ঘূর্ণিঝড়ের সতর্কতা অবজ্ঞা করেছিল, বার্জের নিখোঁজ ক্যাপ্টেনের বিরুদ্ধে এফআইআর

ঘূর্ণিঝড় তাউকতের ধাক্কায় সোমবার মুম্বই উপকূলে বার্জ ডুবির ঘটনায় ক্যাপ্টেনের বিরুদ্ধে '‌গাফিলতির জন্য মৃত্যু’‌ এই ধারায় অভিযোগ এনে এফআইআর দায়ের করল মুম্বই পুলিশ। এই বার্জে ২৬১ জন যাত্রী ছিল এবং তা ঘূর্ণিঝড়ের জেরে উপকূল থেকে ৩৫ নটিক্যাল মাইল দূরে ডুবে যায়।

উদ্ধার ৫১ জনের দেহ

এখনও পর্যন্ত ৫১ জনের দেহ উদ্ধার করা গিয়েছে এবং ঘটনার পাঁচদিন পরও এখনও ২৪ জন মানুষ নিখোঁজ। নৌ সেনা এই উদ্ধার কাজ চালাচ্ছে এবং তাঁদের মধ্যে অনেকেই মনে করছেন যে কেউ আর বেঁচে নেই। নিখোঁজদের মধ্যে ক্যাপ্টেনও রয়েছেন। বার্জের মুখ্য ইঞ্জিনিয়ার রহমান শেখ, যাঁকে উদ্ধার করা হয়, তিনি গোটা একদিন বার্জের ধ্বংসস্তুপে সমুদ্রের জলে ছিলেন, তিনি জানিয়েছেন যে ক্যাপ্টেন আবহাওয়ার সতর্কতাকে ভ্রুক্ষেপ না করে ঝড়ের পথ থেকে জাহাজকে দূরে সরিয়ে না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। আহত অবস্থায় মুখ্য ইঞ্জিনিয়ারকে মুম্বইয়ের অ্যাপোলো হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাঁর ভাই, যিনি নিজেও বার্জের প্রধান ইঞ্জনিয়ার আলম শেখ বলেন, ‘‌ক্যাপ্টেন জানায় যে হাওয়ার গতি ৪০ কিমি বেগে বইবার সম্ভাবনা নেই এবং এবং তা ১১-১২ এর মধ্যে থাকবে তার বেশি নয়, বার্জের দায়িত্বে ছিলেন ক্যাপ্টেন ও মাস্টার।'‌

বার্জে ফুটো ছিল

বার্জে ফুটো নিয়েও আলম শেখে এক সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছে। তিনি বলেন, ‘‌আমার বন্ধু আনন্দ আমায় এই ফুটোর বিষয়ে অবহত করে এবং আমি সঙ্গে সঙ্গে বার্জের মালিককে ডেকে তা জানাই যাতে জাহাজটি ফিরিয়ে নিয়ে আসা হয়। কিন্তু তিনি কোনও সাড়া দেননি। সকলেই এই ঘটনার জন্য দায়ি। ক্যাপ্টেন, জাহাজের মালিক এবং ওএনজিসি, সতর্কতা সত্ত্বেও তাঁরা তা উপেক্ষান করল কীভাবে?‌'‌ ওএনজিসির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ আফকনস ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড কর্তৃক চার্টার্ড করা তিনটি বার্জ ছিল। ওই এলাকায় যখন ১৪ মে ঝড়ের সতর্কতা জারি করা হয়েছিল এবং ক্যাপ্টেনদের তীরে ফিরে আসার পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল।

আরও ২টি বার্জ ফিরে আসে

বার্জ গ্যাল কনস্ট্র‌্যাক্টর ও সাপোর্ট-স্টেশন থ্রি-তে যথাক্রমে ১৩৭ ও ২০১ জন যাত্রী ছিল, উল্লেখ্য সতর্কতা পাওয়ার পর তারা বন্দরে ফিরে আসে। কিন্তু পি-৩০৫ ঝড়ের সতর্কতা সত্ত্বেও সমুদ্রে ভাসে এবং ওএনজিসি প্ল্যাটফর্ম থেকে মাত্র ২০০ মিটার দূরে গিয়ে ডুবে যায়। ডুবে যাওয়া বার্জটির, জীবিত সদস্যরা জানাচ্ছেন এই মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটত না যদি ক্যাপ্টেন ঘূর্ণিঝড়ের সতর্কতা গুরুত্ব দিতেন আর 'লাইফ র‌্যাফ্ট'গুলিতে যদি ফুঁটো না থাকত।

কীভাবে ঘটল এই ঘটনা

রহমান শেখের দাবি, অন্তত ১০০ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টা বেগে ধেয়ে আসা ঘূর্ণিঝড়ের মুখে পড়েছিল তাদের জাহাজটি। বাতাসের ধাক্কায় পাঁচটি নোঙ্গর ভেঙে গিয়েছিল। ঘূর্ণিঝড়ের সামনে তারা দাঁড়াতেই পারেনি। বাতাসের ধাক্কায় বার্জটি গিয়ে একটি তেলের রিগ-এ ধাক্কা মারে। সংঘর্ষে বার্জের গায়ে বড় গর্ত হয়ে যায়। তা দিয়ে জল ঢুকতে শুরু করে। জাহাজের সদস্যরা ঠিক করেছিলেন, বন্দরের দিকে তাঁরা লাইফ ব়্যাফ্টগুলি নামাবেন। কিন্তু, এই ক্ষেত্রেও সমস্যা ছিল। মাত্র দুটি লাইফ ব়্যাফ্ট ছাড়া বাকি ১৪টিই ছিল ফুটো। জাহাজটির অন্য প্রান্তে, স্টারবোর্ডের দিকে আরও ১৬টি লাইফ র‌্যাফ্ট থাকলেও, সেগুলি নিতে যাওয়ার মতো সাহস হয়নি কারোর। কারণ সেই সময় ওই দিকে তীব্র বেগে বাতাস বইছিল। বিশাল বিশাল ঢেউ এসে আছড়ে পড়ছে বার্জের গায়ে।

সোমবার ভোরে ডুবে যায় বার্জ

এরপর, যাদের গায়ে লাইফ জ্যাকেট ছিল, তারা দলবদ্ধভাবে জলে লাফ দিয়েছিল। ফ্লোটিং রিং ধরে তারা জলে ভাসছিল। তাদের সামনেই সোমবার ভোর ৫টা নাগাদ বার্জটি ডুবে যায়। রহমান শেখের হাঁটুতে চোট লেগেছে। তাঁর মতো আহতদের আহতদের মুম্বইয়ের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা চলছে।

More CYCLONE TAUKTAE News  

Read more about:
English summary
An FIR has been lodged against the captain of a sank barge on the Mumbai coast