বিজেপি ছাড়লেন করোনাজয়ী দীপেন্দু বিশ্বাস, ওয়ানইন্ডিয়াকে জানালেন কারণ ও পরিকল্পনা

তৃণমূল কংগ্রেসের প্রতি অভিমান নিয়েই ৮ মার্চ বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন। দুই মাস পেরোতেই তিনি বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের কাছে পাঠিয়ে দিলেন ইস্তফাপত্র। সিবিআই যেভাবে গতকাল রাজ্যের দুই ক্যাবিনেট মন্ত্রী-সহ চার হেভিওয়েটকে করোনা পরিস্থিতিতেও গ্রেফতার করেছে নারদ কাণ্ডে, সেটাই দীপেন্দুর পদত্যাগের বড় কারণ। ওয়ানইন্ডিয়া বাংলার সঙ্গে কথোপকথনে দীপেন্দু জানালেন তাঁর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা। আপাতত মাঠের ছেলে, বসিরহাটের মিঠু, পুরোদমে মাঠেই থাকতে চান।

ফুটবলার থেকে বিধায়ক

সিপিআইএমের বিধায়ক নারায়ণ মুখোপাধ্যায়ের প্রয়াণে ২০১৪ সালে বসিরহাট দক্ষিণ বিধানসভা উপনির্বাচনে প্রাক্তন জাতীয় ফুটবলার দীপেন্দু বিশ্বাসকে প্রার্থী করে তৃণমূল কংগ্রেস। মাত্র ১,৫৮৬ ভোটে বিজেপি প্রার্থী শমীক ভট্টাচার্যের কাছে হেরে যান দীপেন্দু। এরপরও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বসিরহাটে সংগঠনের দায়িত্ব রেখে দেন দীপেন্দুকে। দলনেত্রীর আস্থার মর্যাদা দিয়ে ২০১৬ বিধানসভা নির্বাচনে এই আসনে শমীক ভট্টাচার্যকেই ২৪ হাজার ৫৮ ভোটে হারান বসিরহাটের ঘরের ছেলে মিঠু। স্ট্রাইকার দীপেন্দুকে সামনে রেখে বসিরহাটে তৃণমূলের ঝড়ে বিজেপির ভোট শতাংশ ৩৭.৪৩ শতাংশ থেকে কমে আসে ২৯.৫৫-এ। ২০১৯ সালে লোকসভা নির্বাচনে বসিরহাট দক্ষিণের বিধায়ক দীপেন্দু বিশ্বাসের জন্য সাংসদ নুসরত জাহান এখান থেকে ভালো লিড পান। স্টেডিয়াম থেকে শুরু করে একের পর এক উন্নয়নমূলক কাজ করছিলেন দীপেন্দু। সল্টলেকে থাকলেও নিয়মিত যেতেন বসিরহাটে। তাল কাটে এবার বিধানসভা নির্বাচনের আগে। দীপেন্দু যখন ভোটে লড়ার জন্য তৈরি হচ্ছিলেন, আচমকাই তাঁকে প্রার্থী না করে ডা. সপ্তর্ষি বন্দ্যোপাধ্যায়কে প্রার্থী করে তৃণমূল। তিনি বিধায়ক হিসেবে নির্বাচিতও হন।

অভিমানে বিজেপিতে

দলের প্রতি খানিকটা অভিমান নিয়েই বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন। গত ৮ মার্চ সকালে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতা মুকুল রায়ের বাসভবনে গিয়ে দেখা করার পর বিকেলের দিকে হেস্টিংসে বিজেপি পার্টি অফিসে পৌঁছে বিজেপির পতাকা হাতে নিয়েছিলেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গোলকিপার হলে আমিও স্ট্রাইকার, এ কথা বললেও তৃণমূল বা তৃণমূল সুপ্রিমোর প্রতি কোনও আপত্তিমূলক মন্তব্য করতে দেখা যায়নি ময়দানের ভদ্র ছেলে বলে সুনাম থাকা দীপেন্দুকে। বিজেপি তাঁকে প্রার্থী করেনি। তবে সাংগঠনিক আলঙ্কারিক পদ দেয়। তবে বিজেপিতে যোগদান করলেও প্রচারে দেখা যায়নি দীপেন্দুকে। এমনকী বসিরহাটে অমিত শাহের সভায় কয়েক মিনিটের জন্য মঞ্চে উঠলেও তাঁকে কার্যত দেখাই যায়নি সেদিন। অবশেষে বিজেপি ত্যাগ করলেন দীপেন্দু।

প্রতিহিংসামূলক আচরণ দেখেই সিদ্ধান্ত

২২ এপ্রিল করোনা আক্রান্ত হন দীপেন্দু। বাড়িতেই আইসোলেশনে থেকে সুস্থ হয়েছেন। তারই মধ্যে ফেসবুকে শেয়ার করছিলেন নিজের ফুটবলার জীবনের নানা স্মরণীয় মুহূর্তের ছবি। ২ মে নির্বাচনের ফল প্রকাশের পর ফেসবুক মারফতই বসিরহাট দক্ষিণের নতুন বিধায়ক ডা. সপ্তর্ষি বন্দ্যোপাধ্যায়কে জয়ের জন্য শুভেচ্ছাও জানান। বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের কাছে পদত্যাগপত্র পাঠানোর পর ওয়ানইন্ডিয়া বাংলাকে করোনাজয়ী দীপেন্দু বলেন, গতকাল এই করোনা আবহেও সিবিআইকে সামনে রেখে যা করা হলো এমন রাজনীতি আমি কোনওদিন করিনি, করবও না। গতকাল যা হয়েছে তা একেবারেই সমর্থন করা যায় না। উল্লেখ্য, গতকালই নারদ কাণ্ডে দুই ক্যাবিনেট মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় ও ফিরহাদ হাকিম, বিধায়ক তথা প্রাক্তন মন্ত্রী মদন মিত্র ও প্রাক্তন মন্ত্রী তথা মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়কে গ্রেফতার করে সিবিআই। বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্বের অঙ্গুলিহেলনেই এমনটা হচ্ছে বলে দাবি তৃণমূলের। প্রতিহিংসামূলক আচরণ দেখেই দীপেন্দু বিশ্বাস যে বিজেপি ছাড়লেন সেটাও পরিষ্কার।

আপাতত মাঠেই

করোনা জয় করলেও চিকিৎসকদের পরামর্শ মেনে বাড়িতেই রয়েছেন দীপেন্দু। তিনি বললেন, আমি মহমেডান স্পোর্টিংয়ের ফুটবল সচিব। সামনে কলকাতা লিগ হলে সেই লিগ নিয়ে তো পরিকল্পনা করতেই হচ্ছে। তাছাড়া মহমেডানকে আই লিগ চ্যাম্পিয়ন করানোই আমার লক্ষ্য। রাজনীতি ছেড়ে আপাতত মহমেডানেই আরও বেশি সময় দিতে চাই।

More BJP News  

Read more about:
English summary
Former India Footballer Dipendu Biswas Quits BJP Sending Resignation Letter To State President Dilip Ghosh. He Has Joined BJP On March 8.