সৌপ্তিক বন্দ্যোপাধ্যায় : ‘দাঁড়িয়ে আছ তুমি আমার গানের ও পারে’। হ্যাঁ, ওঁর গানের ওপারে দাঁড়িয়ে থাকেন রবীন্দ্রনাথ। না থাকলে কীভাবে একজন সম্পূর্ণ অবাঙালি এমন স্পষ্ট উচ্চারণে সুন্দর সুরে একের পর এক রবীন্দ্র সঙ্গীত সঠিক সুরে এত দরদ দিয়ে গাইতে পারে? তিনি শিশির রাউত। পাহাড়ি গ্রামে বছরের পর বছর আগলে রেখেছেন রবীন্দ্র স্মৃতি ও ইতিহাসকে।

রবীন্দ্র স্মৃতিতে ভরপুর বাড়ি একসময়ের বাসিন্দারা খোঁজ রাখতে আগ্রহী নয়। বিশেষ আগ্রহ দেখায় না বাড়ির বর্তমান মালিকরাও। শুধু রবি ঠাকুরকে ভালোবেসে পাহাড়ের এক অন্ধকার বাড়িতে বসে তাঁর স্মৃতি বছরের পর বছর আগলে যাচ্ছেন বছর ষাটেকের শিশির রাউত। পাওনা, শুধুই রবির আশীর্বাদ। মংপুর রবীন্দ্র ভবনে গেলেই শুনতে পাবেন শিশিরবাবুর অদ্ভুত সুরেলা গলায় একের পর এক রবীন্দ্র সঙ্গীত। চোখ বুজে গান গেয়ে চলেন। কাজ, মংপুর রবীন্দ্র ভবন দেখাশোনা করা। ভালোবাসা , রবি ঠাকুর।

কীভাবে এমন রবীন্দ্র সঙ্গীত জানলেন? শিশিরবাবু বললেন, ‘ওঁর সঙ্গে আমার নাড়ির টান। আমার দাদু ওনার পালকি বাহক ছিলেন। উনি যখন মৈত্রেয়ী দেবীর এই বাড়িতে আসতেন তখন এখানে রাস্তা বলতে কিছুই ছিল না। তাঁর বয়সও হয়েছিল। ওনাকে পালকি করে নিয়ে আসতে হত। রমবি থেকে বারো কিলোমিটার রাস্তা আসতে চার পাঁচ ঘণ্টা লেগে যেত। তাঁকে নিয়ে আসার জন্য সেটা নিয়ে আসতেন আমার দাদু ভিমলাল রাউত। তিনি কবি গুরুর খুব কাছের লোক হয়ে উঠেছিলেন। আমার বাবাও কবিগুরুর সান্নিধ্য পেয়েছেন। আমি বাবার থেকে ওনার কথা যত শুনেছি তত আগ্রহ তৈরি হয়েছে আমার। এই ভালোবাসা অন্যরকম। ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। তাই তো এখানে পড়ে আছি। ওনার গান গাইলেই মন ভালো হয়ে যায়। তাই…….’। ‘আমি আকাশে পাতিয়া কান, শুনেছি শুনেছি তোমারই গান। আমিতোমারে প্রাণ ওগো……নিজের মনেই আবার গান গাইতে শুরু করে দিলেন শিশিরবাবু।

বিশ্বকবি এই বাড়িতে চার বার এসেছেন। পঞ্চমবার আসার পথে শরীর দেয়নি। কালিম্পং থেকে কলকাতায় ফিরে যান। ওষুধ সহ আরও অনেক কিছু পাঠিয়ে দিয়েছিলেন আগে। সে সব আর নিয়ে যাওয়া হয়নি। তা থেকে যায় স্মৃতি হিসাবে ওই বাড়িতে।

রবীন্দ্র ভবনের সামনে সুন্দর বাগান আছে। বাগানে রবির আবক্ষ মূর্তি রয়েছে। পাশেই কেয়ারটেকারের ঘর। টিকিট দেখাবার মুহূর্ত থেকেই শুনতে পাবেন শিশিরবাবুর সেই সুরেলা গলা।

এই ভবনে রয়েছে বিশ্বকবির ব্যবহার করা খাট, বিছানা,চেয়ার, রিডিংরুম, শয়নঘর ইত্যাদি। কবিগুরু ছবি আঁকতে যেসব রং ব্যবহার করতেন, সেসব রঙের বাক্সও রয়েছে। আছে একটি দেয়াল আলমারি। আরও অনেক ছবি যার সঙ্গে জড়িয়ে রবি স্মৃতি। আর তাকে আগলে ধরেই রয়েছেন শিশির রাউত।

লাল-নীল-গেরুয়া...! 'রঙ' ছাড়া সংবাদ খুঁজে পাওয়া কঠিন। কোন খবরটা 'খাচ্ছে'? সেটাই কি শেষ কথা? নাকি আসল সত্যিটার নাম 'সংবাদ'! 'ব্রেকিং' আর প্রাইম টাইমের পিছনে দৌড়তে গিয়ে দেওয়ালে পিঠ ঠেকেছে সত্যিকারের সাংবাদিকতার। অর্থ আর চোখ রাঙানিতে হাত বাঁধা সাংবাদিকদের। কিন্তু, গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভে 'রঙ' লাগানোয় বিশ্বাসী নই আমরা। আর মৃত্যুশয্যা থেকে ফিরিয়ে আনতে পারেন আপনারাই। সোশ্যালের ওয়াল জুড়ে বিনামূল্যে পাওয়া খবরে 'ফেক' তকমা জুড়ে যাচ্ছে না তো? আসলে পৃথিবীতে কোনও কিছুই 'ফ্রি' নয়। তাই, আপনার দেওয়া একটি টাকাও অক্সিজেন জোগাতে পারে। স্বতন্ত্র সাংবাদিকতার স্বার্থে আপনার স্বল্প অনুদানও মূল্যবান। পাশে থাকুন।.