সুমন ভট্টাচার্যঃ দুটি আলাদা রাষ্ট্র| ইজরায়েল এবং প্যালেস্তাইন| কিন্তু তাদের রাজধানী হবে এক| জেরুজালেম| সেই এক রাজধানীতে ইহুদি এবং মুসলিমদের নিজেদের ধর্মস্থানে যাওয়ার এবং ধর্মাচরণের অধিকার সুরক্ষিত থাকবে|
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন আবার ওয়াশিংটনের তরফে এই প্রস্তাবকে সামনে এনেছেন| বাইডেন যখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানীতে দাঁড়িয়ে এই প্রস্তাব দিচ্ছেন,তার কয়েকঘন্টা আগেই ইজরায়েল এবং প্যালেস্তাইনের মধ্যে অস্ত্রবিরতি শুরু হয়েছে| দীর্ঘ ১১ দিনের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর গাজায় শান্তি ফেরা টা যতটা কাঙ্খিত বিষয় ছিল, আমেরিকার তরফে আবার দুই দেশের তত্বে ফিরে যাওয়াটা ততটাই ভাল লক্ষণ| অনুমান করে নেওয়া যেতে পারে ইজরায়েলের নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট স্বাধীন এবং সার্বভৌম প্যালেস্তাইন রাষ্ট্র গঠনের প্রস্তাব সামনে এনেছেন|
জেরুজালেম কে রাজধানী করে দুটি আলাদা রাষ্ট্রের অস্তিত্ব অবশ্য পুরনো ভাবনা| ১৯৯২ সালে যখন মার্কিন দৌত্যের পরে প্যালেস্তাইনের নেতা, পিএলও প্রধান ইয়াসের আরাফত অসলো চুক্তিতে সই করেছিলেন,তখনই এইভাবে ইজরায়েলের পাশাপাশি প্যালেস্তাইন রাষ্ট্র গঠনের পরিকল্পনা করা হয়েছিল| কিন্তু তারপর নানা অজুহাত দেখিয়ে তেল আভিভ তা বাস্তবায়িত হতে দেয়নি| বরং তারপরে বেশ কয়েকবার ইজরায়েলের সঙ্গে প্যালেস্তাইনের ভয়াবহ সংঘর্ষ হয়েছে| তার প্রধান কারণ ছিল, ইজরায়েলের ক্রমাগত লক্ষ্য ছিল প্যালেস্তাইনের জমি হাতিয়ে নেওয়া| এবং গাজা কে কাঁটাতারের বেড়ায় ঘিরে ফিলিস্তিনীদের নিজভূমে পরবাসী করে দেওয়ার| যাতে আস্তে আস্তে গাজা ইজরায়েলের দখলে থাকা একটা অঞ্চল হয়ে যায় এবং ফিলিস্তিনীদের উপর ঔপনিবেশিক শাসন চালানো যায়|
কিন্তু এই ২০২১ এর সংঘর্ষ এমন কিছু নতুন পরিস্থিতির জন্ম দিয়েছে, যাতে সবাইকে নতুন করে ভাবতে হচ্ছে| আমেরিকার জন্য সমস্যা হচ্ছে, ডোনাল্ড ট্রাম্পের সময়ে অতি দক্ষিণপন্থী রাজনীতির কারণে ওয়াশিংটন পুরোপুরি ইজরায়েলের দিকে ঝুঁকে ছিল| এমনকি ট্রাম্পের জামাইয়ের প্রস্তাব মেনে জেরুজালেম কে শুধুমাত্র ইজরায়েলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার দিকে এগিয়ে গিয়েছিল আমেরিকা| বাইডেন আসার পরে পরিস্থিতি কিছুটা পরিবর্তন হলেও মার্কিন বিদেশনীতি ইজরায়েলের দিকেই ঝুঁকে ছিল| সেইজন্য এইবার সংঘর্ষ শুরু হওয়ার পরে গাজায় মৃত্যুমিছিল নিয়ে বাইডেনের তরফে কিছু না বলায় গোটা বিশ্বজুড়ে প্রবল সমালোচনার ঝড় বয়ে যায়| এমনকি খাস মার্কিন মুলুকেও বাইডেন কে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়তে হয়|
তারফলে সংঘর্ষের শেষের দিকে যেমন ওয়াশিংটনকে বিবৃতি দিয়ে গাজায় মৃত্যুমিছিলের সমালোচনা করতে হয়, তেমনই ইজরায়েল কে হামলা বন্ধ করতে বলতে হয়| এর ঠিক বিপরীত দিকে রাশিয়া এবং চিন প্যালেস্তাইনের পাশে দাঁড়িয়ে গিয়ে রাষ্ট্রপুঞ্জ পর্যন্ত বিষয়টিকে নিয়ে যাওয়ায় মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে নতুন সমীকরণের জন্ম নেয়| আমেরিকা বুঝতে পারে, প্যালেস্তাইনের প্রশ্নে সব মুসলিম দেশ এককাট্টা হয়ে গেলে এবং সেই জোটে রাশিয়া আর চিন যোগ দিলে ওয়াশিংটন বেকায়দায় পড়ে যাবে|
মধ্যপ্রাচ্য কিংবা আরব দুনিয়ার রাজনীতিতে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী মস্কোর কাছে এইভাবে কিস্তিমাত হওয়াটা নিশ্চয়ই ওয়াশিংটনের কাছে খুব সুখকর বিষয় ছিল না| বিশেষ করে করোনার এই পৃথিবীতে যেখানে এমনিতেই অনেক কিছু টালমাটাল অবস্থায় রয়েছে| তাই প্রেসিডেন্ট হিসেবে জো বাইডেন যেমন একদিকে ইজরায়েল কে বাধ্য করেছেন অস্ত্রবিরতির জন্য, তেমনই মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি ফেরাতে একটা পাকাপাকি সমাধানের পথে পা বাড়ালেন| সেই সমাধান ইজরায়েলের পাশাপাশি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে প্যালেস্তাইনকে তৈরি করা এবং সেই রাষ্ট্রকে জেরুজালেমের উপর অধিকার দেওয়া|
একের পর এক যুদ্ধের ফলে অর্থনৈতিক দিক থেকে চাপে থাকা ইজরায়েল ও হয়তো এবার শান্তি ফেরাতে স্থায়ী সমাধানসূত্র মেনে নেবে|
লাল-নীল-গেরুয়া...! 'রঙ' ছাড়া সংবাদ খুঁজে পাওয়া কঠিন। কোন খবরটা 'খাচ্ছে'? সেটাই কি শেষ কথা? নাকি আসল সত্যিটার নাম 'সংবাদ'!
'ব্রেকিং' আর প্রাইম টাইমের পিছনে দৌড়তে গিয়ে দেওয়ালে পিঠ ঠেকেছে সত্যিকারের সাংবাদিকতার। অর্থ আর চোখ রাঙানিতে হাত বাঁধা সাংবাদিকদের।
কিন্তু, গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভে 'রঙ' লাগানোয় বিশ্বাসী নই আমরা। আর মৃত্যুশয্যা থেকে ফিরিয়ে আনতে পারেন আপনারাই। সোশ্যালের ওয়াল জুড়ে বিনামূল্যে পাওয়া খবরে 'ফেক' তকমা জুড়ে যাচ্ছে না তো? আসলে পৃথিবীতে কোনও কিছুই 'ফ্রি' নয়। তাই, আপনার দেওয়া একটি টাকাও অক্সিজেন জোগাতে পারে। স্বতন্ত্র সাংবাদিকতার স্বার্থে আপনার স্বল্প অনুদানও মূল্যবান। পাশে থাকুন।.