দুয়ারে সরকার কর্মসূচি
সরকারের বিরুদ্ধে ছিল অনের বিরোধিতা। ১০ বছরের শাসনকালে সেটাই স্বাভাবিক। মানুষের মধ্যে ক্ষোভও ছিল। কিন্তু সময়মতো ব্যবস্থা নেন প্রশান্ত কিশোর। তার পরামর্শেই ডিসেম্বরের শুরুতেই চালু হয় দুয়ারে সরকার প্রকল্প। বহু মানুষের হাতে কাছে পৌঁছে যায় সরকারের পরিষেবা। যার ফল হাতে নাতে পেয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তথা তৃণমূল কংগ্রেস।
বিজেপি বিরোধী ভোট এক জায়গায়
এবারের ভোট ঘোষণার পরে লড়াইটা হয়ে দাঁড়িয়েছিল তিনপক্ষের। কিন্তু ফল বেরোনোর পরে দেখা যায়, তা দুপক্ষ তৃণমূল এবং বিজেপির মধ্যেই হয়েছে। ফলে বিজেপি বিরোধী ভোট ভাগ হওয়ার যে পরিস্থিতি তৈরির সম্ভাবনা হয়েছিল, তা হয়নি।
মুসলিম ভোট ভাগ না হওয়া
জানুয়ারিতে নতুন গঠিন আইএসএফ-এর সঙ্গে জোট করে বাম এবং কংগ্রেস। এরপর থেকে যেসব জায়গায় সভা করেছেন আব্বাস সিদ্দিকি কিংবা বাম কিংবা অধীর চৌধুরী, সেসব জায়গায় ভিড় হয়েছে। কিন্তু তা ভোটের বাক্সে প্রতিফলিত হয়নি। আর বাম-কংগ্রেস-আব্বাসের জোট মুসলিম ভোটে ভাঙনের যে সম্ভাবনা দেখেছিল তা হয়। ফলাফল পর্যালোচনা করলেই বোঝা যাবে সংখ্যালঘু প্রধান এলাকায় তৃণমূলের জয়ের ব্যবধান হয়েছে বিস্তর।
শীতলকুচির ঘটনার পরে পরিস্থিতি বদল
চতুর্থদফায় শীতলকুচিতে গুলি চালায় কেন্দ্রীয় বাহিনী। কিন্তু যাঁদের মৃত্যু হয় তাঁরা সবাই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের। যার জেরে একদিকে যেমন বিজেপি প্রচার অন্যদিকে তৃণমূলও প্রচার করে তাদের মতো করে। এই পরিস্থিতিতে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষের বাকি চারদফায় তৃণমূল তথা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেই নিরাপদ আশ্রয় বলে মনে করেছে।
বিজেপিকে একমাত্র রুখতে পারবে তৃণমূল
জাতীয় পর্যায়ে বিজেপির সব থেকে বড় বিরোধী কংগ্রেস। সংখ্যালঘু প্রধান জেলা মুর্শিদাবাদের অধীর চৌধুরী প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি। সেই পরিস্থিতিতেও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বহু মানুষের মনে হয়েছে এই রাজ্যে কংগ্রেস কিংবা বামেরা নন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আর তৃণমূলই বিজেপিকে রুখতে পারবে। যা পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে মালদহ আর মুর্শিদাবাদের ফল থেকে।
নো ভোট টু বিজেপি
এবারের সংযুক্ত মোর্চায় থাকা বামদলগুলিকে বাদ দিয়ে একটা বড় অংশের বাম মনস্ক মানুষ সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচার চালিয়েছিলেন নো ভো টু বিজেপি। তাও কাজ করেছে বলে মনে করছে বিশ্লেষকরা। এমন কী রাজ্যে বামফ্রন্টকে সমর্থনকারী অনেক মানুষ এবার তৃণমূলকে ভোট দিয়েছেন, বিজেপিকে আটকাতে। এছাড়াও এমন অনেকে আছেন যাঁরা উপায় না পেয়ে ২০১৯-এর নির্বাচনে বিজেপিকে ভোট দিয়েছিলেন, তাঁদের অনেকে এবার তৃণমূলকে ভোট দিয়েছেন।
মুখ্যমন্ত্রীর কথায় বিশ্বাস
মুখ্যমন্ত্রীর কথা বিশ্বাস করেছেন অধিকাংশ মানুষ। তা সে তাঁর পায়ে আঘাত লাগাই হোক কিংবা করোনা পরিস্থিতিতে নিয়ে বিজেপিকে দোষারোপ করা। পায়ে আঘাত লাগা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অভিযোগ করেছিলেন বিজেপির দিকে। এব্যাপারে বিজেপির আক্রমণও ভালো চোখে নেয়নি সাধারণ মানুষ। অন্যদিকে রাজ্যের করোনা পরিস্থিতি খারাপ হওয়া নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচন কমিশন আর মোদী-শাহকে দায়ী করে গিয়েছেন প্রত্যেক সভাতেই। যা সবাই বিশ্বাস করে নিয়েছেন। কিন্তু বিপরীত দিকে নির্বাচন না থাকা মহারাষ্ট্র, কর্নাটক, দিল্লিতে করোনা পরিস্থিতি সব থেকে বেশি খারাপ হলেও সেখানে নির্বাচন ছিল না। এই বিষয়টি সাধারণ মানুষ বিশ্বাস করেনি।