আইপিএলে করোনার থাবা বসানোর চাঞ্চল্যকর কারণ, অস্বস্তিতে মুম্বই ইন্ডিয়ান্স

জৈব সুরক্ষা বলয়ের মধ্যেই সাফল্যের সঙ্গে সংযুক্ত আরব আমিরশাহীতে সম্পন্ন করা গিয়েছিল আইপিএল। এমনকী ভারতে ইংল্যান্ড সিরিজ এবং আইপিএলের প্রথম দিকে দুটি শহরেও কোনও সমস্যা হয়নি। কিন্তু কীভাবে তারপর করোনা থাবা বসাল জৈব সুরক্ষা বলয়ে তা নিয়ে চলছে কাটাছেঁড়া। তারই মধ্যে সামনে এলো চমকে দেওয়া তথ্য।

মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের অস্বস্তি

আইপিএলের সফলতম দল মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের অস্বস্তি বাড়ালেন দলেরই ফিল্ডিং কোচ জেমস পামেন্ট। তাঁর কথায়, বেশ কয়েকজন ভারতীয় দলের সিনিয়র ক্রিকেটারই জৈব সুরক্ষা বলয়ের বিধিনিষেধ মানতে চাইছিলেন না। তাঁদের যা বলা হচ্ছিল তাতে তাঁরা অসন্তোষ প্রকাশ করছিলেন। তবে জৈব সুরক্ষা বলয়ে আমরা সকলেই নিরাপদ ছিলাম। বায়ো বাবল নিয়ে কোনও অভিযোগ নেই। যদিও পামেন্ট কোনও ক্রিকেটারের নাম প্রকাশ করেননি। পামেন্ট আরও বলেন, এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যাওয়া নিঃসন্দেহে চ্যালেঞ্জিং ছিল। তবে একের পর এক দল থেকে করোনা সংক্রমণ আসার আগে অবধি কোনও আশঙ্কার বাতাবরণ ছিল না।

(ছবি- বিসিসিআই/আইপিএল)

বদলে যাওয়া পরিস্থিতি

শনিবারই দেশে ফেরা পামেন্ট জানিয়েছেন, চেন্নাই সুপার কিংস থেকে যখন করোনা সংক্রমণের খবর এলো তারপরই বদলাতে শুরু করল পরিস্থিতি। কারণ, তার আগেই আমরা চেন্নাইয়ের সঙ্গে খেলেছিলাম। আমি এমনিতে অস্ট্রেলিয়া আর নিউজিল্যান্ডের ক্রিকেটারদের সঙ্গেই বেশি সময় কাটাতাম। সংক্রমণের খবর আসতেই বা ভারতীয় ক্রিকেটারদের পরিবারের থেকে করোনা আক্রান্ত হওয়ার খবর আসতেই সকলের মানসিকতা বদলাতে শুরু করল। আমরা তখন বুঝে যাই আর আইপিএল হওয়া সম্ভব নয়। তবে জৈব সুরক্ষা বলয়ে নিরাপদই ছিলাম। আমাদের এক সাপোর্ট স্টাফের করোনা পজিটিভ আসতেই চেন্নাইতে তাঁকে যথাসময়ে আইসোলেশনে পাঠানো হয়েছিল। আইপিএল শুরুর আগে ভারতে করোনা পরিস্থিতি খারাপ হতে পারে জানতাম। তবে একটি শহরে হলে আইপিএল পুরোটা করা যেতে পারত। আমেদাবাদে ভারত-ইংল্যান্ড টেস্টে ৭০ হাজার দর্শক প্রবেশ করতে দেওয়াও দায়িত্বজ্ঞানহীন কাজ হয়েছে বলে দাবি পামেন্টের।

(ছবি- বিসিসিআই/আইপিএল)

