মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডাকা শনিবারের বৈঠকে কী অভিষেকের 'অভিষেক'! নজর রাজনৈতিকমহলের

দোসো পার করে বঙ্গ গড় বাঁচানোর লড়াইয়ে নেপথ্য থাকা নায়ক। মাঠে নেমে খেলে একের পর এক গোল করলেন। তৃতীয়বার নজির গড়ে বাংলার মসনদে তৃণমূল। আর জয়ের কৃতিত্বের সিংহভাগই ব্র্যান্ড মমতার পাশাপাশি 'ভাইপো' অভিষেককেই দিচ্ছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ থেকে তৃণমূল নেতারা স্বয়ং।

এবার ভোটে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মোদী থেকে শাহ, রাজনাথ -স্মৃতির আক্রমণের নিশানায় ছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সারা ভোটপর্বে যতবার বিরোধীদের মুখে শোনা গিয়েছে 'দিদি' কটাক্ষ, তার থেকে অন্তত কয়েকগুণ বেশি বার উচ্চারিত হয়েছে ভাইপোর নাম।

বিধানসভা নির্বাচন চ্যালঞ্জ ছিল অভিষেকের কাছে

এবার ২১ এর নির্বাচন মমতার বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে তো বটেই তার থেকেও বেশি ছিল অভিষেকের কাছে ছিল বড় চ্যালেঞ্জ। লোকসভা নির্বাচনে বাংলায় কার্যত ভরাডুবি একাধিক বিধাণসভা আসনে। আর এরপরেই ভোট কৌশলী প্রশান্ত কিশোরের শরণাপন্ন হন অভিষেক। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সবুজ সঙ্কেত দিতেই দলের মধ্যে কাজ শুরু করেন প্রশান্ত। কিন্তু যে কৌশলে দলের মধ্যে কাজ শুরু করেন ভোট কৌশলী তাতে খুব অল্পদিনের মধ্যেই দলের মধ্যে কার্যত বিস্ফোরণ ঘটে। একের পর এক তৃণমূল বিধায়ক-সাংসদ বিস্ফোরক হয়ে অল ছাড়ার ঘোষণা করে। ভোট যত এগিয়ে আসে তত লম্বা হয় বিদ্রোহীদের তালিকা।

মাথা ঠান্ডা রেখে কাজ করে গিয়েছেন

ভোট যত এগিয়ে এসেছে অভিষেকের উপর আক্রমণও বেড়েছে। তৃণমূল ছেঁড়ে আসা নেতারা তো বটেই, দিল্লির নেতারাও লাগাতার আক্রমণ শানিয়েছেন তাঁকে। একাধিক ইস্যুতে আক্রমণ হয়েছে। স্ত্রী সহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের জেরা করতে সোজা বাড়িতে পৌঁছেছে সিবিআই। ঘন্টার পর ঘন্টা জেরা করেছে। কিন্তু মাথা ঠান্ডা রেখে প্রত্যেকটা অভিযোগের যোগ্য জবাব দিয়েছেন। পালটা বহিরাগত সহ একাধিক ইস্যুতে বিরোধীদের জবাব দিয়েছেণ মুখ্যমন্ত্রী ভাইপো। আর যার ফল ভোট প্রকাশের পর পেয়েছেন তৃণমূল সুপ্রিমো!

সরাসরি দলীয় সংগঠনে প্রভাব বাড়ার সম্ভাবনা

যেভাবে অভিষেক প্রবল বিজেপির হাওড়ার মধ্যেও তৃতীয়বারের জন্যে ফের তৃণমূলকে নবান্নে নিয়ে এসেছে তাতে দলের মধ্যে প্রশংসা পাচ্ছেন তিনি। আর এরপরেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পর ব্যাপক মান্যতা বেড়েছে অভিষেকের। ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনে সাফল্য এনে দেওয়ার পর এবার সরাসরি দলীয় সংগঠনে প্রভাব বাড়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে অভিষেকের। যুব সভাপতি থেকে দলের কার্যনির্বাহী কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদই শুধু নয়, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পর তাঁকেই দলের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ পদে দেখতে চাইছে দলের একটা বড় অংশ। আর দলের অন্যান্য সদস্যদের ইচ্ছাকেই সম্ভবত মান্যতা দিয়ে চলেছেন তৃণমূল সুপ্রিমো!

শনিবারের মেগা সাংগঠনিক বৈঠকে অভিষেকের 'অভিষেক'!

প্রবল বিজেপি হাওয়াকে ফু দিয়ে উড়িয়ে ফের একবার নবান্নে মমতা। যার অন্যতম কান্ডারি অভিষেক। প্রবল জয়ের পর এই প্রথম সাংগঠনিক বৈঠক ডেকেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সূত্রের খবর, একাধিক পদে রদবদল হতে পারে। দলের সাংগঠনিক পদে হবে এই পরিবর্তন। অনেকের নাম বাদ যেতে পারে আবার অনেককে আনা হতে পারে। এই অবস্থায় ২১ এর নির্বাচনে অভিষেকের ভূমিকার কথা মাথায় রেখে দলের গুরুত্বপূর্ণ রাশ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতেই যেতে পারে। উল্লেখ্য, ফলপ্রকাশের পর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে একাধিকবার অভিষেকের সঙ্গে আলোচনা করতে দেখা গিয়েছে। অনেকেই বলছেন, নেত্রী এখন অনেকটাই ভরসা করছেন ভাইপোর উপরে। আর সে কারণে অন্য কারোর থেকে পরিবারের সদস্যদের উপরেই ভরসা রাখতে চাইছেন তিনি।

পদ চাই না

ভোটের আগে এক জনপ্রিয় টিভি চ্যানেলের সাক্ষাৎকারে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, দল চাইলেও তিনি কোনও পদ চান না। আগামী ২০ বছর তাঁর কোনও পদ দরকার নেই। আর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হলেন একাই একশো। তাঁর কোনও ডেপুটি মুখ্যমন্ত্রীর দরকার নেই। আমরা সবাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সৈনিক। তাঁর সৈনিক হয়েই কাজ করব। বর্তমানে দলের সেকেন্ড ইন কম্যান্ড তিনি। তৃণমূলের অবিসংবাদী যুবরাজ। এই সব তত্ত্বই তিনি উড়িয়ে দেন। অভিষেক বলেন, তিনি তৃণমূলের একজন সৈনিক, সাধারণ কর্মী। ডি ফ্যাক্টো, যুবরাজ, সেকেন্ড ইন কম্যান্ড- এইসব তকমা চাপিয়ে দেওয়া। তিনি এসব তকমাও চান না, কোনও পদও চান না আগামী ২০ বছর।

More ABHISHEK BANERJEE News  

Read more about:
English summary
abhishek banerjee may plays more important role in trinamool congress