যেভাবেই হোক এবার বাংলা দখল করতেই হবে! আর সেই লক্ষ্যেই ঝাঁপিয়ে পড়ে মোদী-শাহ এন্ড কোং। বাংলা নেতৃত্ব তো বটেই, প্রত্যেক বিধানসভায় একজন করে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে নিয়োগ করে বিজেপি। মাঠে ময়দানে নেমে কাজ করে সেই টিম।
কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জনপ্রিয়তার কাছে কার্যত মুখ থুবড়ে পড়েছে বিজেপির সমস্ত স্ট্র্যাটেজি। বাংলার নির্বাচনে কাজই করেনি মোদী ঝড়। যেখানে তৃণমূলকে ২১ এ সাফ বলে ভোট যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে বিজেপি সেখানে ১০০টি আসন পেতে কার্যত কালঘাম ছুটল বিজেপির।
কিন্তু কেন এমন অবস্থা? কেন বাংলায় এভাবে মুখ থুবড়ে পড়তে হল বিজেপিকে? কারন বিশ্লেষণে নামে আরএসএস। বিজেপির হারের কারণ বিশ্লেষণ করে তাঁরা। আর তাতে তিনটি কারণ উঠে আসে।
একটি হচ্ছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রবল জনপ্রিয়তা। আরএসএসের মুখপত্রে বলা হয়েছে যে, রাজনৈতিক নেতৃত্ব এবং জনপ্রিয়তায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে পাল্লা দেওয়ার মতো কোনও মুখ বিজেপি তুলে ধরতে পারেনি। বাইরে থেকে নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহেরা এসেও বাঙালির আবেগকে ধরতে পারেনি।
পাশাপাশি তৃণমূল থেকে বাছ-বিচার না করে লোক ভাঙিয়ে আনার নীতিকেও বিজেপির বিপর্যয়ের জন্য দায়ী করা হয়েছে সঙ্ঘের নির্বাচনোত্তর বিশ্লেষণে। করোনা নিয়ে কেন্দ্রের হালকা মনোভাব যথেষ্ট প্রভাব ফেলেছে বাঙালি ভোটারদের মনে।
তবে বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ সহ বিজেপি নেতাদের দাবি, বাংলায় ইতিবাচক ফল করেছে বিজেপি। যেখানে মাত্র তিনজন বিধায়ক ছিল, সেখানে ৭৭ জন বিধায়ক পেয়ে বিধানসভায় প্রধান বিরোধী দল হয়েছে। আর তাতেই সন্তুষ্টি বিজেপি নেতাদের। আর এই মনোভাবে ক্ষুব্ধ আরএসএস।
তাঁরা বলছে গত লোকসভা নির্বাচনের ফলাফলের নিরিখে বাংলার একাধিক জায়গাতে এগিয়ে ছিল বিজেপি। কিন্তু এবার সেখানেই জিততে পারেনি বিজেপি। অবশ্যই বিধানসভার এই ফলাফল বিপর্যয় বলেই দাবি আরএসএসের।
বাংলায় ভোটের ফল প্রকাশের পরে আরএসএসের মুখপত্রে দু'টি নিবন্ধে যা বলা হয়েছে, তার সঙ্গে এ রাজ্যে তথাগত রায়ের মতো আদি বিজেপি নেতাদের মতামত মিলে যাচ্ছে। সঙ্ঘের মুখপত্রে বলা হয়েছে, যে তৃণমূলের বিরুদ্ধে রাজ্যে বিজেপির মূল লড়াই, সেই দল থেকেই লাগাতার লোক ভাঙিয়ে নিয়ে আসার নীতির ফল একেবারেই ভাল হয়নি। প্রসঙ্গত, বিজেপির এ বারের জয়ী ৭৭ জন বিধায়কের মধ্যে তৃণমূল, বাম ও কংগ্রেস ছেড়ে আসা মুখ আছেন ৩২ জন।
সঙ্ঘের মতে, লোকসভা নির্বাচনের তুলনায় বিজেপির ভোট মাত্র ২% কমেছে। কিন্তু বাম ও কংগ্রেস থেকে ৫% ভোট তৃণমূলের দিকে চলে গিয়ে সব হিসেব উল্টে দিয়েছে। তার সঙ্গেই যোগ হয়েছে বিজেপির ভুল নীতি এবং অন্তত দু'দফার ভোটে কোভিড পরিস্থিতির প্রভাব। পরিসংখ্যান দিয়ে আরএসএস দেখিয়েছে, ২০১৯ সালে লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি যেখানে ১২১টি বিধানসভা কেন্দ্রে এগিয়ে ছিল, সেখান থেকে ২০২১-এ ৭৭ আসনে নেমে আসাকে খারাপ ফল বলেই ধরতে হবে।
তাদের বিশ্লেষণে, ৬৫টি এমন বিধানসভা আসন আছে, সেখানে ২০১৯ ও ২০২১- দু'বারই জয় ধরে রাখতে পেরেছে বিজেপি। মোট ১২টি আসন আছে, যেখানে দু'বছর আগে না পারলেও এ বার জয় পেয়েছে গেরুয়া শিবির। কিন্তু ৫৬টি আসনে দু'বছর আগে এগিয়ে থেকেও এ বার ভোটে তা হাতছাড়া হয়েছে। এই ক্ষেত্রে বিজেপির বিপর্যয় এবং তৃণমুলের জন্য 'সেফ প্যাসেজ' হয়েছে বলে আরএসএসের মত।
একই মুখপত্রে অন্য একটি নিবন্ধে বাংলার ভোট থেকে বিজেপির মনে রাখা ও ভুলে যাওয়ার বিষয় প্রসঙ্গে আলোচনা করতে গিয়ে আরএসএসের তরফে ভূয়সী প্রশংসা করা হয়েছে তৃণমূল নেত্রীর। মেনে নেওয়া হয়েছে, 'মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজনৈতিক উচ্চতার সঙ্গে বিজেপির রাজ্য স্তরের কোনও নেতা খাপ খাওয়াতে পারেননি'।
সঙ্ঘের বিশ্লেষণ অনুযায়ী, তৃণমূল খারাপ লোকেদের দল কিন্তু তাদের মাথায় ভাল নেত্রী আছেন- এই রকম সাধারণ ধারণা মানুষের মনে কাজ করেছে। এমনকি, বিজেপি সমর্থকদের মধ্যেও তৃণমূল নেত্রী সম্পর্কে ভাল ধারণা কাজ করেছে। মমতার রাজনৈতিক নেতৃত্ব ও জনপ্রিয়তার সঙ্গে পাল্লা দেওয়া যায়নি। এই সূত্রেই বলা হয়েছে, নরেন্দ্র মোদী ও অমিত শাহেরা জনপ্রিয় হলেও বাঙালিয়ানার সঙ্গে মেলেনি বলে তাঁদের জনপ্রিয়তা বাংলায় কাজে আসেনি!