অনুশীলনের মাঠ নিরাপদ নয়

চেন্নাই ও মুম্বই পর্বের সব ম্যাচ হওয়ার পর আমেদাবাদ ও দিল্লিতে চলছিল আইপিএলের ম্যাচ। এই দুই শহরেই করোনা সংক্রমণ বাড়ছিল উদ্বেগজনক হারে। জৈব সুরক্ষা বলয় ভেদ করে চারটি দলে করোনা থাবা বসানোয় বন্ধ করা হয় আইপিএল। কীভাবে এমনটা হলো জৈব সুরক্ষা বলয়ে তার কারণ অনুসন্ধানে বেরোচ্ছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। অনেকে বলছেন, এক শহর থেকে অন্যত্র বিমানযাত্রা একটা কারণ হতে পারে। কিন্তু দিল্লি ও আমেদাবাদে স্টেডিয়াম বাদে যেখানে চারটি দলের অনুশীলন করার জায়গা চিহ্নিত করা হয়েছিল সেখানেই গলদ ছিল বলে সূত্রের খবর। ওইসব জায়গায় করোনা সংক্রমণ রোধে ব্যবস্থা পর্যাপ্ত ছিল না বলেই জানা যাচ্ছে। বোর্ডের একাংশও নাকি মনে করছে, এই দুই শহরে আইপিএল আয়োজনই ভুল হয়েছে। স্টেডিয়ামে ম্যাচ বা অনুশীলনের ব্যবস্থা ছাড়া বাকি যেসব মাঠে অনুসীলনের বন্দোবস্ত করা হয়েছিল সেই সব জায়গাই সংক্রমণের আঁতুড়ঘর বলে মনে করা হচ্ছে।

(ছবি- বিসিসিআই/আইপিএল)

আমেদাবাদে সমস্যা

দিল্লিতে চেন্নাই সুপার কিংস যেমন রোশনারা ক্লাব মাঠে অনুশীলন করেছে, তেমনই গুজরাট কলেজ মাঠেও অনুশীলনের বন্দোবস্ত করা হয়েছিল দলগুলির জন্য। দুটি জায়গাই শহরের পুরানো অংশ ও ঘিঞ্জি এলাকায়। মোতেরায় স্টেডিয়াম তৈরি হলেও অনুশীলনের মাঠগুলিতে কাজ চলায় সমস্যা হয়। তবু কিছু কিছু জায়গা টেস্ট ও প্রথম শ্রেণির অনুশীলনের জন্য তৈরি হলেও টি ২০ ম্যাচের অনুশীলনের জন্য প্রস্তুত হয়নি এখনও। কেকেআরের তিনজন যে আমেদাবাদের করোনা আক্রান্ত হন তাঁদের ক্ষেত্রে ওই কলেজ মাঠের মালি, নিরাপত্তারক্ষী বা অন্যান্যদের থেকে সংক্রমণ ছড়িয়ে থাকতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।

(ছবি- বিসিসিআই/আইপিএল)

দিল্লিতে বাধা

দিল্লির রোশনারা ক্লাবে আসা-যাওয়ার পথও ঘিঞ্জি ও প্রচুর মানুষের জমায়েত থাকে সেই এলাকায়। ফলে দ্রুত সংক্রমণ ছড়াতেই পারে। দিল্লিতে পালাম মাঠ রয়েছে। সেই এলাকায় সংক্রমণ খুব একটা উদ্বেগজনক না থাকলেও আন্তর্জাতিক বা আইপিএলের প্রস্তুতির জন্য পরিকাঠামো নেই। টিম হোটেলের কাছে জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া মাঠ নিরাপদ ও সেখানে সুন্দর ড্রেসিংরুম থাকলেও প্র্যাকটিস পিচ আবার ভালো নয়। তবে দিল্লি ও আমেদাবাদ পর্ব সামলে নিয়ে পরের পর্বে সমস্যা হতো না। কারণ বেঙ্গালুরু ও কলকাতায় স্টেডিয়ামের পাশাপাশি অনুশীলনের দারুণ ব্যবস্থা ছিল। বায়ো বাবলের পরিবেশও ভালোভাবে তৈরি করা হয়েছিল।

(ছবি- বিসিসিআই/আইপিএল)