সুমন ভট্টাচার্যঃ কোনো রাজনীতিকই ফেসবুকের নিয়মনীতির উর্ধ্বে নয়| যদি কারও বক্তব্য আপত্তিকর বা বিদ্বেষমূলক মনে হয়, তাহলে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ তা নামিয়ে দেবে| ফেসবুক সিইও মার্ক জুকেরবার্গের এই ঘোষণা গভীর তাৎপর্য বহন করে| বিশেষ করে ভারতের মতো দেশের ক্ষেত্রে| এর থেকে পরিষ্কার কেন্দ্রের বিজেপি সরকার যতোই চোখরাঙানোর চেষ্টা করুক, টুইটার বা ফেসবুকের মতো মার্কিনী তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থাগুলি নিজেদের আন্তর্জাতিক নীতি থেকে সরছে না| জুকেরবার্গের বিবৃতিই বলে দিচ্ছে ঠিক যেভাবে তাঁরা প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ফেসবুক একাউন্ট দু বছরের জন্য বন্ধ করে দিতে পারেন, তেমনভাবে ভারতের কোনো রাজনীতিককেও নিষিদ্ধ করতে পারেন|

ফেসবুকের এই সিদ্ধান্ত বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ| কারণ এতদিন তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠতো, বিজেপি র দিল্লির নেতা কপিল মিশ্র বা তেলেঙ্গানার বিধায়ক যতোই প্ররোচনামূলক বিবৃতি দিয়েছেন বা পোস্ট করেছেন,সেগুলির বিষয়ে এই তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা কোনো ব্যবস্থা নেয়নি|গত বছর দিল্লির সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সময় কপিল মিশ্রর বিরুদ্ধে বারবার অভিযোগ উঠেছে, তিনি ফেসবুকে যথেষ্ট প্ররোচনামূলক পোস্ট দিয়েছেন|

এতদিন ফেসবুক যুক্তি দিত, তারা রাজনীতিক বা সরকারের পদে থাকা কোনও ব্যাক্তির পোস্টকে স্ক্রিনিং বা ঝাড়াইবাছাইয়ের মধ্যে ফেলছে না, কারণ সেই পোস্টে কোনো খবর বা তথ্য থাকতে পারে| কিন্তু ট্রাম্পকে কেন্দ্র করে মার্কিন মুলুকে যে বিতর্ক দেখা দিয়েছিল, এবং তার পরে ক্যাপিটল হিলে ট্রাম্প সমর্থকদের হামলার পরিপ্রেক্ষিতে সোশ্যাল মিডিয়া কোম্পানিকে অনেক সতর্ক থাকতে হচ্ছে| জুকেরবার্গ নিজেই বলেছেন, ওভারসিজ বোর্ড তাদের যে নির্দেশ দেবে, তা তাঁরা অক্ষরে অক্ষরে অনুসরণ করবেন| এবং এই নিয়মাবলী তারা মানে ফেসবুক গোটা পৃথিবী জুড়ে অনুসরণ করবে|

ফেসবুকের এই সিদ্ধান্ত ভারতের শাসকদলকে যে কড়া চ্যালেঞ্জের মধ্যে ফেলে দেবে সেই বিষয়ে কারও কোনো সন্দেহ নেই| কারণ দীর্ঘদিন ধরে ভারতবর্ষের বিরোধী দলগুলি অভিযোগ করে আসছে বিজেপি র আইটি সেলের বিরুদ্ধে| মার্কিন মুলুকের ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের মতো সংবাদপত্র প্রতিবেদন ছেপেছিল যে ভারতে শাসকদল বিজেপিকে সন্তুষ্ট রাখতে ফেসবুক গেরুয়া শিবিরের নেতারা ঘৃণা ছড়ালেও তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয় না, তাদের পোস্টকে নামিয়ে দেয় না| এই নিয়ে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল ফেসবুকের আভ্যন্তরীণ মেল চালাচালি বা ওয়াচডগ সংস্থাগুলির পাঠানো সতর্কবার্তাও ছেপে দিয়েছিল| ভারতে এবং আমেরিকায় প্রবল হইচই শুরু হওয়ার পর ফেসবুকের ভারতের পাবলিক পলিসি ডিরেক্টরকে চাকরিও ছেড়ে দিতে হয়| কিন্তু আমেরিকার নির্বাচন এবং অতি দক্ষিণপন্থীদের তান্ডব যে ফেসবুক কে নিজেদের অবস্থান বদলে বাধ্য করেছে,সেটা পরিষ্কার|

ফেসবুক তাদের এই আন্তর্জাতিক নীতি ঠিক সেই সময় ঘোষণা করল যখন এমনিতেই ভারতে বিজেপি সরকারের সঙ্গে সোশ্যাল মিডিয়া কোম্পানিগুলির টানাপোড়েন চলছে| হোয়াটস অ্যাপের গোপনীয়তা রক্ষার দাবি নিয়ে ফেসবুক দিল্লি হাইকোর্টে মামলা করেছে| টুইটারের সঙ্গেও বিজেপি নেতৃত্বের দড়ি টানাটানি চলছেই|

লাল-নীল-গেরুয়া...! 'রঙ' ছাড়া সংবাদ খুঁজে পাওয়া কঠিন। কোন খবরটা 'খাচ্ছে'? সেটাই কি শেষ কথা? নাকি আসল সত্যিটার নাম 'সংবাদ'! 'ব্রেকিং' আর প্রাইম টাইমের পিছনে দৌড়তে গিয়ে দেওয়ালে পিঠ ঠেকেছে সত্যিকারের সাংবাদিকতার। অর্থ আর চোখ রাঙানিতে হাত বাঁধা সাংবাদিকদের। কিন্তু, গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভে 'রঙ' লাগানোয় বিশ্বাসী নই আমরা। আর মৃত্যুশয্যা থেকে ফিরিয়ে আনতে পারেন আপনারাই। সোশ্যালের ওয়াল জুড়ে বিনামূল্যে পাওয়া খবরে 'ফেক' তকমা জুড়ে যাচ্ছে না তো? আসলে পৃথিবীতে কোনও কিছুই 'ফ্রি' নয়। তাই, আপনার দেওয়া একটি টাকাও অক্সিজেন জোগাতে পারে। স্বতন্ত্র সাংবাদিকতার স্বার্থে আপনার স্বল্প অনুদানও মূল্যবান। পাশে থাকুন।.