সেনাবাহিনীর কপ্টারে বৃহস্পতিবার সকালেই শীতলকুচি উড়ে যাবেন রাজ্যপাল ধনখড়। কিন্তু তাঁর এই সফর ঘিরে শুরু হয়েছে রাজভবন-নবান্ন সংঘাত। তাঁর এই সফরের আগে কার্যত সরকারি প্রোটোকল মনে করিয়ে রাজ্যপালকে চিঠি দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
এই চিঠির জবাব দিতে বেশিক্ষণ দেরি করেননি রাজ্যপালও। চিঠিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন যে, মানুষ যখন কষ্টে আছে, তখন এই প্রোটোকল মানার সময় নয়।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের চিঠির প্রাপ্তি স্বীকার করে ধনখড় লিখেছেন, 'আমি অবাক যে আপনার মতো একজন নেত্রী কী ভাবে ভাবলেন যে রাজ্যপালের সফরের জন্য রাজ্য সরকারের নির্দেশ প্রয়োজন? মানুষের কষ্ট ভাগ করে নেওয়ার জন্য যখন আমি সফর করতে চাইছি, তখন এই নিয়ম মানার সময় নয়। আমি আপনার দাবি মানতে রাজি নই।
একই সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীকে তাঁর দাবি পুনর্বিবেচনার আর্জি জানিয়েছেন রাজ্যপাল।
রাজ্যপালের দাবি, শপথ নেওয়ার সময় বলেছিলাম, 'পশ্চিমবঙ্গের মানুষকে সুরক্ষা দিতে সবসময় পাশে থাকব।' সেই প্রতিশ্রতি রক্ষার জন্যই রাজ্যের হিংসা কবলিত এলাকায় সফর করছেন বলে জানিয়েছেন রাজ্যপাল।
মমতাকে তিনি বলেছেন, 'সাংবিধানিক শপথের মর্যাদা রাখুন। মানুষ কষ্টে আছে সেই বিষয়গুলিতে নজর দেওয়া দরকার। সবরকম সহযোগিতা আমার তরফ থেকে পাবেন।'
চিঠি পালটা চিঠি ঘিরে যখন রাজনৈতিক তরজা তুঙ্গে তখন মুখ খুলছে বিজেপিও। পালটা জবাব দিয়েছে তৃণমূলও। বিজেপির দাবি, ভোটের পর থেকে লাগাতার সন্ত্রাস চলছে। একের পর এক জায়গাতে বিজেপি কর্মীদের মার খেতে হচ্ছে। প্রশাসনের তরফে কোনও ব্যবস্থাই নেওয়া হচ্ছে না।
পালটা বিজেপি কর্মীদের উপরেই মিথ্যা মামলা দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ। সেখানে রাজ্যপাল সন্ত্রাসের ছবি নিজে চোখে যদি দেখতে চা সেক্ষেত্রে রাজ্য সরকারের সমস্যা কোথায়? তাঁরা কি কিছু লুকোতে চাইছে? সে কারনেই কি এমন চিঠি?
যদিও রাজ্যপালের শীতলকুচি সফর প্রথম থেকেই প্রশ্ন তুলেছে তৃণমূল। প্ররোচনা দিতেই রাজ্যপাল শীতলকুচি যাচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছিলেন তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ। এদিন এই চিঠি নিয়ে তৃণমূলের দাবি, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্যে কোনও ভুল নেই। প্রোটোকল মানা উচিত রাজ্যপালের।
শুধু তাই অয়, তিনি যেখানে যাচ্ছেন অবশ্যই নিয়ম মেনে যাওয়া উচিত তাঁর।
উল্লেখ্য, এদিন চিঠিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অভিযোগ করেন যে, সরকারি 'বিধি এবং রীতি' ভেঙে একতরফা সিদ্ধান্ত নিয়ে শীতলখুচি-সহ কোচবিহারের বিভিন্ন স্থান পরিদর্শনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন রাজ্যপাল।
শুধু তাই নয়, রাজ্যপালের এই সিদ্ধান্ত রাজ্য স্বরাষ্ট্র দফতরের ১৯৯০ সালের 'ম্যানুয়্যাল অফ প্রোটোকল অ্যান্ড সেরিমনিয়্যালসে'র পরিপন্থী। ধনখড়কে মনে করান মমতা।
একই সঙ্গে তাঁর দাবি,'সরকারি নীতি এবং রীতি' অনুযায়ী এ বিষয়ে রাজ্য সরকার এবং সংশ্লিষ্ট ডিভিশনের কমিশনার ও জেলা শাসককে বিষয়টি জানানো প্রয়োজন। কিন্তু এ ক্ষেত্রে তা করা হয়নি বলেও অভিযোগ মমতার। সরাসরি সোশ্যাল মিডিয়াতে বিষয়টি জানিয়েছেন রাজ্যপাল। যা প্রোটোকলের পরিপন্থী বলে দাবি করেছেন মমতা।
শুধু তাই নয়, চিঠিতে মমতা আরও লিখেছেন, ১৩ মে রাজ্যপাল যে কোচবিহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাতে কয়েক দশকের প্রোটোকল ভাঙা হয়েছে। মমতার চিঠি অনুযায়ী, 'রাজ্যপাল যদি কোনও জেলা সফর করতে চান, সেই বিষয়ে রাজ্য সরকারের সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত নেন রাজ্যপালের সচিব।
সফরের আগে রাজ্য সরকার ও সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলেন সচিব। কিন্তু শীতলকুচি সফরের ক্ষেত্রে সে্ প্রোটোকল ভাঙা হয়েছে বলেই অভিযোগ মুখ্যমন্ত্রীর।
তাঁর দাবি, প্রোটোকল মেনেই সফর করতে হবে রাজ্যপালকে। এভাবে কখনই রাজ্যপাল সফর করতে পারেন না বলে অভিযোগ।