কলকাতা : রাজ্যে তৃতীয়বার মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নেওয়ার পর শানিবার প্রথমবার বিধানসভা অধিবেশনে বক্তব্য রাখলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন বিধানসভায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নির্বাচন কমিশনকে নিশানা করে বললেন, “নির্বাচন কমিশনের সহায়তায় কোথাও কোথাও রিগিং হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের সহায়তা না থাকলে রাজ্যে ৩০টি আসন বিজেপির জুটতো না। অবিলম্বে নির্বাচনী আইনের সংস্কার হওয়া উচিত। আজও যারা অহঙ্কারী, তাঁদের পতন অবশ্যম্ভাবী। ওরা কিছুতেই মানুষের রায় মেনে নিতে পারছে না।”
মুখ্যমন্ত্রী এদিন তাঁর বক্তব্যে বুঝিয়ে দেন ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচন পরিচালনায় নির্বাচন কমিশন পক্ষপাতিত্ব করেছে। রাজ্যে করোনা পরিস্থিতিতে ৮ দফায় নির্বাচন করেছে কমিশন।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শনিবার বিধানসভায় বলেন, “নির্বাচনের সময় চার লক্ষ সেনা এনে রাজ্যে কাজ করিয়েছে। তাদের আরটিপিসিআর হয়েছে কি না জানা নেই। তারা করোনা ছড়িয়েছে। দিল্লি থেকে নেতারা এসেছেন রোজ রাজ্যে সভা করতে।”
নির্বাচন কমিশনের এভাবে নির্বাচন পরিচালনার ফলে যে রাজ্যে করোনা পরিস্থিতি আজ ভয়ঙ্কর জায়গায় পৌঁছেছে সেটা আদালত থেকে শুরু করে চিকিৎসক সবাই বলছেন। ইটা শুধু রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিযোগ নয়। রাজ্যের মমানুষের কথা না ভেবে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ এক প্রকার রোজ রাজ্যের কোনও না কোনও জেলায় এসে নির্বাচনী সভা করেছেন। আর সেই সভায় নির্বাচন কমিশনের করোনা সংক্রমণ চলার মধ্যে প্রচারের জন্য বেঁধে দেওয়া কোনও বিধি মানা হয়নি। কমিশন বলেছিল, প্রতি জেলায় নির্বাচনী প্রচারের আগে জেলা প্রশাসনের অনুমতি নিতে হবে। জেলায় একজন করে নোডাল অফিসার থাকবেন। তিনি নজরদারি করবেন জনসভায় সবাই মাস্ক পরছেন কি না, শারীরিক দূরত্ব মানছেন কি না। কিন্তু বাস্তবে এই নিয়মকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে নির্বাচন ঘোষণা থেকে শুরু করে নির্বাচনের শেষ প্রচার পর্যন্ত টানা নিয়ম ভেঙে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল সভা করেছে । এমন কী কমিশন শেষে যখন ৫০০ -র বেশি জনসমাগম করে সভা করা যাবে না বলে নির্দেশ দিয়েছিল, তখনও সেই নির্দেশ না মেনে বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয় সভা করেছেন ৫০০-র বেশি মানুষীর ভিড় নিয়ে। এ ক্ষেত্রে বাবুল সুপ্রিয়, দিলীপ ঘোষরা ভিড়ের জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পুলিশের দিকে অভিযোগের আঙ্গুল তুলেছেন। অথচ তখন রাজ্যের আইইইনশৃঙ্খলা ছিল কমিশনের দাযিত্বে । তাও কোনও ভাবেই এই সব রাজনৈতিক নেতাদের করোনা বিধি মানতে বাধ্য করাতেই পারেনি নির্বাচন কমিশন।
এ ছাড়াও নির্বাচনে শুভেন্দু অধিকারী সাম্প্রদায়িক উস্কানি মূলক বক্তব্য রেখেছেন। প্রথম দফার নির্বাচনে রাজ্যে অশান্তির জন্য পাকিস্তানের হাত রয়েছে বলে শুভেন্দুবাবু মন্ত্যব করেছেন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আসানসোলের জন সভা থেকে “দাঙ্গা ” শব্দটি উল্লেখ করে বক্তব্য রেখেছেন বলে তৃণমূলের তরফে অভিযোগ করা হয়েছে নির্বাচন কমিশনে। তৃণমূলের অভিযোগ কমিশন এর জন্য প্রধানমন্ত্রী ও শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে কোনও রকম ব্যবস্থা নেয়নি। এমন কী করোনার ভয়বহতা বাড়ছে দেখেও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী শেষ তিন দফা নির্বাচন এক দফায় করার জন্য নির্বাচন কমিশনের কাছে আবেদন জানালেও সেই আবেদন গ্রাহ্য হয়নি। বিজেপি রাজ্যের শেষ তিন দফার নির্বাচন এক দফায় করার বিরুদ্ধে ছিল। তাদের যুক্তি ছিল এর ফলে নির্বাচনের স্পিরিট নষ্ট হবে। শেষ পর্যন্ত বিজেপি-র দাবিই মান্যতা পেয়েছে। এই ঘটনা রাজ্যের শাসক দলের পাদশাপাশি রাজ্যের মানুষ দেখেছেন। ফলে নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
এর পর মাদ্রাজ হাই কোর্ট কমিশনের বিরুদ্ধে করোনাকালে এভাবে নির্বাচন পরিচালনা করার জন্য কমিশনের বিরুদ্ধে “খুনের মামলা রুজু করার” কথা বলেছে। এই সব বিষয়গুলি নিরপেক্ষতা ও স্বছতার প্রশ্নে নির্বাচন কমিশনকে প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। এর ওপর শনিবার মুখ্যমন্ত্রীর বিধানসভায় দাঁড়িয়ে নির্বাচনী আইন সংশোধনের দাবি জানানোয় কমিশনের ভূমিকা আরও প্রশ্নের মুখে পরে গেল।
লাল-নীল-গেরুয়া...! 'রঙ' ছাড়া সংবাদ খুঁজে পাওয়া কঠিন। কোন খবরটা 'খাচ্ছে'? সেটাই কি শেষ কথা? নাকি আসল সত্যিটার নাম 'সংবাদ'!
'ব্রেকিং' আর প্রাইম টাইমের পিছনে দৌড়তে গিয়ে দেওয়ালে পিঠ ঠেকেছে সত্যিকারের সাংবাদিকতার। অর্থ আর চোখ রাঙানিতে হাত বাঁধা সাংবাদিকদের।
কিন্তু, গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভে 'রঙ' লাগানোয় বিশ্বাসী নই আমরা। আর মৃত্যুশয্যা থেকে ফিরিয়ে আনতে পারেন আপনারাই। সোশ্যালের ওয়াল জুড়ে বিনামূল্যে পাওয়া খবরে 'ফেক' তকমা জুড়ে যাচ্ছে না তো? আসলে পৃথিবীতে কোনও কিছুই 'ফ্রি' নয়। তাই, আপনার দেওয়া একটি টাকাও অক্সিজেন জোগাতে পারে। স্বতন্ত্র সাংবাদিকতার স্বার্থে আপনার স্বল্প অনুদানও মূল্যবান। পাশে থাকুন।.