথা, একটা শোকজের চিঠি পর্যন্ত ধরাতে পারেনি|
অমিত শাহ যে কংগ্রেস মুক্ত ভারতের কথা এতদিন চিৎকার করে বলতেন,সেই কংগ্রেসে গিয়ে যদি বিজেপির দলবদলুরা নাম লেখান, তাহলে জাতীয় রাজনীতিতে বিজেপি র কতটা মুখ পুড়বে? গৌরব গগৈ কিংবা বেণুগোপালের সঙ্গে যোগাযোগ করে কারা রাহুল গান্ধীর হাত থেকে পতাকা নিতে চাইছেন, সেই কথা ফাঁস হয়ে গেলে পরে বিজেপি সিবিআই আর ইডির ভয় দেখিয়ে দলে কতজনকে আটকে রাখতে পারবে? আর একবার পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি তে ভাঙনের কথা প্রকাশ্যে এসে গেলে রাজ্যে রাজ্যে তার প্রভাব পড়বে না? গোয়া, মণিপুর বা কর্ণাটকের মতো বিভিন্ন রাজ্যে যাঁদের ভাঙিয়ে এনে বিজেপি সরকার গড়েছিল, তাঁরা আর গেরুয়া শিবিরে থাকবে তো? অমিত শাহ কে ভারতের রাজনীতির চাণক্য বলে তুলে ধরে যে প্রচারের ঢক্কানিণাদ চলতো, সেটা নিয়েও তো উপহাস শুরু হয়ে যাবে|
২০২৪ তো অনেক দূরের বিষয়,সামনের বছরের মহা গুরুত্বপূর্ণ উত্তরপ্রদেশ বিধানসভা নির্বাচনের আগেই তাই বিজেপি র ভাবমূর্তি মহাসংকটে| একে তো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দেখিয়ে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী কিংবা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যত চেষ্টা করুন, যত প্রচার করুন, বিজেপি কে একেবারে বাপি বাড়ি যা করে দেওয়া যায়| দ্বিতীয়ত বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব যে বাংলার লড়াইকে আলটিমেট ব্যাটল হিসেবে তুলে ধরেছিল, সেই বাংলাতেই কেউ আর গেরুয়া ঝান্ডা ধরতে আগ্রহী নয়| মুকুল রায় থেকে রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়, রোজ যেভাবে বিজেপির তথাকথিত অনুশাসন অথবা শৃঙ্খলার মুখে ঝামা ঘষে দিচ্ছেন, তাতে গেরুয়া শিবিরের পক্ষে মুখ লোকানোও কষ্টকর|
লাল-নীল-গেরুয়া...! 'রঙ' ছাড়া সংবাদ খুঁজে পাওয়া কঠিন। কোন খবরটা 'খাচ্ছে'? সেটাই কি শেষ কথা? নাকি আসল সত্যিটার নাম 'সংবাদ'!
'ব্রেকিং' আর প্রাইম টাইমের পিছনে দৌড়তে গিয়ে দেওয়ালে পিঠ ঠেকেছে সত্যিকারের সাংবাদিকতার। অর্থ আর চোখ রাঙানিতে হাত বাঁধা সাংবাদিকদের।
কিন্তু, গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভে 'রঙ' লাগানোয় বিশ্বাসী নই আমরা। আর মৃত্যুশয্যা থেকে ফিরিয়ে আনতে পারেন আপনারাই। সোশ্যালের ওয়াল জুড়ে বিনামূল্যে পাওয়া খবরে 'ফেক' তকমা জুড়ে যাচ্ছে না তো? আসলে পৃথিবীতে কোনও কিছুই 'ফ্রি' নয়। তাই, আপনার দেওয়া একটি টাকাও অক্সিজেন জোগাতে পারে। স্বতন্ত্র সাংবাদিকতার স্বার্থে আপনার স্বল্প অনুদানও মূল্যবান। পাশে থাকুন।.