টানটান উত্তেজনা। সকাল গড়িয়ে মধ্যরাত। প্রেসিডেন্সি জেলেই ঠাই হল ফিরহাদ হাকিম, সুব্রত মুখোপাধ্যায়, মদন মিত্র সহ শোভন চট্টোপাধ্যায়ের। নিজাম প্যালেসের বাইরের ভিড় খালি হতেই কড়া নিরপত্তার মোড়কে বার করা হয় চার অভিযুক্তকে। এরপর কেন্দ্রিয় বাহিনীর ঘেরাটোপে সোজা নিয়ে যাওয়া হয় প্রেসিডেন্সি জেলে।
তার আগে যদিও একাধিকবার চার অভিযুক্তের ডাক্তারি পরীক্ষা করানো হয়। এদিন নিজাম প্যালেস থেকে বের হওয়ার সময়ে কেঁদে ফেলেন ফিরহাদ।
তিনি বলেণ, আইনের প্রতি ভরসা আছে। ঠিক বিচার পাবো। মদণ মিত্র বলেণ, মুকুল শুভেন্দু ভালো। আমরা খারাপ। কার্যত আক্ষেপ তাঁদের মুখে। তবে কোনও মন্তব্য করতে চাননি সুব্রত মুখোপধ্যায়।
অন্যদিকে মধ্যরাতেও জেলের বাইরে ভিড় তৃণমূল কর্মী-সমর্থকদের। চলছে স্লোগানিং।
সোমবার সকাল হতে না হতেই আচমকা কলকাতা তথা বাংলা জুড়ে টানটান উত্তেজনা। কারণ নারদ ঘুষ কাণ্ডে সিবিআইয়ের হাতে গ্রেফতার হয়েছেন রাজ্যের চার হেভিওয়েট নেতা।
এদের মধ্যে তিনজন তৃণমূল কংগ্রেসের ফিরহাদ হাকিম, সুব্রত মুখোপাধ্যায় ও মদন মিত্র এবং চতুর্থ জন তৃণমূল কংগ্রেস ছেড়ে বিজেপিতে যাওয়া এবং বিজেপিতে নিষ্ক্রিয় হয়ে থাকা শোভন চট্টোপাধ্যায়।
এই চারজনকে প্রথমে নিয়ে যাওয়া হয় নিজাম প্যালেসে সিবিআইয়ের দপ্তরে। তারপরেই খবর চাউর হতে নিজাম প্যালেসের বাইরে এই লকডাউনের মধ্যেই ভিড় জমিয়েছিলেন শ'য়ে শ'য়ে তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা। নিজাম প্যালেসে চলে আসেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি নিজে এর প্রতিবাদ জানান।
এই অবস্থার মধ্যে এই চার হেভিওয়েট নেতাকে আদালতে নিয়ে যাওয়া যায়নি। বাইরে বিক্ষোভ, তার মধ্যে চলছে কার্যত লকডাউন। এই অবস্থায় ব্যাঙ্কশাল আদালতে ভার্চুয়াল শুনানি হয়। এবং সেই শুনানি শেষে সন্ধ্যে নাগাদ জানা যায় ববি হাকিম, সুব্রত মুখোপাধ্যায়, মদন মিত্র এবং শোভন চট্টোপাধ্যায় নারদ মামলায় জামিন পেয়েছেন।
তবে চিত্রনাট্যে এখানেই ইতি ঘটেনি। অভিযুক্তদের নিজাম প্যালেসে বসিয়ে রেখেই হাইকোর্টে জামিনের বিরোধিতা করে সিবিআই। এবং সেখানে তারা স্পষ্ট জানায় যে হাইকোর্টের নির্দেশ মেনে নারদ মামলায় তারা তদন্তে নেমেছে। এবং তদন্তে নেমে কোথায় কোথায় বাধার মুখে তাদের পড়তে হয়েছে। এবং কোথা থেকে তারা চূড়ান্ত অসহযোগিতা পেয়েছেন।
এর পাশাপাশি আজ সারাদিন যে বিক্ষোভের ঘটনা নিজাম প্যালেসের বাইরে ঘটেছে, সেই বক্তব্য উচ্চ আদালতে তুলে ধরে সিবিআই। আদালতে সিবিআইয়ের তরফে জানানো হয়, কীভাবে বিক্ষোভ সংঘটিত হওয়ার ফলে অভিযুক্তদের আদালতে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি।
এবং যার ফলে ভার্চুয়াল শুনানি করতে হয়েছে। ফলে সিবিআই স্পষ্ট জানায় এই চারজন প্রভাবশালী নেতা ছাড়া পেলে তদন্তে প্রভাব ফেলতে পারেন। ফলে তাদের জামিন নামঞ্জুর করা হোক। সবশেষে সিবিআই আগামী বুধবার পর্যন্ত এই চার অভিযুক্তকে জেল হেফাজতে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এবং নিম্ন আদালতে জামিনের সিদ্ধান্ত স্থগিত রেখেছে। বুধবার উচ্চ আদালতে এই মামলার শুনানি হবে।