সৌপ্তিক বন্দ্যোপাধ্যায় : রবীন্দ্র সঙ্গীতকে হারমোনিয়াম তবলার বাইরে ব্যান্ড মিউজিকের ঘরানায় ফেলে চমকে দিয়েছিলেন নীল দত্ত। পাগলা হাওয়া গান যখন উলালা দিয়ে শুরু হয়েছে চমকে গিয়েছিল বাঙালি । খানিক সমালোচনা হলেও গান চরম হিট। ছবি বং কানেকশন। কিন্তু ওই রবীন্দ্র সঙ্গীতকে যিনি প্রথম সিনেমার অঙ্গনে আনলেন তাঁকে বাঙালি বড্ড বেশি মহিষাসুরমর্দিনীর জন্যই খ্যাত করে রেখেছে। তিনি পঙ্কজ মল্লিক।
সমস্যায় পড়েছিলেন না বলে রবি ঠাকুরের গানে সুরারোপ করার জন্য। কিন্তু ইচ্ছা থামাননি। ফল হয়েছিল একটু বেশিই ভালো। তাঁর নিজের জন্যও। বাংলা সিনেমার গান ও বাংলা গানের জন্যও।
গত শতাব্দীর কুড়ির দশকে ঠাকুরবাড়ি ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সাধারণ মানুষের কাছে একটা তীর্থস্থানের মতোই হয়ে উঠেছিল। এমন এক তীর্থস্থান, যাকে বেশিরভাগই দূর থেকে প্রণাম করে চলে যেতেন। সমীহ ছিল, কিন্তু সাধারণের সঙ্গে রবি ঠাকুরের গানের আত্মার যোগাযোগটা তখনও পাকাপোক্ত হয়নি। সেই যোগাযোগটা পাকা করেছিলেন পঙ্কজ মল্লিক। সিনেমায় রবীন্দ্রগান প্রথম তিনি ও রাইচাঁদ বড়াল যুগ্মভাবে শুরু করেন। হিন্দি সিনেমায় তিনিই প্রথম এনেছিলেন রবির সুর। তাই ২৫ বৈশাখ দিকে দিকে যখন রবীন্দ্রসঙ্গীত বেজে উঠছে, তখন সেই মানুষটির কথা একবার না মনে করলেই নয়।
আদ্যপান্ত মধ্যবিত্ত ঘরের ছেলে পঙ্কজ মল্লিক তখন কলেজ পড়ুয়া। রবি চর্চায় ডুবে থাকেন। সেই সময়েই বিশ্বকবির লেখা শেষ খেয়া কবিতায় সুর দিয়ে দেন। এতেই থেমে থাকলেন না। বেশ কিছু জায়গায় গিয়ে সে গান গাইতেও শুরু করেন। সেই সময় ঠাকুর পরিবার মূলত রবীন্দ্রনাথের আজ্ঞা ছাড়া এসব কাজ করা যেত না। কিন্তু ছেলে এসব করে বেড়াচ্ছে। খবর পেয়ে তাঁকে ডেকে পাঠান রথীন্দ্রনাথ ঠাকুর অর্থাৎ কবি পুত্র। আমতা আমতা করে একটা অদ্ভুত অজুহাত দিয়েছিলেন। জানা যায় বলেছিলেন, ওই সুর কবিরই। তাঁর বন্ধুর কাছে আছে সেই স্বরলিপি। একদিন দেখিয়ে দেবেন। সে একদিন আর আসেনি বলেই জানা যায়। কিন্তু দ্বিতীয়দিনে তিনি আবারও একই কাণ্ড ঘটালেন। তাঁকে ডাকলেন রবীন্দ্রনাথ স্বয়ং। সামনে গাইতে বললেন। কোনও চিন্তা না করে কবির ঘরে থাকা হ্যামিল্টন অর্গ্যান নিয়ে গেয়ে শোনান ‘আমায় নিয়ে যাবি কে রে গানটি’। স্তম্ভিত রবি।
