বিরাট সাক্ষাত
একটি সাক্ষাতকারে ভারত অধিনায়ক বিরাট কোহলি উল্লেখ করেছিলেন ভারতীয় ড্রেসিংরুমের এক মজাদার ঘটনার কথা। ব্রেকফাস্ট উইথ চ্যাম্পিয়ন্স অনুষ্ঠানে বিরাট বলেছিলেন, ভারতীয় দলে প্রথম যখন সুযোগ পাই তখন দুই দিন ধরে প্রতীক্ষায় ছিলাম কখন আমার আইডলের সঙ্গে ড্রেসিংরুমে দেখা করার জন্য। যুবরাজ সিং, মুনাফ প্যাটেল, হরভজন সিং ও ইরফান পাঠান আমাকে বলেন, দলে যখনই কোনও নতুন ক্রিকেটার সুযোগ পান ড্রেসিংরুমে প্রথম টিম মিটিংয়ে সচিন তেন্ডুলকরের পা ধরে আশীর্বাদ চাওয়াটাই দলের নিয়ম।
অবাক সচিন
এবার সচিন তেন্ডুলকরের কথোপকথনেও উঠে এলো মজার সেই ঘটনা। সচিন বলেন, আমি জানতামই না কী হতে চলেছে। বিরাট যখন আমার পা ধরল তখন তাই বলেছিলাম, তুমি এটা কী করছ? দলের যে সতীর্থরা এই পরামর্শ দিয়েছিলেন আমার কথা শুনে বিরাট উঠে তাঁদের দিকে তাকাতেই গোটা বিষয়টি স্পষ্ট হলো। সকলে তখন হাসতে শুরু করেন।
বিশ্বজয়ের সেরা মূহূর্ত
বিশ্বকাপ জয়ের পরও সচিন কিছুটা ভয় পেয়েছিলেন যখন ইউসুফ পাঠান ও বিরাট কোহলি তাঁকে কাঁধে তুলে নিয়ে ঘুরতে শুরু করেন। পরে আরও অনেক ক্রিকেটার এগিয়ে আসেন। ২০১১ বিশ্বকাপ জয়কে তাঁর কেরিয়ারের সেরা মুহূর্ত বেছে নিয়ে সচিন বলেন, আমি ভয় পাচ্ছিলাম এটা ভেবে যে শেষে বিরাট আর ইউসুফ আমাকে ফেলে না দেয়! ওদের বারবার বলছিলামও যে ভিকট্রি ল্যাপ চলাকালীন আমাকে ফেলে দিও না। ১৯৮৩ সালে যখন কপিল দেবের হাতে বিশ্বকাপ দেখেছিলাম সেটা ছিল এক অবিশ্বাস্য অভিজ্ঞতা। বন্ধুদের সঙ্গে সেদিন খেলা দেখতে দেখতে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিলাম দেশের হয়ে বিশ্বজয়ের। নিজেকে এভাবেই প্রস্তুত করেছিলাম যে বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্নপূরণ করতেই হবে। মুম্বইয়ের ওয়াংখেড়েতে সেটা হওয়ায় আনন্দ ছিল বাঁধনহারা। বিশ্বাসই করতে পারছিলাম না। আমার ক্রিকেটজীবনের এটাই ছিল সেরা দিন। এমন কিছু জিনিস থাকে যা গোটা দেশ সম্মিলিতভাবে উদযাপন করে, এটা ছিল তেমনই এক বিষয়। এই বিশ্বকাপ শুধু আমরাই জিতিনি, গোটা দেশ জিতেছিল।
উৎকণ্ঠা কাটাতে
করোনা পরিস্থিতিতে জৈব সুরক্ষা বলয়ে থাকতে থাকতে মানসিক ক্লান্তির বিষয়টা নিয়ে এখন জোর চর্চা চলছে। সচিন এ প্রসঙ্গে বলেন, খেলা চালিয়ে যেতে মানসিকভাবে ফিট থাকাটাও খুব জরুরি। আমি খেলতে মাঠে নামার অনেক আগেই আমার মনের মধ্যে ম্যাচ যেন শুরু হয়ে যেত। উৎকণ্ঠাও থাকত বেশ ভালো পরিমাণেই। অন্তত ১০-১২ বছর এভাবেই কাটিয়েছি। খেলার আগে অনেক রাতে ঘুম হয়নি। পরে বুঝতে পারি এটা আমার প্রস্তুতিরই অঙ্গ। যখন রাতে ঘুম হতো না তখন মনের শান্তির জন্য কিছু না কিছু করতে থাকতাম। শ্যাডো প্র্যাকটিসস টিভি দেখা, ভিডিও গেম খেলেই ম্যাচের আগের অনেক রাত কাটিয়েছেন মাস্টার ব্লাস্টার। সচিনের কথায়, চা তৈরি করা, নিজের জামাকাপড় ইস্ত্রি করাও আমাকে খেলার আগে মনকে শান্ত রাখতে অনেকটা সাহায্য করেছে। ম্যাচের আগের দিনই নিজের ব্যাগ গুছিয়ে রাখার পরামর্শ দিয়েছিলেন দাদা, সেটা আমার অভ্যাসে পরিণত হয়েছিল। দেশের হয়ে শেষ ম্যাচ খেলা অবধি তেমনটাই করেছি।
গ্রহণযোগ্যতাতেই সমাধান
সচিন বলেন, সকলের জীবনেই উত্থান-পতন থাকে। সেটা মেনে নিলেই সমাধানের রাস্তাও বেরিয়ে আসে। চোট পেলে যেমন ফিজিও বা চিকিৎসকরা পরীক্ষা করে দেখে সুস্থ হওয়ার নিদান দেন, তেমনটাই প্রযোজ্য মানসিক প্রস্তুতির ক্ষেত্রেও। সংশ্লিষ্ট বিষয়টি বুঝে মেনে নিলেই সমাধানের উপায় বের হয়। সচিন আরও একটি মজাদার ধটনার কথা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, শেখার কোনও শেষ নেই। চেন্নাইয়ে আমার ঘরে একজন ধোসা দিতে এসেছিলেন। টেবিলে তা নামিয়ে রেখে তিনি বলেন, তাঁর ধারণা আমার ব্যাট ঘোরাতে সমস্যা তৈরি করছে এলবো বা কনুইয়ের গার্ডটি। বাস্তবে সেটাই হচ্ছিল। ফলে ওই ব্যক্তির পরামর্শেই আমি সমস্যা কাটিয়ে উঠতে পেরেছিলাম।