'তদন্তে যেন কোনও গাফিলতি না হয়'! দায়িত্ব নিয়েই রাজীবের বিরুদ্ধে চলা তদন্তের গতি বাড়াতে বললেন জ্যোতিপ্রিয়

ভোটের আগেই বন সহায়ক পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নাম না করে তৎকালীন বনমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়কে আক্রমণ শানিয়ে ছিলেন তিনি। কার্যত হুঁশিয়ারি দিয়ে মমতা বলেন, ইতিমধ্যেই তদন্ত শুরু হয়েছে। খুব শিঘ্রই আসল তথ্য সামনে আসবে বলেও দাবি করেন মুখ্যমন্ত্রী।

পালটা হুঁশিয়ারি দেন রাজীবও। তদন্ত হলে তৃণমূলেরই অনেকে ফেঁসে যাবে বলে পালটা মন্তব্য করেন প্রাক্তন এই বিধায়ক। আর এই বিতর্কের মধ্যেই বনমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব নিয়েই রাজীবের বিরুদ্ধে তদন্তের ইঙ্গিত জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের।

তৃতীয়বারের জন্যে ফের ক্ষমতায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার কোভিড পরিস্থিতিতে সংক্ষিপ্ততম শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে সকাল পৌনে ১১টায় শপথ নিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃতীয় মন্ত্রিসভার ৪৩ জন সদস্য। এদের মধ্যে ২৪ জন পূর্ণমন্ত্রী।

সকলে একসঙ্গে শপথ নেন। স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রী রয়েছেন ১০ জন। সকলে একসঙ্গে শপথ নেন। একইসঙ্গে শপথ নেন ৯ জন প্রতিমন্ত্রীও। এরপরেই নবান্ন সভাঘরে নতুন সরকারের প্রথম বৈঠকে মন্ত্রীদের দফতর বণ্টন হয়। একাধিক মন্ত্রীর দফতর বদলানো হয়েছে।

যেমন খাদ্যদফতর থেকে বনমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে জ্যোতিপ্রিয় মল্লিককে। আর দায়িত্ব নিয়েই পূর্বসুরির বিরুদ্ধে সুর চড়ালেন তিনি।

শুধু তাই নয়, সোমবার দায়িত্ব পাওয়ার পরেই অরণ্য ভবনে যান। বুঝে নেন তাঁর কাজ। এমনকি নিয়োগ নিয়ে যে দুর্নীতি হয়েছে তা নিয়েই তাঁর প্রধান সচিবের সঙ্গে কথা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। এই বিষয়ে এক সংবাদ মাধ্যমের কাছে মুখ খোলেন মন্ত্রী।

সেখানে তিনি বলেন, "তদন্ত তদন্তের মতো চলছে। এটা নিয়ে আমি বিশেষ মাথা ঘামাতে চাই না। তবে আমি আজকেই প্রধান সচিবকে জানিয়ে দিয়েছি, তদন্তে যেন কোনও গাফিলতি না হয়। স্বচ্ছভাবে তদন্ত হবে। যদি উচ্চপর্যায়ের তদন্ত করতে হয় তাহলে মুখ্যমন্ত্রীর দফতর বা মুখ্যসচিবের সঙ্গে কথা বলা হবে।

পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নভাবে এই দফতর চালাতে হবে। এবং যে কাণ্ডকারখানা হয়েছে তা তদন্তে উঠে আসবে। কেউ দোষী সাব্যস্ত হলে সরকার যা বিচার নেবে তাই হবে।"

উল্লেখ্য, ভোটের আগে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন বনাঞ্চলে বন সহায়ক পদে নিয়োগ করা হয়। নিয়োগের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছিল, বনবস্তির বাসিন্দাদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। ইতিমধ্যেই যাঁরা স্বেচ্ছায় বন-জঙ্গল রক্ষার কাজ করছেন, সুবিধা পাবেন তাঁরাও। কিন্তু এই নিয়োগ নিয়েই দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে।

আলিপুরদুয়ারের চিলাপাতা রেঞ্জ, জলপাইগুড়ির খুনিয়া রেঞ্জ, ময়নাগুড়ির রামশাই রেঞ্জ, গরুমারা নর্থ রেঞ্জ-সহ অধিকাংশ জায়গায় প্রতিবাদ-বিক্ষোভও হয়েছে। তাঁদের অভিযোগ, অনেক জায়গাতেই বনবস্তিবাসীরা চাকির পাননি। অথচ শহরাঞ্চলের বাসিন্দারাও অনেকে চাকরি পেয়েছেন।

এমনটাই অভিযোগ ওঠে। উত্তরবঙ্গের ভোটের গিয়ে আর সেটাকেই প্রচারের হাতিয়ার করেন মমতা।

ভোট চলাকালীনই আলিপুরদুয়ারের প্যারেড গ্রাউন্ড থেকে রাজীবকে নিশানা করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ''কেউ কেউ এদিক ওদিক দৌড়ে বেড়াচ্ছে। যেতে দিন। যে বেশি দুর্নীতি করেছে, সে তো পালাবেই। আমি সবাইকে জানি, কে কী করেছে। ওদের লম্ফ-ঝম্ফ সব বন্ধ হয়ে যাবে। বিধানসভার পরে দেখব।''

বিপুল ভোটে জয় পেয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ২০০ এরও বেশি আসন পেয়ে নবান্নে ফের মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ারে বসেছেন মমতা। মন্ত্রিসভা গঠন হতেই ফের রাজীবের বিরুদ্ধে সুর চড়ালেন তাঁরই একদা সহযোদ্ধা। যদিও এই বিষয়ে কোনও মন্তব্য করেননি রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়।

তবে মমতার অভিযোগে রাজীব ভোটের আগে জানিয়েছিলেন যে, 'তিনি স্বচ্ছতার সঙ্গে নিয়োগের জন্য বোর্ডের হাতে তুলে দিয়েছিলেন।''