টি ২০ বিশ্বকাপ
করোনা পরিস্থিতিতে টি ২০ বিশ্বকাপ ভারত থেকে সংযুক্ত আরব আমিরশাহীতে সরলে যেমন পজিটিভ দিক আছে, তেমনই নেগেটিভ দিকও রয়েছে। বিশ্বকাপের আগে আইপিএল সংযুক্ত আরব আমিরশাহীতে হলে সবচেয়ে সুবিধা হবে এক জৈব সুরক্ষা বলয় থেকে বিশ্বকাপের জৈব সুরক্ষা বলয়ে ক্রিকেটারদের পাঠানোর ক্ষেত্রে। বায়ো বাবল ট্রান্সফার যদি পজিটিভ দিক হয় তাহলে নেগেটিভ দিক হলো স্টেডিয়ামগুলি। দুবাই, আবু ধাবি ও শারজায় খেলা হয় আইপিএল। টি ২০ বিশ্বকাপ সেই দেশে হলে এখানেই খেলা হবে। পিচ প্রস্তুতি থেকে শুরু করে বিশ্বকাপের মতো গ্লোবাল ইভেন্ট আয়োজনের যাবতীয় আয়োজন সারতে বেশ কিছুটা সময় হাতে রেখেই স্টেডিয়ামগুলি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেয় আইসিসি। সেক্ষেত্রে আইপিএল নিয়ে বোর্ডের যেমন ভাবনা রয়েছে তাতে স্টেডিয়ামগুলি কবে বিশ্বকাপের জন্য দেওয়া হবে সেটাও বড় প্রশ্ন। আইপিএল ও বিশ্বকাপ মিলিয়ে ৭৬টি ম্যাচ হবে সংযুক্ত আরব আমিরশাহীতে। ফলে ভালো মানের পিচ বানানোও বড় চ্যালেঞ্জ হতে চলেছে।
(ছবি- বিসিসিআই/আইপিএল)
ওমান নিয়ে ভাবনা
কোয়ালিফায়ার-সহ টি ২০ বিশ্বকাপে ৪৫টি ম্যাচ রয়েছে। গত বছর আইপিএলে ৬০টি ম্যাচ হয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরশাহীতে। ফলে এবার আইপিএল ও টি ২০ বিশ্বকাপ ধরলে অতিরিক্ত ১৬টি ম্যাচ থাকছে। ফলে আইসিসি প্রথম রাউন্ডের কিছু ম্যাচ ওমানে করতে চাইছে বলেও খবর। তবে সেক্ষেত্রে ওমান থেকে সংযুক্ত আরব আমিরশাহীতে এলে যাতে দলগুলিকে কোয়ারান্টিনে থাকতে না হয় সে বিষয়ে ইউএই সরকারের কাছে অনুমতির আবেদনও চাওয়া হতে পারে। আইসিসি ইভেন্টে অংশ নিতে এমনিতে সাত দিন আগে পৌঁছালেই হয়। কিন্তু সংযুক্ত আরব আমিরশাহীতে কোয়ারান্টিনে থাকার কী নিয়ম হয় সে ব্যাপারটির উপর নির্ভর করবে ক্রীড়াসূচি ও দলগুলির সে দেশে পৌঁছানোর সময়সীমা। বিশ্বকাপের আগে দলগুলি প্রস্তুতি ম্যাচও খেলতে চাইবে। আর এ সবের সঙ্গেই সংঘাত হতে পারে বিসিসিআইয়ের আইপিএল আয়োজনের পরিকল্পনার।
কাঁটা সিপিএল
অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্রিকেটারদের নিয়েও। কারণ ১৯ সেপ্টেম্বর অবধি চলবে ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগ। ফলে ১৮ বা ১৯ তারিখ থেকে আইপিএল শুরু হলে শুরুর দিকে ক্যারিবিয়ান তারকাদের পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে। বিসিসিআই উইন্ডিজ ক্রিকেটকে সিপিএলের ক্রীড়াসূচিতে রদবদল আনার অনুরোধ করবে বলে মনে করা হচ্ছে। ২৮ আগস্ট থেকে শুরু সিপিএল। তার আগে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে শেষ টেস্ট শেষ হবে ২৪ অগাস্ট। ফলে সিপিএল এগিয়ে আনার সুযোগ কম। সিপিএল ও আইপিএলে খেলা ক্যারিবিয়ান ক্রিকেটারদের মধ্যে রয়েছেন কায়রন পোলার্ড (মুম্বই ইন্ডিয়ান্স), আন্দ্রে রাসেল ও সুনীল নারিন (কলকাতা