মাছ খেয়েছেন? বড়দিনে কেক? তুমুল বৃষ্টিতে নদীর ধারে দাঁড়িয়ে প্রেম নিবেদন? ক্রিকেট ম্যাচ জেতার পর ভরপেট বিরিয়ানি ভাল লাগে?

কবীর সুমন, নচিকেতা বা অঞ্জন দত্তর গান শুনে আর প্রেমের কথা ভাবতে ভাবতে ছাদে দাড়িয়ে কেঁদেছেন কখনও?

এইরকম একটা প্রশ্নমালা যদি বাংলা জয় করতে আসা গেরুয়া শিবিরের নিবেদিতপ্রাণ ভক্তদের সামনে রাখা হতো, আমি নিশ্চিন্ত তাহলে অধিকাংশ প্রশ্নের উত্তরই না আসতো| এইসব প্রশ্নের উত্তর না জানলে আপনি তালীবনশ্যাম সমুদ্রমেখলা এই বঙ্গদেশের হৃদয়কে ছোঁবেন কি করে?

বিজেপির সোনার বাংলার প্রতিশ্রুতি যে এইভাবে প্রত্যাখ্যাত হলো, তা বোধহয় এই বাঙালির শরীর এবং মনকে চিনতে না পারা| যে শরীরে রামপ্রসাদ এবং লালনের গান একইরকম ভাবে আলোড়ন তোলে, একই উত্তেজনা নিয়ে ভিয়েতনাম এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার দাবিতে যে মন ও হৃদয় রাস্তায় নামে|

নিজেকে বানিয়া দাবি করতে ব্যস্ত থাকা ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী (home minister) ভুলেই গিয়েছিলেন এই রাজ্যে এখনও সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় (soumitra chattopadhyay) মারা গেলে শোকের ছায়া নেমে আসে|

আর উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথকে (yogi adityanath) অ্যান্টি রোমিও স্কোয়াড গড়ার ঘোষণা নিয়ে মহুয়া মৈত্র (mahua moitra) যে উত্তরটা দিয়েছিলেন, সেটাই তো আসলে মহাকাব্যিক অবস্থান| তৃণমূলের দাপুটে সাংসদ হয়তো বা বাংলার মহিলাদের মনের কথাই বলে দিয়েছলেন….

“উই লাভ আওয়ার রোমিওস”|

একটা জাতি প্রেম এবং প্রেমিকদের কি চোখে দেখে সেটা বুঝতে যোগী আদিত্যনাথের আরেকটু হোমওয়ার্ক করা উচিত ছিল| জেনে নিতে পারতেন যে কেন বাঙালির কাছে দেবদাস এত আপন, এত আইকন|

বাঙালি সম্পর্কে হোমওয়ার্ক বা ব্যাকগ্রাউন্ড রিসার্চ এর এই দূর্বলতাটাই বিজেপি র বাড়া ভাতে ছাই ঢেলে দিল| ২০১৯ এর লোকসভা নির্বাচনে ১৮ আসনে জিতে এবং ১২২ টি বিধানসভা কেন্দ্রে এগিয়ে থেকে যে পদ্মফুল ঘাসফুলের ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলছিল বলে মনে হচ্ছিল, তাদেরকেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একেবারে বাপি বাড়ি যা করে দিলেন| এবং একই সঙ্গে বাপি বাড়ি যা শটের আবিষ্কর্তাকেও|

এবং এক্ষেত্রেও বিজেপি বা গেরুয়া শিবিরের হোমওয়ার্কের বড়ই অভাব| এই বঙ্গে যে মীরজাফর বা জগৎশেঠদের মতো ষড়যন্ত্রকারীদের বা পিছন থেকে খেলাধূলায় অভ্যস্তদের আসলে ঘৃণা করা হয়,সেটা তারা মাথায় রাখেননি|

তিনি যেই হোন| পলাশী এবং তার ষড়যন্ত্র যে এখনও বাঙালির হৃদয়ে দগদগে ক্ষত, সেটা অমিত শাহ রা হিন্দু ন্যারেটিভ গড়ার সময়ে খেয়াল রাখেননি|

দলবদলুদের নির্বাচনী পারফর্ম্যান্স আতসকাচের তলায় রাখলেই বিজেপি কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে এটা পরিষ্কার হয়ে যাওয়া উচিত| হয়তো একইসঙ্গে বুঝে যাবেন হিন্দু মুসলিম নির্বিশেষে সব বাঙালির কাছেই মীরজাফর শব্দটা আসলে কি অর্থ বহন করে এবং কেন এতবার করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শব্দটা উচ্চারণ করেছেন|

এই যে বাঙালিকে চিনতে না পারা, তাঁর হৃদয়ের কান্না হাসি দুঃখকে কান পেতে না শোনা আর বাঙালির বুদ্ধিকে অবজ্ঞা করাই বিজেপির ভোটে হারার প্রধান কারণ| কলকাতা শহরের রাজনৈতিক ঐতিহ্য, বাংলার রাজনৈতিক সংস্কৃতিকে বিন্দুমাত্র গুরুত্ব না দেওয়া অমিত শাহ রা এখানে গুজরাট বা উত্তরপ্রদেশের মডেল নামাতে গিয়ে ডাহা ফেল করে গেছেন|

বুদ্ধিমান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (mamata banerjee) তাই এই অসাধারণ জয়ের জন্য সম্পূর্ণ কৃতিত্ব নিজে না নিয়ে বারবার মনে করিয়ে দিয়েছেন, বাংলা গোটা দেশকে বাঁচিয়ে দিয়ে গেল| তার মানে গোখলের সেই অবিস্মরণীয় উক্তি এই ২০২১ (assembly election 2021) এও সত্য| বাংলাই আবার গোটা দেশকে পথ দেখাল….

লাল-নীল-গেরুয়া...! 'রঙ' ছাড়া সংবাদ খুঁজে পাওয়া কঠিন। কোন খবরটা 'খাচ্ছে'? সেটাই কি শেষ কথা? নাকি আসল সত্যিটার নাম 'সংবাদ'! 'ব্রেকিং' আর প্রাইম টাইমের পিছনে দৌড়তে গিয়ে দেওয়ালে পিঠ ঠেকেছে সত্যিকারের সাংবাদিকতার। অর্থ আর চোখ রাঙানিতে হাত বাঁধা সাংবাদিকদের। কিন্তু, গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভে 'রঙ' লাগানোয় বিশ্বাসী নই আমরা। আর মৃত্যুশয্যা থেকে ফিরিয়ে আনতে পারেন আপনারাই। সোশ্যালের ওয়াল জুড়ে বিনামূল্যে পাওয়া খবরে 'ফেক' তকমা জুড়ে যাচ্ছে না তো? আসলে পৃথিবীতে কোনও কিছুই 'ফ্রি' নয়। তাই, আপনার দেওয়া একটি টাকাও অক্সিজেন জোগাতে পারে। স্বতন্ত্র সাংবাদিকতার স্বার্থে আপনার স্বল্প অনুদানও মূল্যবান। পাশে থাকুন।.