সৌপ্তিক বন্দ্যোপাধ্যায় : অনলাইন গেমও (online gaming) ধীরে ধীরে উপার্জনের রাস্তা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এমনটাই মনে করছে ভারতের অনলাইন গেমিং শিল্পক্ষেত্রের জন্য অলাভজনক শীর্ষ সংস্থা অল ইন্ডিয়া গেমিং ফেডারেশন (AIGF)। তারা নয়া রিপোর্ট পেশ করেছে, যার শিরোনাম “অনলাইন গেমিং ইজ এ লাইফ স্কিল”। সেখানেই এই তথ্য উঠে এসেছে।
রিপোর্টের উদ্দেশ্য ছিল বুঝে নেওয়া গেমাররা কোন কোন দক্ষতাকে ‘জীবনের জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা’ বলে গণ্য করে, কীভাবে সেই দক্ষতাগুলো অর্জন করে, তারা কাজের জায়গা থেকে সেই দক্ষতাগুলো কার্যকরীভাবে শিখেছে কিনা, এবং এর মধ্যে কোন দক্ষতাগুলো (skill) গেমিং-এর মাধ্যমে শেখা যায়। সেখানেই এই তথ্য মিলছে। বলা হচ্ছে, প্রতি চারজনে একজন গেমার মনে করে অনলাইন গেমিং একটা চালিয়ে যাওয়ার মত পেশা। এ থেকে বোঝা যায় এই শিল্পক্ষেত্রে এই মুহূর্তে কীরকম পরিবর্তন হচ্ছে। গত এক বছরে লকডাউন (lockdown) আর সামাজিক দূরত্বের ফলে ক্রমশ আরও বেশি মানুষকে গেমিং-এর জন্য তাদের আবেগকে পূর্ণ সময়ের কেরিয়ারে পরিণত করতে দেখা গেছে। এখন একটা ইস্পোর্টস কোম্পানির সাথে চুক্তিবদ্ধ একজন পেশাদার গেমার মাসে ৫,০০০ থেকে ৪৫,০০০ টাকা পর্যন্ত আয় করতে পারে। একটা জনপ্রিয় মোবাইল গেমের ২০১৯-এর ভারত সিরিজের আঞ্চলিক ফাইনালিস্ট ফল জিতেছিল ৪,৫০,০০০ টাকা।
রিপোর্ট বলছে কলকাতার ৮১% গেমার অনলাইন গেম খেলে মোবাইল ফোনে। তাছাড়া শহরের ৫২% গেমার একমত যে অনলাইন গেম খেলে তাদের জোরালো বিশ্লেষণ ক্ষমতা তৈরি হয়েছে, কারণ তাদের নিয়মিত একটা গেম জেতার সেরা উপায়টা বের করতে হয়।
সব মিলিয়ে দেখা গেছে গেমারদের ৭৬% বিশ্বাস করে নিয়মিত একটা গেম জেতার সেরা উপায় খুঁজতে খুঁজতে তারা জোরালো বিশ্লেষণ দক্ষতা অর্জন করতে পেরেছে। এদের অর্ধেকের বেশি (৫৭%) মনে করে একজন ব্যক্তি সারাদিন কাজের জায়গায় যেভাবে জীবনের জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতায় শান দিতে পারে, সেভাবেই অনলাইন গেমের মাধ্যমেও পারে। ৫৭% পুরুষ ও ৫৬% মহিলা এ ব্যাপারে একমত।
এই রিপোর্ট থেকে অনলাইন গেমাররা জীবনের জন্য প্রয়োজনীয় কোন কোন দক্ষতাকে গেমিং-এর জন্য সবচেয়ে জরুরি মনে করে তা-ও জানা গেছে। রিফ্লেক্স (৬৫%), এবং স্ট্র্যাটেজি ও যুক্তি (৬৮%) সবচেয়ে বেশি জরুরি দুটো দক্ষতা বলে গণ্য করা হয়েছে, খুব কাছাকাছি আছে সংকল্প (৫৩%) আর ঝুঁকি/রিটার্ন বুঝতে পারা (৫২%)। ৪৬% বলেছে স্মৃতি গুরুত্বপূর্ণ।
