নয়াদিল্লি : কৃষি আইনের (farmers law) বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করছিলেন তিনি। প্রতিবাদ করতে করতেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন ৬৯ বছরের বৃদ্ধ। তাকে শহিদ তকমা দিল বাকি আন্দোলনকারী কৃষকরা (farmer)। এই দৃশ্য বিরল এবং চমকে দেওয়া বললে কোনও ভুল হবে না।

জানা গিয়েছে এই করোনা পরিস্থিতিতে দিল্লি সীমান্তে কৃষকদের প্রতিবাদ তুলে নেওয়ার আবেদন করেছিল বিশেষজ্ঞরা। তা অবশ্য কোনও কাজ দেয়নি। প্রতিবাদ চালিয়ে গিয়েছে কৃষকরা। বিক্ষোভে যোগ দিতে হরিয়ানার হিসারে যাচ্ছিলেন বৃদ্ধ কৃষক। যাবার পথেই শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি মারা গিয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। প্রতিবাদকারীরা তাঁকে শহিদ তকমা দিয়েছেন। কিন্তু অভিযোগ অন্যরকম। জানা গিয়েছে মৃত কৃষকের নাম রাম চান্দের। অভিযোগ হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়া ওই ব্যক্তিকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়নি। তার বদলে তাঁকে প্রতিবাদের স্থানে নিয়ে আশা হয়। তাঁর দেহ জাতীয় পতাকা (national flag) দিয়ে মুড়ে দেওয়া হয়। প্রায় ৭ হাজার কৃষক সেখানে উপস্থিত ছিলেন। তারা স্বাভাবিক ভাবেই কেউ দূরত্ব বিধি মানেননি। ছিল না মাস্ক।

তাঁর সঙ্গেই গ্রাম থেকে এসেছিলেন এক কৃষক। তিনি জানিয়েছেন, বিষয়টা আচমকাই ঘটে। তারা বিক্ষোভ স্থল থেকে খুব কাছেই ছিলেন। পথে সুস্থ ও স্বাভাবিক ছিলেন রাম চান্দের। মাঝে প্রাকৃতিক কর্ম সেরে আসেন। তারপরেই শরীর খারাপ করতে শুরু করে। আচমক শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। কিছু বুঝে ওঠার আগেই মারা যান তিনি। তাঁর পরিবারে স্ত্রী সহ চার মেয়ে দুই ছেলে আছেন বলে জানা গিয়েছে। কিছুদিন আগেই গ্রামে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে বিক্ষোভ দেখাতে আসেন। তারপরেই এই দুর্ঘটনা। ওই ব্যক্তি করোনা আক্রান্ত বলে মানতে নারাজ কৃষকরা।

এদিকে কেন্দ্রের নয়া কৃষি আইনের (Three Farm Laws) প্রতিবাদে আন্দোলনরত কৃষকরা আগামী ২৬ মে দিনটিকে ‘কালো দিবস’ হিসেবে পালনের ঘোষণা করল। জানা গিয়েছে দিল্লি সীমানায় এই দিন কৃষক আন্দোলনের ছয় মাস সম্পন্ন হওয়ার পাশাপাশি কেন্দ্রে মোদী সরকাররে সাত বছর পূর্ণ হতে চলল। প্রায় ৪০টি কৃষক সংগঠন নিয়ে চলমান এই আন্দোলনে সংযুক্ত কিষাণ মোর্চা ২৬ মে দিনটিকে স্মরণ করেই এই বিশেষ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বলে জানা গিয়েছে। কৃষক নেতা বলবীর সিং রাজেওয়াল একটি ভার্চুয়াল বৈঠকে দেশের কৃষকদের নিজের বাড়িতে, গাড়িতে, দোকানে কালো পাতালা লাগানোর জন্য আবেদন জানিয়েছেন।

গত বছরের ২৬ নভেম্বর থেকে ২৬ মে পর্যন্ত ছয় মাস পূরণের দিনে Black Day হিসেবে পালনের ডাক দিয়ে রাজেওয়াল এদিন বলেন, “আমরা দেশের মানুষকে তাঁদের বাড়ি, দোকান, ট্রাক ও গাড়িতে কালো পতাকা লাগানোর জন্য আবেদন করছি এবং এসবের পাশাপাশি প্রতিবাদের আরও একটি অঙ্গ হিসাবে আমরা প্রধানমন্ত্রীর নরেন্দ্র মোদীর (Narendra Modi) কুশপুতুলও পোড়াব”।

