করোনার দ্বিতীয় ওয়েভে দেশজুড়ে মৃত্যু মিছিল অব্যাহত। এরই মধ্যে নতুন করে চাঞ্চল্য ছড়ালো উত্তরপ্রদেশের হামিরপুর জেলায়। রবিবার যমুনা নদীতে প্রায় সাতটি লাশ ভেসে আসতে দেখেন স্থানীয় বাসিন্দারা। করোনায় মৃত বেশ কিছু গ্রামবাসীদের দেহও ভেসে আসতে দেখেন তাঁরা। ঘটনায় স্বাভাবিকভাবেই উত্তেজনা ছড়ায়।
সোশ্যাল মিডিয়ায় হামিরপুরে যমুনা নদীতে একাধিক দেহ ভেসে আসার ভিডিও ভাইরাল হতেই তা প্রকাশ্যে আসে। এএসপি হামিরপুর অনুপ কুমার এ বিষয়ে কোনও অস্বাভাবিকতা দেখছেন না। তিনি জানিয়েছেন গ্রামের অনেক পরিবারই এখনও জল সমাধিতে বিশ্বাস করেন এবং অনেকেই দেহ পোড়ানোর চেয়ে জলে ভাসিয়ে দেওয়াতে বিশ্বাসী। তবে তিনি এও জানান যে তদন্ত চলছে এ ব্যাপারে। এএসপি বলেন, 'আমরা ঘটনাটি খতিয়ে দেখছি। এ বিষয়ে আমরা কানপুর পুলিশের সঙ্গেও যোগাযোগ করেছি কারণ দু’টি দেহ কানপুরের বাইরে এবং কানপুর দেহাতের দিক থেকে ট্রাক্টরে করে এনে নদীতে ভাসিয়ে দেওয়া হয়। এর পাশাপাশি একটি আধপোড়া দেহ কানপুরের দিক থেকে ভেসে এসেছে। আমরা দুটি জেলাকে অবহিত করেছি এবং এলাকায় তীব্র নজরদারি চালাচ্ছ।’
বাড়ি বাড়ি করোনা পরীক্ষায় উঠে এল ভয়ঙ্কর তথ্য, এই রাজ্যের রিপোর্টে ঘুম ছুটেছে স্বাস্থ্যমন্ত্রকের
তবে গ্রামবাসীরা এই ঘটনার পর থেকে আতঙ্কে রয়েছেন এবং গ্রামবাসীদের অনেকেরই অভিযোগ, এলাকায় করোনায় মৃতের সংখ্যা অতিরিক্ত বেড়ে যাওয়ার কারণে শ্মশানে চাপ পড়ছে। এই কারণেই মৃতদেহগুলি নদীতে ভাসিয়ে দেওয়া হচ্ছে। স্থানীয় এক গ্রামবাসী বলেছেন, 'কিছু কিছু ক্ষেত্রে কোভিডে প্রিয়জনের মৃত্যুর খবর একঘরে করে দেওয়ার ভয়ে গোপন রাকছেন অনেকে। এই উভয় কারণের জন্যই তাঁরা দেহ পোড়ানোর বদলে জলে ভাসিয়ে দিচ্ছেন। এই জন্যই হঠাৎ করে নদীতে ভেসে আসা মৃতদেহের সংখ্যা আচমকা বেড়ে গিয়েছে।’
পুলিশ জানিয়েছে, 'গড়ে হয়ত ১–২টো দেহ প্রতিদিন কানপুর–হামিরপুর সীমান্তে যমুনা নদীতে ভেসে আসতে দেখা যেত। কিন্তু সম্প্রতি নদীতে একাধিক দেহ ভাসতে দেখা গিয়েছে। যেটা ইঙ্গিত করছে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েছে।’ এই ঘটনাটি অবশ্য পরিবেশবিদদের উদ্বেগ বাড়িয়েছে, কারণ গ্রামবাসীদের দ্বারা নদীতে দেহ ভাসিয়ে দেওয়ার অচেতন চর্চা নিয়ে তিন্তা শুরু হয়েছে, যাঁরা পাঁচ দিনের বিস্তৃত 'পঞ্চক’ কালকে অশুভ বলে বিবেচনা করে এবং মৃতদেহকে শ্মশানে পোড়ানোর চেয়ে বিসর্জন দিতে পছন্দ করেন। জল প্রহরী রাজেন্দ্র বীর সিং চৌহান বলেন, 'অধিকাংশ গ্রামবাসী বুধবারে শুরু হওয়া পঞ্চক সময়কে স্বীকার করেছে, যা শেষ হয়েছে রবিবার, যা অশুভ এবং তাই তাঁরা জলে দেহগুলি ভাসিয়ে দিয়েছে।’ একইরকম ঘটনার সাক্ষী থাকল বিহারের কাটিহারও। সেখানে দেড়শোরও বেশি কোভিডে মৃতদেহ গঙ্গায় ভাসতে দেখা গিয়েছে। হাসপাতালে পড়ে থাকা যে সমস্ত মৃতদেহ পরিবারের তরফে চাওয়া হয় না, সেগুলিই নাকি হাসপাতালের কর্মীরা গঙ্গায় ফেলেছে বলে অভিযোগ। গোটা ঘটনার তদন্তে নেমেছে পুলিশ।