লক্ষ্য করার মত, যে রিপোর্ট অনুযায়ী গেমাররা বাস্তব জীবনের কাজের ক্ষেত্রে যে সম্পর্কগুলো আছে, তার চেয়ে তাদের অনলাইন গেমিং টিমমেটদের প্রতি বেশি ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছে। ৫৬% গেমার বলেছে তাদের গেমিং টিমমেটদের প্রতি সৎ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি, সহকর্মীদের সাথে কম (৫১%)। এই তফাত ৪৫ বছরের (২%) বেশি বয়সীদের তুলনায় জেন জি (৫%)-র মধ্যে বেশি। এটা নর্টনের করা এক সমীক্ষার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ। সেই সমীক্ষা অনুযায়ী জেন জি-র ৮১% উত্তরদাতা বলেছে যে অনলাইন মাল্টিপ্লেয়ার গেমগুলো তাদের টিমওয়ার্ক দক্ষতা বাড়িয়ে দিয়েছে। ৭১% বলেছে গেমিং তাদের জ্ঞানমূলক দক্ষতা বাড়াতে সাহায্য করেছে।
রিপোর্টে পাওয়া তথ্যগুলো সম্বন্ধে রোল্যান্ড ল্যান্ডার্স, সিইও, অল ইন্ডিয়া গেমিং ফেডারেশন, মন্তব্য করেন, “জীবনে উন্নতি করার জন্য নিরপেক্ষভাবে বিশ্লেষণ করার ক্ষমতা, সৃজনশীলতা, সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা এবং সমস্যার সমাধান করার ক্ষমতা অবশ্য প্রয়োজন। আমরা এই গবেষণার মধ্যে দিয়ে বুঝতে চেয়েছিলাম ক্রেতারা মোবাইল গেমিং-এর মূল্য সত্যিই বোঝেন কিনা। এই সমীক্ষা থেকে আমরা সিদ্ধান্ত করলাম যে গেমিং হল যৌথভাবে কাজ করা, আদান প্রদান করার একটা পথ এবং এটা এমন একটা সেক্টর হয়ে উঠছে যেখানে মানুষ কেরিয়ার তৈরি করতে চায়।”
ফতেমা আগরকর, ফাউন্ডার, আগরকর সেন্টার অফ এক্সেলেন্স (এসিই), বললেন, “এডুটেনমেন্টের এই ধরনটা যত বদলায় তত গেমিং স্মৃতি, বিশ্লেষণ ক্ষমতা, মনসংযোগ এবং অন্য জটিল জ্ঞানমূলক দক্ষতা অভ্যাস করার জায়গা হয়ে দাঁড়ায়। সত্যি কথা বলতে শিক্ষাক্ষেত্রে অনেকে লেসন প্ল্যান করার ক্ষেত্রে গেমিংকে ব্যবহার করে ব্লেন্ডেড লার্নিং ফরম্যাটে ব্রেক-অ্যাওয়ে সেশন হিসাবে, এমনকি মূল্যায়নের জন্যেও। এর গুরুত্ব যখন বাড়তে থাকে, জ্ঞানমূলক ও বিশ্লেষণ দক্ষতা বাড়িয়ে উত্তর দেওয়ার সময় দ্রুততর হয়, এবং জায়গা ব্যবহার করার ক্ষমতা বেড়ে যায়, তখন দেখা গেছে গেমাররা মুহূর্তের মধ্যে সিদ্ধান্ত নিতে পারে বলে সমস্যা সমাধান করার জন্য বেশি প্রস্তুত থাকে’।
লাল-নীল-গেরুয়া...! 'রঙ' ছাড়া সংবাদ খুঁজে পাওয়া কঠিন। কোন খবরটা 'খাচ্ছে'? সেটাই কি শেষ কথা? নাকি আসল সত্যিটার নাম 'সংবাদ'!
'ব্রেকিং' আর প্রাইম টাইমের পিছনে দৌড়তে গিয়ে দেওয়ালে পিঠ ঠেকেছে সত্যিকারের সাংবাদিকতার। অর্থ আর চোখ রাঙানিতে হাত বাঁধা সাংবাদিকদের।
কিন্তু, গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভে 'রঙ' লাগানোয় বিশ্বাসী নই আমরা। আর মৃত্যুশয্যা থেকে ফিরিয়ে আনতে পারেন আপনারাই। সোশ্যালের ওয়াল জুড়ে বিনামূল্যে পাওয়া খবরে 'ফেক' তকমা জুড়ে যাচ্ছে না তো? আসলে পৃথিবীতে কোনও কিছুই 'ফ্রি' নয়। তাই, আপনার দেওয়া একটি টাকাও অক্সিজেন জোগাতে পারে। স্বতন্ত্র সাংবাদিকতার স্বার্থে আপনার স্বল্প অনুদানও মূল্যবান। পাশে থাকুন।.