লখনউ: কোভিডের(Covid-19) এই প্রভাবে গত বছর কাজ হারিয়েছিলেন বহু মানুষ। লকডাউনে নিজের কাজ হারানোর পর হাতের কাছে যা কাজ পেয়েছেন তাই করেছেন অনেকে। সবাই আশা করেছিলেন এই বছর হয়তো পরিস্থিতির উন্নতি হবে। কিন্তু কোভিডের দ্বিতীয় ওয়েভের প্রভাবে এই বছর দেশের পরিস্থিতি আরও উদ্বেগজনক চেহারা নিয়েছে। আবারও কাজ হারিয়েছেন বহু মানুষ। এই কোভিডের প্রভাবেই উত্তরপ্রদেশের বিভিন্ন স্পোর্টসের বহু কোচ নিজেদের কাজ হারিয়েছেন। এখন সংসার চালানোর জন্য তাঁরা কেউ চা বিক্রি করছেন, কেউ আবার করছেন কাঠমিস্ত্রির কাজ। সম্প্রতি নামী এক সংবাদ মাধ্যমের তরফ থেকে সেই রাজ্যে একটি পর্যালোচনা করা হয়েছিল। তাতেই উঠে এসেছে এই তথ্য। আজ এমনই তিন কোচের সম্বন্ধে জেনে নেওয়া যাক।

সঞ্জীব কুমার গুপ্তা (Sanjeev Kumar Gupta)
লখনউয়ের সঞ্জীব কুমার গুপ্তা(Sanjeev Kumar Gupta) একজন অভিজ্ঞ ফেন্সার। তিনি পাতিয়ালার নেতাজী সুভাষ ন্যাশানাল ইন্সটিটিউট অফ স্পোর্টস(NIS) থেকে থেকে ফেন্সিংয়ে ডিপ্লোমা করেছেন। পাঁচ বারের পদকজয়ী সঞ্জীব কোচ হিসেবে বহু বছর ইন্ডিয়ান মিলিটারি অ্যাকাডেমিতে(Indian Military Academy) কাজ করেছেন। কিন্তু সেই সঞ্জীবই এই লকডাউনে কাজ হারিয়ে দৈনিক ৩০০ টাকা মজুরিতে কাঠমিস্ত্রি হিসেবে কাজ করছেন।

সঞ্জীবের ১২ বছরের মেয়ে খ্যাতি জাতীয় স্তরের সোনাজয়ী ফেন্সার। কিন্তু তিনি অর্থের অভাবে বড় প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করার জন্য মেয়েকে পোল্যান্ড পাঠাতে পারেননি। তিনি উত্তরপ্রদেশের প্রাক্তন রাজ্যপাল রাম নায়েকের(Ram Naik) কাছে সাহায্যের আবেদন করেছিলেন। সেই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর কাছে চিঠিও লিখেছিলেন কিন্তু কেউই কোনও সাহায্য করেননি।

জাতীয় পর্যায়ে রাজ্যের প্রতিনিধিত্ব করা সঞ্জীবের অর্থাভাব এতই চরমে উঠেছে যে তাঁর মেয়ের স্কুল যাওয়া পর্যন্ত বন্ধ করে দিতে হয়েছে। সঞ্জীবের ১৪ বছরের ছেলে দিব্যাংশেরও ফেন্সিংয়ে আগ্রহ রয়েছে, কিন্তু সংসারের অভাবের কারণে সে আস্তে আস্তে নিজের আগ্রহ হারাতে শুরু করেছে।

সংসারের এই অর্থাভাব দূর করতে সঞ্জীব সরকারের কাছে আপাতত একটি স্থায়ী চাকরির আবেদন করছেন। যাতে তাঁর পরিবারকে আর এত কষ্ট ভোগ করতে না হয়।

