দুপুরেই পরেই অন্ধকার নামল শহরে। জ্বলে উঠল আলো। এরপর মুষলধারে বৃষ্টি। প্রায় ঘন্টা দুয়েকের বৃষ্টিতে জলমগ্ন শহর। আর তাতেই ঘটে গেল বিপত্তি। বিদ্যুৎ পৃষ্ট হয়ে মৃত্যু হল এক যুবকের।
শুধু তাই নয়, রাজভবনের সামনে জমা জলে ভাসতে থাকল দেহ।
প্রায় ঘন্টাখানেক পর দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। কিন্তু ভয়ঙ্কর সেই ছবি দেখেই আঁতকে উঠছেন শহরের মানুষ।
কীভাবে সভ্য একটা রাজ্যে এমন ঘটনা ঘটতে পারে তা নিয়েই আতঙ্কিত কলকাতার মানুষ। যদিও ইতিমধ্যে এই ঘটনায় কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন ফিরহাদ হাকিম।
বছর তেইশের ঋষভ মন্ডল। জীবনে কিছু করতে চান? আর সেই কারনেই চাকরি নিয়ে কলকাতায় আসেন ঋষভ। কিন্তু সেই কলকাতাই যে তাঁর মৃত্যুর কারণ হবে তা কখনই কেউ ভাবতে পারেননি। ছেলে আর নেই! মঙ্গলবার রাতে সে খবর পৌঁছয় ফরাক্কাতে।
ছেলেকে হারিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়ছেন মা। কোনওরকমে কান্না গিলে পরিবারকে সামলানোর চেষ্টা করছেন ঋষভের বাবা মন্টু মণ্ডল। তবে মঙ্গলবার বিকেলে অফিস থেকে বেরনোর সময় ছেলের সঙ্গে কথা বলেছিলেন মন্টুবাবুর। দুপুর কী খেয়েছিল তা নিয়ে কথা হয়।
মন্টুবাবুর কথায়, "ঋষভ বলেছিল, প্রচণ্ড বৃষ্টি হচ্ছে। আমরা বললাম, গাড়ি করে ফিরিস।' কিন্তু এটাই যে ছেলের সঙ্গে তাঁর শেষ কথা হবে তা ভাবতেও পারেননি মন্টুবাবু।
পেশায় ইঞ্জিনিয়র এই যুবক কলকাতার হিন্দুস্থান পেট্রোলিয়ামে কর্মরত ছিলেন। মঙ্গলবার সকালে এবং বিকেলে অফিস থেকে বেরনোর পরও বাড়িতে ফোন করেছিলেন ঋষভ। তারপরই ঘটে মর্মান্তিক ঘটনা।
এদিকে ঋষভের জামাইবাবু ও খুড়তুতো ভাই কলকাতায় এসেছেন। হেয়ার স্ট্রিট থানার সঙ্গে যোগাযোগ করে দেহ নেবেন তাঁরা। আজ বুধবার রাতেই ফরাক্কায় ফিরতে পারে ঋষভের দেহ। এই ঘটনায় ইতিমধ্যে ২ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা জানিয়েছেন ফিরহাদ হাকিম।
কিন্তু সেই টাকা নেবেন না বলেই জানিয়েছেন ঋষভের দিদি। তাঁর দাবি, এটাই কি উন্নয়নের ছবি। একটা ছেলের বিদ্যুৎ লেগে মৃত্যু হচ্ছে। ঠিক ভাবে রক্ষণাবেক্ষণ হয় না। ক্ষতিপূরণের টাকাতে পরিকাঠামো তৈরির আবেদন মৃতের দিদির।
এদিকে এই ঘটনা নিয়ে শুরু হয়েছে টানাপোড়েন। সিইএসসির দাবি, খবর পাওয়া মাত্রই সিইএসসি-র কর্মীরা এসে লাইটপোস্টের বিদ্যুৎ সংযোগ কেটে দেন।
যদিও, বিদ্যুৎস্পৃষ্টের অভিযোগ মানতে নারাজ সিইএসসি। সেখানে কোনও খোলা তার ছিল না বলে দাবি করেন তাঁরা। পালটা হুকিংয়ের অভিযোগ তুলেছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। তাঁদের দাবি, হুকিং করে স্থানীয় দোকানগুলিতে লাইট জ্বালানো হতো। আর সেখান থেকেই এই বিপদ ঘটেছে।