মোদীকে টক্কর দিতে 'বিরোধী' মুখ্যমন্ত্রীদের প্রতি বার্তায় ঘুঁটি সাজালেন মমতা! অগ্নিকন্যার মুখে 'শোলে'র সংলাপ
২০২১ সালের বিধানসভা ভোটের 'টাফ গেম' তিনি জিতে নিয়েছেন 'হোম টার্ফে'। এবার জাতীয় রাজনীতির ময়দানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ক্রমাগত মোদী শিবিরকে কোণঠাসা করার চেষ্টায় রয়েছেন। সাম্প্রতিক রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের বদলি ইস্যুতে কেন্দ্র-রাজ্য সংঘাত দেখা গিয়েছে। সেই ইস্য়ুতে বক্তব্য রাখতে গিয়ে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়ে মমতা একাধিক বার্তা দেন। বার্তা দেন অবিজেপি ও অ-এনডিএ শিবিরের মুখ্যমন্ত্রীদের প্রতিও।

অগ্নিকন্যার মুখে 'শোলে' র সংলাপ
'জো ডর গয়া , ও মর গয়া' কালজয়ী ফিল্ম 'শোলে'-র এই সংলাপ কার্যত কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারীকায় জনপ্রিয়তার শিখরে রয়েছে। আর সেই সংলাপকে পাথেয় করে মমতা সাফ বলেন, 'জো ডরতে হ্যায় , ও মরতে হ্যায়।' এই ধ্বনি প্রতিধ্বনিত করেই মমতা কার্যত কেন্দ্রের বিরুদ্ধে গর্জে ওঠেন। বাকি অবিজেপি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদেরও কেন্দ্রের 'একনায়কতন্ত্র'এর বিরুদ্ধে সরব হতে বার্তা দেন মুখ্যমন্ত্রী।

২০২৪ এর আগে প্রস্তুত পিচ!
আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় ইস্যুতে কথা বলতে গিয়ে মমতা বলেন, একদিন কেন্দ্র নিজের কর্মকাণ্ডের জন্য অনুশোচনা করবে। 'আমরা ওদের ভয় পাইনা', এই বক্তব্য পেশ করেই মমতা বলেন, বাংলা কোনওদিনওই হারতে শেখেনি। আমরা মাথা উঁচু করে দাঁড়াই। আর তাঁর সঙ্গে যেন বাকি মোদী বিরোধী মুখ্যমন্ত্রীরাও এককাট্টা হন , তার বার্তা দেন মমতা। শুধু বিরোধী শিবিরের মুখ্যমন্ত্রীরাই নন, তারসঙ্গে আইএএস ও আইপিএসদেরও এই একনায়কতন্ত্রের বিরুদ্ধে গর্জে ওঠার বার্তা দেন মমতা।

যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো নিয়ে গর্জে উঠলেন দিদি
মমতা সাফ জানান, 'কেন্দ্র ও রাজ্যের কাজের মাঝখানে একটি লক্ষণ রেখা থাকা উচিত', এরই সঙ্গে তাঁর দাবি দেশের যুক্তরাষ্ট্র কাঠামোর উপর 'বুলডোজার' চালাচ্ছে কেন্দ্র। মমতার দাবি বিভিন্ন জায়গা থেকে কেন্দ্র ব্যাকফুটে যাওয়ার পর ,সেই ব্যার্থতা থেকে নজর ঘোরাতে কেন্দ্র এমন পদক্ষেপ নিচ্ছে।মমতা বলেন, এখন আমলা সংক্রান্ত বিষয়েও অনৈতিক কার্যকলাপ করছে কেন্দ্র। তবে এর ফলে 'আমাদের লড়াই থেকে কেউ রুখতে পারবে না।'

ঘুঁটি সাজানো শুরু করলেন মমতা
প্রসঙ্গত, ২০২১ সালে বাংলার তখতে বসে বিভিন্ন ইস্যুতে কেন্দ্রকে কোণঠাসা করে একের পর এক চিঠি মোদীকে প্রেরণ করতে থাকেন বাংলার অগ্নিকন্যা। পাশপাশি বিভিন্ন অবিজেপি রাজ্যগুলির মুখ্যমন্ত্রীদের ক্রমেই একজোট হয়ে কেন্দ্রের বিরোধিতার বার্তা দেন তিনি। এদিকে, বহু বিশেষজ্ঞ মহলের দাবি, মমতার এমব পর পর পদক্ষেপের জেরে স্পষ্ট হচ্ছে তৃণমূল ২০২৪ লোকসভা ভোট নিয়ে ককটা ফোকাসড। আর তার পিচ প্রস্তুতিতেই আপাতত এই 'এককাট্টা' থাকার বার্তা শুরু হয়েছে। প্রসঙ্গত, সাম্প্রতিক এক সমীক্ষায় মোদী বিরোধী শিবিরের প্রধানমন্ত্রী পদের দাবিদার হিসাবে মমতার পক্ষে দেশের ৪ শতাংশ মানুষ রায় দিয়েছেন। টুইটারে ট্রেন্ড করেছে 'বেঙ্গলি প্রাইম মিনিস্টার' । এর আগে ২০২৪ সালে বারাণসীর বুকে মমতা-মোদী টক্করের জল্পনাও শুরু হয় তৃণমূলের একটি টুইট থেকে। আর তারপর মমতার এই পত্র-বোমা ও এককাট্টার বার্তা বেশ প্রাসঙ্গিক বলে মনে করছে বহু মহল।

এককাট্টার ডাক
এদিকে, এর আগে সোনিয়া গান্ধীর তরফেও রণদীপ সুরজেওয়ালা আলাপন ইস্যুতে মমতার পাশে দাঁড়ান। কেন্দ্রের বিরুদ্ধে গর্জে ওঠেন এই কংগ্রেস নেতা। অন্যদিকে, কেন্দ্রের বিরুদ্ধে সরব হয়ে কেরল থেকে মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন একজোট হওয়ার ডাক দেন ১২ মুখ্যমন্ত্রীকে। তাঁদের মধ্যে ছিলেন মমতাও। ফলে মোদী বিরোধী শিবিরের ঘুঁটি ধীরে ধীরে তৈরি করে ফেলতে শুরু করল মোদী বিরোধী শিবির। যার অন্যতম মুখ হয়ে উঠছেন মমতা।