মহেন্দ্র প্রতাপ সিং (Mahendra Pratap Singh)
বছর চুয়াল্লিশের মহেন্দ্র প্রতাপ সিং(Mahendra Pratap Singh) পেশাগতভাবে তিরন্দাজির কোচ। তিনি কলকাতার ন্যাশানাল ইন্সটিটিউট অফ স্পোর্টস(NIS) থেকে তিরন্দাজিতে ডিপ্লোমা করেছেন। ৮ বছর জাতীয় স্তরে তিরন্দাজিতে উত্তরপ্রদেশের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। কোচ হিসেবেও তাঁর প্রায় ১৮ বছরের অভিজ্ঞতা রয়েছে। কোচ হিসেবে তিনি উত্তরপ্রদেশ স্পোর্টস ডিরেক্টরেট(UP Sports Directorate) এবং ইন্ডিয়ান মিলিটারি অ্যাকাডেমিতে(Indian Military Academy) কাজ করেছেন। কিন্তু এই মহেন্দ্রবাবুই এই লকডাউনের কারণে এখন অর্থাভাবে ভুগছেন। তাঁর অর্থাভাব এতই চরমে উঠেছে, তাঁর দুই পুত্র দেবাংশ(৮) এবং বেদাংশের(৫) স্কুল যাওয়া বন্ধ হয়ে গিয়েছে।

মহেন্দ্রবাবু এখন সংসার চালাতে নিজের বাড়ির সামনে সিঙ্গারা বিক্রি করেন। তিনি এক জনপ্রিয় সংবাদমাধ্যমের কাছে আক্ষেপ করে বলেছেন সারা জীবন ধরে শুধুমাত্র তিরন্দাজদের তিনি প্রশিক্ষণ দিয়ে এসেছেন। এঁদের মধ্যে অনেকে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক স্তরে নিজের রাজ্য ও দেশের প্রতিনিধিত্বও করেছেন। কিন্তু এখন নিজের দুর্দশা দেখে তাঁর মাঝেমধ্যে মনে হয় স্পোর্টসকে পেশা হিসেবে বেছে তিনি কোনও ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন কিনা।

মহম্মদ নাসিম কুরেশি (Mohammad Naseem Quereshi)
ছাপান্ন বছর বয়সি মহম্মদ নাসিম কুরেশি(Mohammad Naseem Quereshi) জাতীয় পর্যায়ে বক্সিংয়ে উত্তরপ্রদেশের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। তিনি চুক্তিগত প্রশিক্ষক হিসেবে ৩২ বছর ধরে বহু জাতীয় স্তরের বক্সারদের অনুশীলন করিয়েছেন। কোভিডের জন্য এই লকডাউন ঘোষণা হওয়ার আগে অবধিও তিনি এই কাজ করছিলেন। তবে এই লকডাউনের পরে তিনি অর্থের সংস্থানের জন্য চা বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছিলেন।

তবে তাঁর কিছু ছাত্ররা তাঁকে এই কাজ করতে বাধা দেন এবং নিজেরা এই কঠিন সময়ে গুরুর দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন। নাসিমবাবু সরকারের কাছে আবেদন করেছেন যাতে এই কঠিন সময়ে তাঁকে কিছু সাহায্য করা হয়।

উত্তরপ্রদেশের এই তিন কোচের দুর্দশার কথা সেই রাজ্যের স্পোর্টস ডিরেক্টর আরপি সিং(RP Singh) জানতে পেরেছেন। তিনি কথা দিয়েছেন এবার চুক্তিভুক্ত কর্মী নিয়োগের বিষয়টিকে তিনি অগ্রাধিকার দেবেন।

লাল-নীল-গেরুয়া...! 'রঙ' ছাড়া সংবাদ খুঁজে পাওয়া কঠিন। কোন খবরটা 'খাচ্ছে'? সেটাই কি শেষ কথা? নাকি আসল সত্যিটার নাম 'সংবাদ'! 'ব্রেকিং' আর প্রাইম টাইমের পিছনে দৌড়তে গিয়ে দেওয়ালে পিঠ ঠেকেছে সত্যিকারের সাংবাদিকতার। অর্থ আর চোখ রাঙানিতে হাত বাঁধা সাংবাদিকদের। কিন্তু, গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভে 'রঙ' লাগানোয় বিশ্বাসী নই আমরা। আর মৃত্যুশয্যা থেকে ফিরিয়ে আনতে পারেন আপনারাই। সোশ্যালের ওয়াল জুড়ে বিনামূল্যে পাওয়া খবরে 'ফেক' তকমা জুড়ে যাচ্ছে না তো? আসলে পৃথিবীতে কোনও কিছুই 'ফ্রি' নয়। তাই, আপনার দেওয়া একটি টাকাও অক্সিজেন জোগাতে পারে। স্বতন্ত্র সাংবাদিকতার স্বার্থে আপনার স্বল্প অনুদানও মূল্যবান। পাশে থাকুন।.