উল্লেখ্য, করোনার প্রথম ধাক্কা সামলেও দিল্লি সীমানায় তিন নয়া কৃষি আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ আন্দোলন (Farmer Protest ) চালিয়ে যাচ্ছেন উত্তরপ্রদেশ, পাঞ্জাব, উত্তরাখণ্ড ও হরিয়ানার কৃষকরা। যদিও আন্দোলনের ছয় মাস পার হতে চলার পরেও মোদী সরকারকে আইন প্রত্যাহারের প্রশ্নে তেমন নমনীয় মনে হয়নি আন্দোলনরত কৃষকদের । তাই করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে দেশজুড়ে যখন সংকটজনক পরিস্থিতি (Corona Situation), তখনও আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে কৃষকরা (Farmers)।

আন্দোলন থামানো তো দূরের কথা, ভারতীয় কিষাণ ইউনিয়নের তরফে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের সূচনা পর থেকেই নতুন উদ্যমে শুরু করা হয়েছিল আন্দোলন। যাঁরা কিছু দিনের জন্য গ্রামে ফিরে গিয়েছিলেন তাঁরাও আবার সীমানায় এসে জড়ো হয়েছিলেন। সিঙ্ঘু সীমানায় ৪ কিলোমিটারের একটি নতুন বসতিই তৈরি হয়েছিল সেই সময়। শয়ে শয়ে তাঁবু এবং অস্থায়ী থাকার জায়গা ছিল তার মধ্যে। অন্যদিকে, একাধিক মহল দাবি করা হচ্ছিল, কৃষক আন্দোলনের ওই প্রবল ভিড়ের মধ্যে সামাজিক দূরত্ব বা মুখোশের বিধিনিষেধের (Corona Guideline) কেউ পরোয়া করা হচ্ছিল না। এমনি বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছিলেন, কুম্ভমেলা বা জনসভার মতোই এখান থেকেও কোভিড সংক্রমণ ব্যাপক ভাবে ছড়াচ্ছে।

অন্যদিকে, এই অবস্থায় হরিয়ানার বিজেপি মুখ্যমন্ত্রী মনোহরলাল খট্টরের দাবি করলেন, কৃষকদের বিক্ষোভের ফলে স্থানীয় একাধিক গ্রাম মারণ ভাইরাস (Corona) সংক্রমণের ভরকেন্দ্র হয়ে উঠেছে। এই দাবি করার পাশাপাশি কৃষক নেতাদের কাছে তিনি আর্জি জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আসা পর্যন্ত তাঁরা যেন আন্দোলন স্থগিত রাখেন। এই উদ্বেগজনক পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ফের তাঁরা আন্দোলনে (Protest) বসতে পারেন বলে জানান তিনি।

লাল-নীল-গেরুয়া...! 'রঙ' ছাড়া সংবাদ খুঁজে পাওয়া কঠিন। কোন খবরটা 'খাচ্ছে'? সেটাই কি শেষ কথা? নাকি আসল সত্যিটার নাম 'সংবাদ'! 'ব্রেকিং' আর প্রাইম টাইমের পিছনে দৌড়তে গিয়ে দেওয়ালে পিঠ ঠেকেছে সত্যিকারের সাংবাদিকতার। অর্থ আর চোখ রাঙানিতে হাত বাঁধা সাংবাদিকদের। কিন্তু, গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভে 'রঙ' লাগানোয় বিশ্বাসী নই আমরা। আর মৃত্যুশয্যা থেকে ফিরিয়ে আনতে পারেন আপনারাই। সোশ্যালের ওয়াল জুড়ে বিনামূল্যে পাওয়া খবরে 'ফেক' তকমা জুড়ে যাচ্ছে না তো? আসলে পৃথিবীতে কোনও কিছুই 'ফ্রি' নয়। তাই, আপনার দেওয়া একটি টাকাও অক্সিজেন জোগাতে পারে। স্বতন্ত্র সাংবাদিকতার স্বার্থে আপনার স্বল্প অনুদানও মূল্যবান। পাশে থাকুন।.