ছুটি শেষ
করোনা নেগেটিভ হওয়ার পর বিসিসিআইয়ের অনুমতি নিয়ে দিল্লি থেকে ফিরে পরিবারের সঙ্গে কয়েকদিন কাটালেন ঋদ্ধিমান সাহা। ছেলে ছোটো। তাই পরিবার নিয়ে মুম্বই যেতে পারছেন না। জৈব সুরক্ষা বলয়ের কঠোর বিধিনিষেধ মেনে সেখানে হোটেলে নিভৃতবাসে থাকতে হবে বলে। ইংল্যান্ডে স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে যাওয়ার অনুমতি পরে যদিও মেলে ঋদ্ধির ক্ষেত্রে সেটা একই কারণে সম্ভব হবে না। ছুটি শেষের দিনেই ঋদ্ধি ঘরোয়াভাবেই উদযাপন করলেন কন্যা আনভির জন্মদিন। সেই ছবি টুইটে পোস্ট করে তিনি টুইটে লিখেছেন, যখনই একটু খারাপ সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি বলে মনে হয় তখনই মেয়ের কথা মনে করি। মেয়ের হাসিই আমার জীবনকে আলোকময় করে তোলে। উল্লেখ্য, ঋদ্ধিমান যখন করোনা আক্রান্ত হয়ে দিল্লিতে ছিলেন তখন আনভি একটি সুন্দর ছবি এঁকে বাবাকে পাঠিয়েছিল। সুপারম্যানের হাতে পরাস্ত করোনা। সঙ্গে ক্যাপশনে লেখা 'গেট ওয়েল সুন বাবা'। ঋদ্ধি এদিনও বললেন, ওই সময় ওই ছবিটা পেয়ে ভালোই লেগেছিল। দারুণ এঁকেছিলও ছবিটা।
ছবি- টুইটার
মহানুভব ঋদ্ধি
অ্যাডিলেডে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে শেষ টেস্ট খেলেছেন। তারপর থেকেই দারুণ ধারাবাহিকতা দেখিয়ে টেস্ট দলেও নিয়মিত হয়ে উঠেছেন ঋষভ পন্থ। পন্থের কিপিং আগের চেয়েও উন্নত হলেও কিপিংয়ের নিরিখে ঋদ্ধি অনেক এগিয়ে, এটা সকলেই মানেন। তবে ব্যাট হাতেও পন্থ ধারাবাহিকতা দেখাচ্ছেন। আইসিসি বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালেও তিনিই খেলবেন। পন্থকে খেলানোর পক্ষেই সওয়াল করায় ঋদ্ধিমানকে প্রশংসায় ভরিয়ে দিয়েছে ক্রিকেট মহল। পাকিস্তানের প্রাক্তন অধিনায়ক সলমন বাটও ঋদ্ধির মানসিকতার প্রশংসা করেছেন। তিনি বলেছেন, অসাধারণ পেশাদারিত্বের পরিচয় দিয়েছেন ঋদ্ধিমান, হ্যাটস অফ! আমরা কলকাতা নাইট রাইডার্সে এক সময় খেলেছি, ওঁকে জানি। মাটির মানুষ, অসাধারণ কথা বলেছেন। তাঁর কথাতেই পরিষ্কার ঋদ্ধি কতটা মহানুভব। ভারতীয় দলের আরেকটা পজিটিভ দিক যেটা এর থেকে বেরিয়ে আসছে তা হলো, দলে জায়গা ধরে রাখার নিরাপত্তাহীনতায় কেউ ভুগছেন না। এটাই সাফল্যের একটা বড় কারণ।
ছবি- বিসিসিআই/আইপিএল
টেস্ট নিয়ে
আইসিসি বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনাল খেলতে না পারার প্রসঙ্গে ঋদ্ধি ওয়ানইন্ডিয়াকে বললেন, কেউ চায় না দেশের হয়ে কোনও ম্যাচ মিস করতে। সকলেই খেলতে চায়। একইসঙ্গে যেটা গুরুত্বপূর্ণ তা হলো দলের কম্বিনেশন। এখন দল ভালো খেলছে। যে কম্বিনেশনে দল ভালো করছে সেটাই তো ধরে রাখা উচিত। সেটাই দলের পক্ষে ভালো। তবে নিজেকে সব সময় প্রস্তুত রাখছেন ঋদ্ধি। যেমনটা করতেন যখন মহেন্দ্র সিং ধোনি ভারতীয় দলে নিয়মিত ছিলেন। তেমনই ঋদ্ধিও সুযোগের অপেক্ষায়, ভালো কিছু করতে বদ্ধপরিকর। ইংল্যান্ডে ছটি টেস্ট রয়েছে। ভারতীয় দল নিজেদের মধ্যে ভাগ হয়ে প্রস্তুতি ম্যাচও খেলবে। তাতে নিশ্চিতভাবেই নিজেকে প্রমাণের সুযোগ পাবেন ঋদ্ধি। কে এস ভরতকে স্ট্যান্ডবাই হিসেবে রাখা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে ঋদ্ধি বললেন, ভরত ইংল্যান্ড সিরিজেও টেস্ট দলের সঙ্গে ছিলেন। কারও চোট লাগতেই পারে। করোনা পরিস্থিতিতে কাউকে এ দেশ থেকে নিয়ে গেলে নিভৃতবাসে কাটাতে হবে। সেই সব কিছু মাথায় রেখেই তিনজন উইকেটকিপার দলের সঙ্গে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
