সিরামকে ১১ কোটির বৃহৎ কোভিশিল্ডের অর্ডার কেন্দ্রের, যা কেবল ভারতের ৪ শতাংশ জনসংখ্যার জন্য

দেশে করোনা ভাইরাসের দ্বিতীয় ওয়েভ মারাত্মকভাবে সংক্রমণ ছড়াচ্ছে। দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমশঃই বেড়ে চলেছে। এরকম পরিস্থিতিতে দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা একেবারেই ভেঙে পড়েছে। টিকাকরণের তৃতীয় পর্যায়ের কর্মসূচি শুরু হলেও ভ্যাকসিন মজুতের অভাবে অনেক রাজ্যই টিকাকরণ শুরু করতে পারেনি। অন্যদিকে নরেন্দ্র মোদী নেতৃত্বাধীন সরকার গত বছরের ডিসেম্বরে বিক্রি শুরু হওয়ার পরই বৃহৎ স্থানীয় ভ্যাকসিন উৎপাদকের থেকে ১১ কোটির চেয়ে বড় ভ্যাকসিনের অর্ডার দেয়নি। এ বিষয়ে অবগত এক ব্যক্তি এই তথ্য জানিয়েছে। এই ১১ কোটি ভ্যাকসিন ভারতের ১৪০ কোটি ভারতীয়র মধ্যে ৪ শতাংশের জন্য যথেষ্ট।

রাজ্য সরাসরি ভ্যাকসিন অর্ডার করবে নির্মাতার থেকে

দেশে ধ্বংসাত্মক দ্বিতীয় ওয়েভের মধ্যে যেখানে শনিবারও ডৈনিক নতুন কেসের তাব্রতা ৪ লক্ষ ছিল সেখানে কেন্দ্রের কাছে ব্যাপকভাবে ভ্যাকসিন মজুতের ঘাটতি রয়েছে। এরই মধ্যে গতমাসে ভ্যাকসিন সরবরাহের দায়িত্ব থেকে হাত তুলে নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র সরকার, যার ফলে ভ্যাকসিন নির্মাতাদের কাছ থেকে সরাসরি ভ্যাকসিন নেওয়ার জন্য রাজ্যগুলির মধ্যে হুড়োহুড়ি ও প্রতিযোগিতার সৃষ্টি হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি এ বিষয়ে জানিয়েছেন যে বিশ্বের বৃহৎ ভ্যাকসিন প্রস্তুতকারক এবং দেশে কোভিড-১৯ শট সরবরাহের প্রধান কারিগর সিরাম ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডিয়া রাজ্যগুলির অর্ডার পূর্ণ করার জন্য প্রতিযোগিতায় নেমেছে। কিন্তু সিরামের উৎপাদন ক্ষমতা একমাসে ৬ থেকে ৭ কোটি, যা জুলাইতে গিয়ে ১০ কোটিতে পৌঁছাবে।

ভারতের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ঝুঁকির মুখে

করোনা ভাইরাসের প্রকোপে বিশ্বের দ্রুততম দেশ হিসাবে ভারতের স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর হাল সত্যিই করুণ, যেখানে হাসপাতালের বেড থেকে অক্সিজেন সহ সবকিছুরই ঘাটতি দেখা দিয়েছে। যদিও এই দেশে বিশ্বের সর্ববৃহৎ ভ্যাকসিন প্রস্তুতকারক সংস্থা রয়েছে, তাও ১৮ বছরের ঊর্ধ্বে নাগরিকদের টিকাকরণের ক্ষেত্রে স্থানীয় সরবরাহে সমস্যা দেখা দেওয়ায় এখনও অনেক রাজ্যই টিকাকরণ শুরু করতে পারেনি, যা নিয়ে সরকারি কর্মকর্তা ও ভ্যাকসিন প্রস্তুতকারদের মধ্যে ইতিমধ্যেই সমস্যা সৃষ্টি হয়ে গিয়েছে।

