'জিএসটি কাউন্সিলের বৈঠক না ডাকা যুক্তরাষ্ট্রীয় পরিকাঠামোয় আঘাত', নির্মলাকে চিঠি অমিতের

গত কয়েকদিন ধরে লাগাতার ভ্যাকসিন নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দিচ্ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এবার জিএসটি বৈঠক না হওয়া নিয়ে কেন্দ্রের উপর চাপ বাড়ালো অর্থ দফতর। সরাসরি কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণকে চিঠি লিখলেন অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র।

গত কয়েকদিন আগেই তৃতীয়বারের জন্যে রাজ্যের অর্থমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব নিয়েছেন তিনি। তবে এখও অসুস্থতার কারনে দফতরে যাননি তিনি। তবে দফতরের দায়িত্ব নিয়েই কার্যত নির্মলাকে পত্রবোমা অমিত মিত্রের।

জিএসটি কাউন্সিলের বৈঠক ডাকার অনুরোধ

দীর্ঘদিন হয়ে গিয়েছে এখনও পর্যন্ত জিএসটি বৈঠক ডাকা হয়নি। তথ্য বলছে গত বছরের অক্টোবর মাসে শেষ জিএসটি বৈঠক ডাকা হয়। কিন্তু এরপর থেকে আর একবার সেই বৈঠক ডাকা হয়নি। আর সে বিষয়টি তুলে ধরেই নির্মলাকে চিঠি লিখলেন অমিত মিত্র। ওই চিঠিতে তিনি কেন্দ্রকে দ্রুত জিএসটি কাউন্সিলের বৈঠক ডাকার অনুরোধ জানিয়েছেন। বৃহস্পতিবারই ওই চিঠি তিনি পাঠিয়েছেন নির্মলাকে। যদিও এখনও কেন্দ্রের তরফে চিঠির প্রাপ্তি স্বীকার করে কিছুই জানানো হয়নি।

একাধিকবার নিয়ম লঙ্ঘনের অভিযোগ অমিতের

নিয়মমাফিক তিন মাস অন্তর জিএসটি কাউন্সিলের একটি করে বৈঠক হওয়ার কথা। কিন্তু, গত বছর থেকে এখনও পর্যন্ত দু'বার এই নিয়ম লঙ্ঘিত হয়েছে। চিঠিতে উল্লেখ অমিত মিত্রের। একই সঙ্গে নির্মলা সীতারমনকে মনে করিয়ে অমিত মিত্র লিখেছেন, যেখানে তিন মাস অন্তর এই বৈঠক হওয়ার কথা বলা হচ্ছে সেখানে ২০২০-র ৫ অক্টোবর শেষ এই বৈঠক হয়েছিল। তার পর থেকেই এখনও পর্যন্ত জিএসটি কাউন্সিলের কোনও বৈঠক হয়নি। এই ঘটনাকে যুক্তরাষ্ট্রীয় পরিকাঠামোর পরিপন্থী বলেই চিঠিতে দাবি করেছেন অমিত। অবিলম্বে জিএসটি কাউন্সিলের ভার্চুয়াল বৈঠক ডাকার অনুরোধ করেছেন তিনি। চিঠিতে সংবিধানেরও উল্লেখ করেছন অমিত মিত্র।

কেন বৈঠক ডাকা উচিত? ব্যাখ্যা অমিত মিত্রের

কার্যত কড়া ভাষাতেই নির্মলা সীতারমণকে চিঠি অমিত মিত্রের। করোনা পরিস্থিতিতে গত বছর লম্বা লকডাউন করা হয়েছিল। সেই লকডাউনে কার্যত দেশের অর্থনীতিতে বড়ফসড় ধাক্কা লেগেছে। শুধু তাই নয়, রাজ্যের পরিস্থিতিও খারাপ। গত বছর লকডাউন চলাকালীন একাধিকবার মমতা বন্দ্যপাধধ্যায়ের মুখে শোনা যায়, রোজগার নেই, কার্যত কষ্ট করেই রাজ্য চালাতে হচ্ছে। এই অবস্থায় অমিত তাঁর চিঠিতে লিখেছেন, সংবিধানের ২৭৯এ এবং ২৭৯এ (৮) অনুচ্ছেদ মেনেই এই বৈঠক ডাকা উচিত। পাশাপাশি, ‘প্রসিডিওর অ্যান্ড কনডাক্ট অব রেগুলেশন অব দ্য গুডস অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্যাক্স কাউন্সিল'-এর ৬ নম্বর অনুচ্ছেদের কথা মেনে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীকে জিএসটি কাউন্সিল পরিচালনার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। অমিত লিখেছেন, ‘‘তিন মাস অন্তর জিএসটি কাউন্সিলের বৈঠক না ডাকা যুক্তরাষ্ট্রীয় পরিকাঠামোয় আঘাত করার সমান, এ ব্যাপারে আপনিও নিশ্চয়ই সহমত!'' বৈঠকে কোন কোন বিষয় নিয়ে আলোচনা হওয়া উচিত, তারও পরামর্শ দিয়েছেন বাংলার অর্থমন্ত্রী।

রাজ্যগুলির আর্থিক অবস্থা নিয়েও আলোচনার প্রস্তাব

রাজ্যগুলির আর্থিক অবস্থা। কার্যত খারাপ। একদিকে গতবছরের লম্বা লকডাউন এখন বিনামূল্যে ভ্যাকসিন দেওয়ার ক্ষেত্রে বিপুল খরচ। ইতিমধ্যে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ত্রাণ তহবিলে টাকা দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। এই অবস্থায় রাজ্যগুলির উদ্বেগজনক আর্থিক পরিস্থিতি নিয়ে অবশ্যই আলোচনা হওয়া উচিত। নির্মলাকে লেখা চিঠিতে এমনটাই জানিয়েছেন অমিত মিত্র। আরও লিখেছেন, কেন্দ্রীয় সরকার কোভিড সংক্রমণের সময় ১ লক্ষ ৫৬ হাজার ১৬৪ কোটি টাকার আর্থিক ঘাটতির অনুমান করেছিল। কিন্তু করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ে সেই ঘাটতির পরিমান আরও বেড়ে গিয়েছে। পরিস্থিতি ধীরে ধীরে উদ্বেগজনক হয়ে উঠছে। এমন অবস্থা চলতে থাকলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে বলে আশঙ্কা। এই অবস্থায় দ্রুত এই বৈঠক ডাকার আবেদন জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র।