এরপর তিরিশের দশকে এই গানটি নিজের ছবিতে রাখতে চান প্ৰমথেশ বড়ুয়া। তখন পঙ্কজ মল্লিককে সবাই চেনেন। চলচ্চিত্র জগতেও প্রতিষ্ঠিত। কবি অনুমতি দেন। একটি পঙক্তি-তে পরিবর্তনও করে দেন। বলেছিলেন সুরের সঙ্গে মেলাতে ওই ছোট্ট পরিবর্তন। গান হই হই করে হিট। কেএল সায়গলকে দিয়ে গাওয়ান ‘আমি তোমায় যত শুনিয়েছিলেম গান’। সে গানও দুরন্ত হিট।
১৯২৯ সালের শেষের দিকে পঙ্কজ মল্লিক কলকাতা বেতারে নামে একটি অনুষ্ঠান পরিচালনা শুরু করেছিলেন। নাম ছিল ‘সঙ্গীত শিক্ষার আসর’। এখানে নজরুল, রবীন্দ্র সঙ্গীতসহ অতুল প্রসাদ, রজনীকান্ত এবং দ্বিজেন্দ্রলালের গান শেখানো হতো। এছাড়াও তাঁর শেখানো গানের তালিকায় ছিল পদকীর্তন, শ্যামাসঙ্গীত, পল্লীগীতি, দেশাত্মবোধক গান, আনুষ্ঠানিক গান, তুলসীদাসী সঙ্গীত, সুর দাস, গুরুনানক, মীরাবাঈ প্রমুখের হিন্দী ভজন।
১৯২৭ সাল থেকে তিনি কলকাতার ইন্ডিয়ান ব্রডকাস্টিং কর্পোরেশনে কাজ শুরু করেন। এই সংস্থা পরে অল ইন্ডিয়া রেডিও (এআইআর) (বর্তমানে আকাশবাণী কলকাতা) নামে পরিচিত হয়। এখানে তাঁর সহকর্মী ছিলেন রাইচাঁদ বড়াল। প্রায় পঞ্চাশ বছর তিনি আকাশবাণীকে সংগীতশিল্পী ও সংগীত পরিচালক হিসেবে কাজ করেন। তিনি কুন্দনলাল সায়গল, শচীন দেব বর্মণ, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, গীতা দত্ত, আশা ভোসলে প্রমুখ সংগীত পরিচালক ও শিল্পীদের সঙ্গে কাজ করেছেন। চলচ্চিত্রে তিনি কুন্দনলাল সায়গল, প্রমথেশ বড়ুয়া ও কানন দেবীর মতো শিল্পীদের সঙ্গে অভিনয়ও করেন। নীতিন বসু ও রাইচাঁদ বড়ালের সঙ্গে তিনি ভারতীয় চলচ্চিত্রে নেপথ্য কণ্ঠসংগীতের প্রবর্তন করেছিলেন। ভারতের প্রথম যুগের ফিল্ম স্টুডিও নিউ থিয়েটার্সের সঙ্গে তিনি ২৫ বছর যুক্ত ছিলেন। রবীন্দ্রসংগীতকে জনপ্রিয় করে তোলার কাজেও তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।
লাল-নীল-গেরুয়া...! 'রঙ' ছাড়া সংবাদ খুঁজে পাওয়া কঠিন। কোন খবরটা 'খাচ্ছে'? সেটাই কি শেষ কথা? নাকি আসল সত্যিটার নাম 'সংবাদ'!
'ব্রেকিং' আর প্রাইম টাইমের পিছনে দৌড়তে গিয়ে দেওয়ালে পিঠ ঠেকেছে সত্যিকারের সাংবাদিকতার। অর্থ আর চোখ রাঙানিতে হাত বাঁধা সাংবাদিকদের।
কিন্তু, গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভে 'রঙ' লাগানোয় বিশ্বাসী নই আমরা। আর মৃত্যুশয্যা থেকে ফিরিয়ে আনতে পারেন আপনারাই। সোশ্যালের ওয়াল জুড়ে বিনামূল্যে পাওয়া খবরে 'ফেক' তকমা জুড়ে যাচ্ছে না তো? আসলে পৃথিবীতে কোনও কিছুই 'ফ্রি' নয়। তাই, আপনার দেওয়া একটি টাকাও অক্সিজেন জোগাতে পারে। স্বতন্ত্র সাংবাদিকতার স্বার্থে আপনার স্বল্প অনুদানও মূল্যবান। পাশে থাকুন।.