পুনাওয়ালাকে হুমকি

এই সপ্তাহে ব্রিটেনের এক সংবাদপত্রকে দেওয়া সাক্ষাতকারে সিরামের প্রধান আদর পুনাওয়ালা জানিয়েছেন যে ভ্যাকসিন পেতে মরিয়া প্রভাবশালী মানুষদের থেকে তিনি হুমকি পেয়েছেন। এই অভিযোগ ওঠার পরই উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে। শোনা গিয়েছে এই হুমকি থেকে পালিয়ে পুনাওয়ালা লন্ডন চলে গিয়েছেন। পুনাওয়ালা তাঁর সাক্ষাতকারে এও জানিয়েছেন যে এই দেশে জুলাইয়ের দিকে ভ্যাকসিন ঘাটতির সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি বলেন, ‘প্রত্যেকে সত্যিই এটা অনুভব করেছিল যে এই মহামারিটির জোয়ার পেরিয়ে যেতে পারবে ভারত। কোনও অর্ডার আসেনি, আমাদের মনে হয় না যে ১০০ কোটির বেশি ডোজ বছরে প্রস্তুত করার প্রয়োজন রয়েছে।'‌ সিরামের মুখপাত্র কোভিড ভ্যাকসিন অর্ডার নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। যদিও পুণের সিরাম ইনস্টিটিউটে করোনা প্রতিষেধক কোভিশিল্ড-এর উৎপাদন পুরোদমে চলছে বলে জানিয়েছেন সংস্থার সিইও আদর পুনাওয়ালা। তিনি জানিয়েছেন, কয়েক দিনের মধ্যেই ব্রিটেন থেকে ফিরে এসে উৎপাদনের বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন।

কেন্দ্রের উদাসীনতা

ভ্যাকসিন সংগ্রহে কেন্দ্রের এই আলস্যতা ভারতকে বিশ্বের দ্বিতীয় করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত দেশ হিসাবে তুলে এনেছে। যেখানে কোভিড-সংক্রান্ত মৃত্যুর সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। হাসপাতাল ও শ্মশান উভয় জায়গাতেই উপচে পড়ছে ভিড়। ভ্যাকসিন গুরুতর সংক্রমণ, যার জন্য হাসপাতালে ভর্তি ও মৃত্যু রুখতে পারে এবং স্বাস্থ্য ব্যবস্থার প্রতি চাপও কমাতে পারে। ১৮ বছরের ঊর্ধ্বে নাগরিকদের টিকাকরণ কর্মসূচি শুরু হলেও ভ্যাকসিন মজুত না থাকার কারণে একাধিক রাজ্য টিকা দেওয়া বন্ধ রেখেছে। গত মাসে অনলাইন রেজিস্ট্রেশন খুলে গেলেও, একটা সময়ে দশ হাজার জন নাম নথিভুক্ত করার চেষ্টা করায় তা কিছুক্ষণের জন্য বন্ধ হয়ে যায়।

করোনার নয়া ভ্যারিয়েন্টকেও কাহিল করতে সক্ষম কোভ্যাক্সিন, বলছে নয়া গবেষণা

সরকার দায়ি, সিরাম নয়

সিরাম অ্যাস্ট্রাজেনেকা পিএলসি ও নোভাভ্যাক্স ইঙ্ক কোভিড শট উৎপাদনের লাইসেন্স পেয়েছে। অন্যদিকে, ২টি অনুমোদিত ভ্যাকসিনের মধ্যে ভারত শুরু অ্যাস্ট্রাজেনেকার কোভিশিল্ডকে ব্যবহাররে জন্য অনুমতি দিয়েছে। ভারত বায়োটেকের কোভ্যাকসিনও ভারতে অনুমোদিত এবং রাশিয়ার স্পুটনিক ভি-কেও অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। ভ্যাকসিন ঘাটতি নিয়ে ইতিমধ্যেই সিরামকে রাজনীতিবিদ ও সমালোচকদের দ্বারা নিন্দা করা হয়েছে। যদিও পুনাওয়ালা জানিয়েছেন এই নীতির জন্য সরকার দায়ি, সংস্থা নয়।