আইপিএলে প্রাপ্তি
এবারের আইপিএলে সানরাইজার্স হায়দরাবাদের হয়ে কলকাতা নাইট রাইডার্সের বিরুদ্ধে ৭ রান করেন ও একটি ক্যাচ ধরেন। রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোরের বিরুদ্ধে ১ রান করার পাশাপাশি ২টি ক্যাচ ধরেন। যদিও এরপর আর খেলার সুযোগ পাননি। তাই এবারের আইপিএলে প্রাপ্তির কথা জিজ্ঞাসা করতে ঋদ্ধির সরস জবাব, করোনা! তারপরই বললেন, প্রত্যাশা অনুযায়ী খেলতে পারিনি এবার। দলগতভাবেও আমরা ভালো কিছু করতে পারিনি। ইংল্যান্ডে সুযোগ পেলে ভালো কিছু করার চেষ্টা করব নিশ্চিতভাবেই। ভারতের টেস্ট দল নির্বাচনের সময় বলা হয়েছিল, ইংল্যান্ড সফরে যেতে ফিটনেস টেস্টে উত্তীর্ণ হতে হবে। এ ব্যাপারে ঋদ্ধি বলেন, হাল্কা জ্বর আর চার-পাঁচদিনের জন্য গন্ধ চলে যাওয়া ছাড়া আমার আর কোনও উপসর্গ ছিল না। ক্লান্তিও ছিল না। তবে অনুশীলন করতে পারিনি। জানি না কীভাবে ফিটনেস টেস্ট দিতে হবে। হোটেলে তো নিভৃতবাসে থাকতে হবে। হয়তো ঘরে বা অন্য কোনওভাবে ফিটনেস টেস্টের ব্যবস্থা হবে। সবমিলিয়ে ফিটনেস টেস্টে উত্তীর্ণ হওয়া নিয়ে কোনও সংশয় নেই ঋদ্ধির মনে।
ছবি- বিসিসিআই/আইপিএল
আইপিএলে করোনা
জৈব সুরক্ষা বলয়েও কীভাবে করোনা আক্রান্ত হলেন তা এখনও বুঝতে পারেননি ঋদ্ধিমান সাহা। তিনি এদিন বললেন, আমার রিপোর্ট যেদিন পজিটিভ এলো তার দিন দুই আগে আমাদের চেন্নাই সুপার কিংসের সঙ্গে খেলা ছিল। তারপর জানতে পারি ওই দলের কয়েকজন পজিটিভ। তারপর আমারও পজিটিভ এলো রিপোর্ট। হোটেলে জৈব সুরক্ষা বলয়ে গতবারের চেয়ে কোনও ফারাক দেখেননি ঋদ্ধি। চেন্নাই সুপার কিংস বোলিং কোচ লক্ষ্মীপতি বালাজি বলেছিলেন, অনুশীলনের জায়গা থেকে সংক্রমণ ছড়ালেও ছড়াতে পারে। বালাজির সঙ্গে সহমত পোষণই করছেন ঋদ্ধি। তাঁর কথায়, দুবাইয়ে বেশি ক্রিকেট হয় না। ওখানে যখন আমরা অনুশীলন করতাম কেউ দেখতে আসতো না। নিরিবিলিতেই অনুশীলন সারতে পারতাম। কিন্তু দিল্লিতে অনেকেই প্র্যাকটিস চলাকালীন উঁকিঝুঁকি মারতেন। কেউ আমাদের কাছ অবধি না এলেও পাঁচিল টপকে ঢুকে পড়ার চেষ্টা করেছেন, এমনটাও হয়েছে। ফলে সেখান থেকেও সংক্রমণ ছড়াতে পারে।
ছবি- বিসিসিআই/আইপিএল
বিরাট বনাম কেন
আইসিসি বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনালে বিরাট কোহলির ভারত খেলবে কেন উইলিয়ামসনের নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে। আইপিএলে কেন উইলিয়ামসনকে অধিনায়ক হিসেবে পেয়েছেন ঋদ্ধিমান সাহা। বিরাট কোহলির সঙ্গে নিউজিল্যান্ড অধিনায়কের তফাত কী এই প্রশ্নের উত্তরে ঋদ্ধি বলেন, টেস্ট আর টি ২০ দুটো আলাদা ফরম্যাট। তবে বিরাট ও কেনের অধিনায়কত্ব নিয়ে আমার অভিজ্ঞতার কথা বলতে গেলে বলব, কেন শান্ত মাথায় সব কিছু করেন। মাথা গরম করেন না। বিরাট কোহলি কিন্তু মাঠে সব সময়ই এক্সাইটেড থাকেন। ক্যাচ ধরলে বা ভালো রান আউট হলে বিরাটের সেই উত্তেজনার বহিঃপ্রকাশ আমরা দেখতে পাই। এটা সতীর্থদের মাঠে উজ্জীবিত রাখে।
ছবি- বিসিসিআই/আইপিএল