করোনা আবহেই ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের মারণ ছায়া দেশে, মধ্যপ্রদেশে মৃত ২ জন

করোনা ভাইরাসের মারাত্মক সংক্রমণের পাশাপাশি দেশে আরও এক মারণ ভাইরাসের উৎপত্তি হয়েছে যার পোশাকি নাম '‌মিউকর্মাইসোসিস’‌, তবে পরিচিত কালো ছত্রাক বা ব্ল্যাক ফাঙ্গাস নামে। দিল্লি ও গুজরাতে ইতিমধ্যেই এই সংক্রমণে একাধিক মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন। মূলত করোনা ভাইরাস থেকে সুস্থ হয়ে ওঠার পরই এই ফাঙ্গাস সংক্রমণে ফের আক্রান্ত হচ্ছেন মানুষ। এরই মাঝে মধ্যপ্রদেশে এই কালো ছত্রাক সংক্রমণের জেরে মৃত্যু হয়েছে ২ জন ব্যক্তির। এই ফাঙ্গাস তাঁদের মস্তিষ্কে গিয়ে প্রভাব ফেলার ফলেই এই মৃত্যু। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন যে এখনও পর্যন্ত এ রাজ্যে ১৩ জনের শরীরে এই ফাঙ্গাস পাওয়া গিয়েছে। ভোপালে কমপক্ষে সাতজনের শরীরে এই সংক্রমণ দেখা দেয়, যার মধ্যে ৬ জন ভর্তি রয়েছে সরকারি হামিদিয়া হাসপাতালে ও একজন বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি।

অস্ত্রোপচার ২ জন রোগীর

হামিদিয়া হাসপাতালে ভর্তি ৬ জন রোগীর মধ্যে সোমবার এক রোগীর অস্ত্রোপচার করেন চিকিৎসকরা, যেখানে তাঁর ন'‌টি দাঁত ও চোয়াল তুলে নেওয়া হয় যাতে সংক্রমণ ছড়াতে না পারে। অন্যদিকে আরও এক রোগী এই সংক্রমণের জেরে নিজের দৃষ্টিশক্তি হারান। ইন্দোরের মহারাজা যশবন্ত রাও হাসপাতালের চক্ষু বিভাগের অধ্যাপক ডাঃ শ্বেতা ওয়ালিয়া বলেন, ‘‌মস্তিষ্কে কালো ছত্রাক সংক্রমণের প্রভাবের ফলে ২ জন ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। এখনও পর্যন্ত এই সংক্রমণে ১৩ জন রোগী আক্রান্ত হয়েছে এ রাজ্যে।'‌

কেন হচ্ছে এই ছত্রাক সংক্রমণ

ব্ল্যাক ফাঙ্গাস বা মিউর্কমাইকোসিস এক ধরনের ছত্রাক সংক্রমণ, যা করোনা ভাইরাস থেকে সুস্থ হওয়া রোগীদের মধ্যে দেখা যাচ্ছে। কোভিড আবহের মধ্যেই গত বেশ কিছু সপ্তাহ যাবৎ মহারাষ্ট্র, দিল্লি, উত্তরপ্রদেশ ও ওড়িশাতে এ ধরনের কেসের রিপোর্ট হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ব্ল্যাক ফাঙ্গাস ইতিমধ্যেই বাতাসে ও স্থলে ছড়িয়ে গিয়েছে। আক্রান্ত ব্যক্তির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে দুর্বল করে দেয় এই সংক্রমণ। ফুসফুসের ক্রিয়াকলাপকে শক্তিশালী করার জন্য করোনা ভাইরাসের চিকিৎসার সময় স্টেরয়েড গ্রহণ এই সংক্রমণের অন্যতম কারণ হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে। লখনউয়ের কিং জর্জ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শ্বসন বিভাগের প্রধান ডাঃ সূর্যকান্ত বিশ্লেষণ করে বলেন, ‘‌প্রথমে এই সংক্রমণ দেহে প্রবে করে নাকের মাধ্যমে এবং ফুসফুসের মাধ্যমে রক্ত দিয়ে তা সরাসরি মস্তিষ্কে পৌঁছায়। সংক্রমণ যত বেশি, তার লক্ষণগুলিও তত মারাত্মক।'‌

সরকারের গাইডলাইন

সরকার এই রোগের স্ক্রিনিং, ডায়াগনোসিস এবং পরিচালনা করার জন্য একটি প্রমাণ ভিত্তিক উপদেষ্টা প্রকাশ করেছে। যত্ন না নিলে এটি মারাত্মক হয়ে উঠতে পারে বলে উল্লেখ করে সরকার বলেছে যে মিউকর্মাইসোসিস একটি ছত্রাক সংক্রমণ যা মূলত ওষুধ খাচ্ছে এমন লোককে প্রভাবিত করে, যা পরিবেশগত রোগ-জীবাণুগুলির সঙ্গে লড়াই করার ক্ষমতা হ্রাস করে দেয়। এই ফাঙ্গালের জীবাণু বাতাসে থেকে নাকের মাধ্যমে গ্রহণ করলে তা ফুসফুসে গিয়ে প্রভাব ফেলে। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক ও আইসিএমআর এই রোগের গাইডলাইন তৈরি করেছে।

 জমছে না তৃতীয় পর্যায়ের টিকাকরণ, তীব্র সংক্রমণেও ১১দিনে মাত্র ২৫ লক্ষের কম জন পেল টিকা জমছে না তৃতীয় পর্যায়ের টিকাকরণ, তীব্র সংক্রমণেও ১১দিনে মাত্র ২৫ লক্ষের কম জন পেল টিকা

উপসর্গ ও ঝুঁকি

এটা খুবই গুরুতর একটি রোগ যেখানে সতর্কতামূলক চিহ্ন ও উপসর্গ হিসাবে ব্যাথা ও চোখের চারপাশ লাল হয়ে যাওয়া/‌ নাক লাল হয়ে যাওয়া, জ্বর, মাথা ব্যাথা, কাশি, শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা, বমির সঙ্গে রক্ত ওঠা, মানসিক অবস্থার পরিবর্তন দেখা যায়। এছাড়াও অনিয়ন্ত্রিত ডায়বেটিস মেলিটাস, স্টেরয়েডের ফলে অনাক্রমতা, দীর্ঘদিন আইসিইউতে থাকা, একাধিক রোগ, পোস্ট ট্রান্সপ্ল্যান্ট / ম্যালিগেন্সি, ভেরিকোনাজল থেরাপি এমন কয়েকটি কারণ যা কালো ছত্রাকের সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ায়।