জায়গা নেই কবরস্থানে
এএমইউয়ের কবরস্থানটিতে কোথাও একটুও জায়গা নেই, তাই বাধ্য হয়ে কোভিড-১৯-এ মৃতদের পুরোন কবরস্থানে সমাধিস্থ করা হচ্ছে। এই মহামারিতে মানুষ তাঁর প্রিয়জনকে ভালোভাবে বিদায়ও জানাতে পারছেন না। এএমইউ ফ্যাকাল্টির বর্তমান ও অবসরপ্রাপ্ত কমপক্ষে ৩৫ জন সদস্য করোনা ভাইরাসে ও করোনা ভাইরাসের মতো উপসর্গ নিয়ে মারা গিয়েছেন বিগত কয়েক সপ্তাহে। স্থানীয় এক বাসিন্দা নদীম বলেন, ‘বেশ কিছু দশকে এ ধরনের দৃশ্য আমার চোখে পড়েনি। আমি এখানে নিয়মিতভাবে প্রার্থনা করতে আসি, অনেকেই তাঁদের প্রিয়জনদের জন্য প্রার্থনা করতে আসেন, কিন্তু এখন আমি সপ্তাহে একদিন আসি। মানুষ ভয় পেয়ে রয়েছেন। প্রতিদিন ৮-১০টি দেহ সমাধিস্থ হয় এখানে এবং একসঙ্গে নমাজ পড়া হয়।'
রহস্যজনক স্ট্রেইন ও বাড়তে থাকা মৃত্যু
এক বছরের চেয়ে গত কয়েক সপ্তাহে এএমইউ এত মৃত্যু দেখেনি। এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বহু শীর্ষ ফ্যাকাল্টি সদস্যের মৃত্যু হয়েছে। শিক্ষাবিদদের মধ্যে এটা আতঙ্কের সৃষ্টি করেছে এবং অনেকেই একে ‘এএমইউ স্ট্রেইন'-এ মারাত্মক মৃত্যু বলেও অ্যাখা দিচ্ছে। প্রক্টার অধ্যাপক মহম্মদ ওয়াসিম আলি বলেন, ‘গত ২০ দিনে, আমরা ফ্যাকাল্টির প্রায় ১৬ জন সদস্যকে হারিয়েছি, যাঁদের মধ্যে ছিলেন মেডিসিন বিভাগের চেয়ারম্যান, আই ফ্যাকাল্টির ডিন সহ আরও অনেক প্রসিদ্ধ শিক্ষক। এই ক্ষতির কথা যখনই ভাবি তখনই আতঙ্ক ও অস্থিরতার বোধ হয়।' অধ্যাপক আলি আরও বলেন, ‘এএমইউ এই রহস্যজনক স্ট্রেইনের সঙ্গে পারছে না দেখে সহ-উপাচার্য তারিক মনসুর জেনোম সিক্যুয়েন্সিংয়ের জন্য আইসিএমআরকে চিঠি লিখেছেন। যাতে সব দিক দিয়েই খতিয়ে দেখা হয়।'
আলিগড়ে করোনা পরিস্থিতি
দ্বিতীয় করোনার ওয়েভে আলিগড় জেলায় তীব্রভাবে মৃত্যুর সংখ্যা লাফিয়ে বেড়েছে, প্রায় ৯৮ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং ১৯,১৭৯ জন কোভিড পজিটিভ। এমনকী, ২০২০ সালের এপ্রিল থেকে ২০২১ সালের এপ্রিল পর্যন্ত এই শহরে ৫৮ জনের মৃত্যু হয়েছিল, কিন্তু গত কয়েক সপ্তাহে ২০ জনের মৃত্যুর পরই সংখ্যাটা বাড়ে।
টিকাকরণের আগেই মৃত্যু বহু অধ্যাপকের
আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয়ে কোভিড টিকাকরণ কেন্দ্র খোলা হয়েছে এবং ভ্যাকসিনেশন কর্মসূচির জন্য তা বেশ প্রশংসাও পেয়েছে। উপাচার্য তাঁর ফ্যাকাল্টির সদস্যদের টিকাকরণ করিয়ে নেওয়ার জন্য নিয়মিত আবেদনও করেছিলেন। যদিও অধ্যাপক ওয়াসিম নিশ্চিত করেছেন যে মৃতদের মধ্যে খুব কমজনই ছিলেন যাঁরা টিকাকরণ করিয়েছিলেন। এমনকী বেশ কিছু অধ্যাপকের টিকাকরণের পরও হাল্কা উপসর্গ দেখা দিলেও তাঁরা সুস্থ হয়ে ওঠেন।
এএমইউয়ের বর্তমান পরিস্থিতি
এএমইউয়ের এই পরিস্থিতি বিরাট চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে কর্তৃপক্ষকে। ফ্যাকাল্টির অনেক সদস্যই করোনায় আক্রান্ত এবং বাড়িতে আইসোলেশনে বা অনেক অধ্যাপকের স্বজন হারানোর বেদনার পরও তাঁরা অনলাইনে ক্লাস করিয়ে চলেছেন। পড়ুয়াদের মধ্যে এর ব্যাপক প্রভাব পড়ছে। তবে ইদের মুখে এভাবে পরপর মৃত্যু আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের চত্ত্বর যেন খাঁ খাঁ করছে। অধ্যাপক ওয়াসিম জানান এ বছর শোকের ইদ পালন করবেন তাঁরা। কারোরই মন মেজাজ ভালো নেই।