প্রসেনজিৎ চৌধুরী: প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের চোখে ভুটান ছিল ‘বাটন’। তাতে বিশ্বে শোরগোল পড়েছিল। নীরব ছিল ভুটান। করোনা মোকাবিলায় ভুটানের নেতৃত্বে পরবর্তী কর্মসূচির কাজ চালাতে হবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সহ ১৯৪টি দেশকে।

করোনায় গত ১ বছরে মৃত ১ জন। করোনা মোকাবিলায় ভুটানের গণস্বাস্থ্য কর্মসূচি ও লড়াইকে সেলাম ঠুকল দুনিয়া। দেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রী দেচেন ওয়াংমো কে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) অভিনব মর্যাদা দিয়েছে। ওয়ার্ল্ড হেল্থ অ্যাসেম্বলি (WHA) তে সভাপতির মর্যাদা পেলেন তিনি।

হু (WHO) পরিচালিত হয় ওয়ার্ল্ড হেল্থ অ্যাসেম্বলি (WHA)তে গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুসারে। সুইজারল্যান্ডের জেনেভা থেকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা দুনিয়া জুড়ে তাদের কার্যক্রম কেন্দ্রীয়ভাবে নিয়ন্ত্রণ করে।

থিম্পু থেকে ভুটানের জাতীয় সংবাদ সংখ্যা বিবিএস জানাচ্ছে, ২৪ মে থেকে ১ জুন পর্যন্ত জেনেভায় ওয়ার্ল্ড হেল্থ অ্যাসেম্বলির অধিবেশন চলবে ভুটানের নেতৃত্বে। অধিবেশনে যোগ দিতে দেচেন ওয়াংমোর সঙ্গে চার সদস্যের প্রতিনিধি দল জেনেভা গিয়েছেন। এই ঘটনা দেশের ইতিহাসে প্রথম।

কে এই দেচেন ওয়াংমো? কী তার ভূমিকা? এর জন্য ভুটানের করোনা সংক্রমণ রেখাচিত্রে নজর রাখা দরকার। শিক্ষা হারে বিশ্ব সূচকে তলানির দিকে থাকলেও গণস্বাস্থ্য কর্মসূচির প্রয়োগ ঘটিয়ে ভুটান করোনা মোকাবিলায় মারাত্মক ভূমিকা নিয়েছে। চরম নিয়মানুবর্তিতা ও গণস্বাস্থ্যের সফল প্রয়োগ করে জীবা়নু প্রতিরোধে বিশ্বে নজির ভুটানের।

চিন ও ভারতের মধ্যবর্তী দেশ ভুটানের সঙ্গে চারটি ভারতীয় অঙ্গরাজ্য (সিকিম, অরুণাচল প্রদেশ, অসম, পশ্চিমবঙ্গ) সংযুক্ত। চিন সীমান্ত নয় বরং ভারতের দিকেই ভুটানের যাতায়াত। ফলে ভারতে করোনা সংক্রমণ গত বছর থেকে ছড়াতে শুরু করলেই ভুটান সরকার দেশজুড়ে গণস্বাস্থ্য অভিযান চালায়। খোলা সীমান্ত হওয়ার কারণে অসম ও পশ্চিমবঙ্গের সীমান্ত সংলগ্ন ভুটানি জেলাগুলিতে করোনার প্রকোপ বাড়বে এমনই আশঙ্কা ছিল।

দক্ষিণ ভুটানের এই জেলাগুলির প্রত্যন্ত এলাকা থেকে সর্ব উত্তরের তুষার ঢাকা দুর্গম এলাকায় ভুটান সরকার নিযুক্ত করেছে তাদের বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনি ডি সুং। এরা কমলা যোদ্ধা বা অরেঞ্জ ফাইটার নামেও পরিচিত। এই বাহিনি দিয়েই করোনা মুক্ত দেশ রাখতে গত এক বছরের বেশি সময় জীবাণু নাশকের বহুল ব্যবহার করে ভুটান সরকার।

এমনও দেখা গিয়েছে খোদ ভুটানের প্রধানমন্ত্রী ডা লোটে শেরিং রাজধানী থিন্পুতে জীবাণু বিলি করছেন। বিশ্ব চমকে গেছিল। সেই সঙ্গে উঠে আসে ভুটানের স্বাস্থ্যমন্ত্রী দেচেন ওয়াংমোর নাম। বছর ৪৫ এর ওয়াংমো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের জনস্বাস্থ্য বিজ্ঞানের উচ্চতর বিদ্যা নিয়ে ভুটানে ফিরে আসেন। পরে ডিএনটি দলে যোগ দেন। গত সধারণ নির্বাচনে ডিএনটি সরকার গড়ে। ওয়াংমো হন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। ডিএনটি দল মধ্য বামপন্থী নীতি নিয়ে সরকার পরিচালনা করছে।

এর পরেই ওয়াংমো তাঁর অর্জিত জনস্বাস্থ্য বিজ্ঞানের শিক্ষা প্রয়োগ করেন ভুটানে।এরই মাঝে এসে যায় করোনা সংক্রমণ। চিনের প্রতিবেশী হওয়ায় ভুটানের রাজা জিগমে খেসর নামগিয়াল ওয়াংচুক সর্বশেষ সিদ্ধান্ত নেন যে কোনওভাবেই করোনাকে রুখতে হবে। তাঁর নির্দেশে ও প্রধানমন্ত্রী ডা লোটে শেরিংয়ের সহযোগিতায় ওয়াংমো যে পরিকল্পনা করেন তার সুফল পাচ্ছে ভুটান।

ভারতে চলছে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ। পশ্চিমবঙ্গ তথৈবচ। আর পশ্চিমবঙ্গের লাগোয়া ভুটানে সংক্রমণ হলেও গণটিকাকরণ ও গণস্বাস্থ্যের বহুল প্রয়োগে আপাত নিশ্চিন্ত। এই দেশ করছে বিশ্ব স্বাস্থ্য আলোচনা পরিষদের সভাপতিত্ব। বিশেষজ্ঞদের মতামত, যোগ্য দেশ যোগ্য নেতৃত্বে এসেছে।

লাল-নীল-গেরুয়া...! 'রঙ' ছাড়া সংবাদ খুঁজে পাওয়া কঠিন। কোন খবরটা 'খাচ্ছে'? সেটাই কি শেষ কথা? নাকি আসল সত্যিটার নাম 'সংবাদ'! 'ব্রেকিং' আর প্রাইম টাইমের পিছনে দৌড়তে গিয়ে দেওয়ালে পিঠ ঠেকেছে সত্যিকারের সাংবাদিকতার। অর্থ আর চোখ রাঙানিতে হাত বাঁধা সাংবাদিকদের। কিন্তু, গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভে 'রঙ' লাগানোয় বিশ্বাসী নই আমরা। আর মৃত্যুশয্যা থেকে ফিরিয়ে আনতে পারেন আপনারাই। সোশ্যালের ওয়াল জুড়ে বিনামূল্যে পাওয়া খবরে 'ফেক' তকমা জুড়ে যাচ্ছে না তো? আসলে পৃথিবীতে কোনও কিছুই 'ফ্রি' নয়। তাই, আপনার দেওয়া একটি টাকাও অক্সিজেন জোগাতে পারে। স্বতন্ত্র সাংবাদিকতার স্বার্থে আপনার স্বল্প অনুদানও মূল্যবান। পাশে থাকুন।.