নাইট রাইডার্স), ক্রিস গেইল ও নিকোলাস পুরাণ (পাঞ্জাব কিংস), ডোয়েইন ব্র্যাভো (চেন্নাই সুপার কিংস), সিমরন হেটমেয়ার (দিল্লি ক্যাপিটালস)। এ ছাড়াও ফাফ দু প্লেসি ও ইমরান তাহির (চেন্নাই সুপার কিংস) এবং ক্রিস মরিস (রাজস্থান রয়্যালস) খেলেন সিপিএলে। পাঁচটি টি ২০ ও দুটি টেস্ট খেলতে পাকিস্তানের ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর শুরু ২৭ জুলাই। তার আগে দেশের মাটিতে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধেও সিরিজ রয়েছে। ৩ অগাস্ট শেষ টি ২০-র পর ১২ অগাস্ট থেকে দুটি টেস্ট রয়েছে। তারপর সিপিএল যা শেষ হবে ১৯ সেপ্টেম্বর।
কোয়ারান্টিনের নিয়ম
গত বছর বাবল টু বাবল ট্রান্সফার হয়েছিল। সিপিএল এবং ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়া সিরিজ খেলে ক্রিকেটাররা চার্টার্ড বিমানে আইপিএল খেলতে গিয়েছিলেন। আবু ধাবিতে যাঁরা গিয়েছিলেন তাঁদের এক সপ্তাহ কোয়ারান্টিনে থাকতে হয়েছিল। দুবাইয়ে যাঁরা গিয়েছিলেন তাঁরা শুধু করোনা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েই মাঠে নামতে পেরেছিলেন। এখন অতিমারি পরিস্থিতিতে সংযুক্ত আরব আমিরশাহী সরকারের নিভৃতবাসের বিধিনিষেধের উপরও নির্ভর করছে আইপিএলের ক্রীড়াসূচি। তাছাড়া চার্টার্ড বিমানে ক্যারিবিয়ান ক্রিকেটাররা দুবাই পৌঁছালেও উইন্ডিজ ক্রিকেট ক্রীড়াসূচি না বদলালে সকলকে প্রথম থেকে পাওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।
অনিশ্চিত ইংল্যান্ড ক্রিকেটাররাও
ইংল্যান্ডের সীমিত ওভারের ক্রিকেট দলের অনেকেই আইপিএলে প্রথম একাদশের নিয়মিত সদস্য। ফের আইপিএল শুরু হলে তাঁরাও খেলতে পারবেন কিনা তা স্পষ্ট নয়। কেন না, ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ডের ডিরেক্টর অ্যাশলে জাইলস বলেছিলেন, দেশের হয়ে খেলাই প্রাধান্য ইংল্যান্ড ক্রিকেটারদের কাছে। ভারতের বিরুদ্ধে টেস্ট সিরিজ শেষ হলেই ইংল্যান্ডের বাংলাদেশ ও পাকিস্তান সফর রয়েছে টি ২০ বিশ্বকাপের আগে। ফলে অনিশ্চিত ইয়ন মর্গ্যান (কলকাতা নাইট রাইডার্স), জস বাটলার, বেন স্টোকস ও জোফ্রা আর্চার (রাজস্থান রয়্যালস), জনি বেয়ারস্টো ও জেসন রয় (সানরাইজার্স হায়দরাবাদ), স্যাম কারান ও মঈন আলি (চেন্নাই সুপার কিংস), ক্রিস ওকস ও টম কারান (দিল্লি ক্যাপিটালস)। অনিশ্চিত নিউজিল্যান্ড ও আফগানিস্তানের ক্রিকেটাররাও। টি ২০ বিশ্বকাপের আগে সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে নিউজিল্যান্ড পাকিস্তানে যাবে সীমিত ওভারের সিরিজ খেলতে। সেপ্টেম্বরে সংযুক্ত আরব আমিরশাহীতে আফগানিস্তান খেলবে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে। সেই সঙ্গে পাকিস্তান সুপার লিগ হবে সংযুক্ত আরব আমিরশাহীতে। এত ম্যাচের চাপ নিয়ে কতটা ভালো উইকেট বিশ্বকাপে হবে সেটাই বড় চিন্তা।
(ছবি- বিসিসিআই/আইপিএল)