সরকারি মতে একমাসে মৃত ১০৯ জন, অন্য চিত্র উঠে এল ভোপালের শ্মশান–কবরস্থানের

দেশে করোনা ভাইরাসের ঊর্ধ্বমুখি গ্রাফ ক্রমেই ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছে। দৈনিক সংক্রমণ তিন লক্ষের ওপরে চলে গিয়েছে। এরই মধ্যে মধ্যপ্রদেশের ভোপালে এপ্রিল মাসে কোভিডে মৃত্যু হয়েছে ১০৯ জনের। তবে এক সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম ভোপালের তিন শ্মশান ও কবরস্থানে কোভিড মৃত্যুর সংখ্যা খতিয়ে দেখে অন্য চিত্র উঠে এসেছে। ওই একমাসে দেখা গিয়েছে ১–৩০ এপ্রিলে কোভিড বিধি মেনে ১০৯টি নয় বরং শেষকৃত্য হয়েছে ২,৫৬৭টি দেহের।

মৃতের সংখ্যা গোপন করছে রাজ্য

দেশের করোনার দ্বিতীয় ওয়েভের মহামারিতে যাঁদের মৃত্যু হচ্ছে সরকারিভাবে খুব অল্প সংখ্যকের কথাই জানা যাচ্ছে, অথচ দেশের একাধিক শ্মশানে কোভিড বিধি মেনে সন্দেহজনর বা নিশ্চিত করোনা রোগীদের দাহকার্য হচ্ছে। সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম তিনদিন আগেই দিল্লিতে করোনায় মৃত্যু নিয়ে রিপোর্ট প্রকাশ করেছিল। যেখানে দেখা গিয়েছে যে ১৮-২৭ এপ্রিল মিউনিসিপ্যাল পরিচালিত শ্মশান ও কবরস্থানগুলিতে ৩,০৪৯ জনের বেশি কোভিড দেহ পোড়ানো ও সমাধিস্থ করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, প্রায় একই সংখ্যার কোভিড সন্দেহ দেহর (‌৩৯০৯)‌ শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়েছে।

কোভিডে মৃতদেহের চাপ শ্মশান–কবরস্থানে

ভোপালে ৬টি শ্মশান ও ৪টে কবরস্থান। কোভিড সুবিধা রয়েছে ভদভদা বিশ্রাম ঘাট, সুভাষ নগর বিশ্রাম ঘাট, বৈরাগ ঘাট ও ঝাড়া কবরস্থানে। অন্য দুই শ্মশান ঘাটে মৃতদেহের চাপ বেড়ে যাওযার ফলে গত ২০ এপ্রিল তালিকায় নতুন করে বৈরাগ ঘাটকে যোগ করা হয়। শ্মশান ও কবরস্থানের কর্তৃপক্ষরা জানিয়েছে যে তারা মৃতদেহের ভিড় সামলাতে তাদের রীতিমতো লড়াই করতে হচ্ছে। সুভাষ নগর বিশ্রাম ঘাটের ম্যানেজার সোমরাজ সুখওয়ানি বলেন, ‘‌আমাদের শ্মশানে গ্লাভস ও পিপিই কিট সেভাবে নেই এবং আমাদের কর্মীরা দিনরাত্রি কাজ করছেন। মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন অন্তত এটুকু নিশ্চিত করুক যে তারা শ্মশানে স্যানিটাইজেশন ও পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতার ভার নেবে।'‌

করোনায় মৃত্যু আরও বাড়বে

ঝাড়া কবরস্থান কমিটির সভাপতি রেহান গোল্ডেন বলেন, ‘‌আমাদের কবরস্থানে জায়গাও নেই এবং লোকবলও কম। যেভাবে দেহ আসছে পরপর তাতে করে আটজন কর্মীর পক্ষে কবর খোঁড়া সম্ভব হয়ে উঠছে না। কবরস্থান কমিটি আগাম কবর খননের জন্য সপ্তাহে ২ বার জেসিবি পায়, যা পরে দেহ আসার পর ছেলেরা সেটা সমান করে দেয়।'‌ তিনি এও বলেন, ‘‌এপ্রিলে কোভিড-নয় এমন দেহের সংখ্যা ছিল ১৭০, যা খুবই অস্বাভাবিক সংখ্যা, আমাদের মাসে গড়ে ৬০টি করে দেহ সমাধিস্থ করা হয়। আমরা আশঙ্কা করছি স্বাভাবিক মৃত্যুর চেয়ে কোভিডে মৃত্যুর সংখ্যা আরো বাড়বে।'‌ এই তীব্রতার কথা স্বীকার করে ভদভদা বিশ্রাম ঘাটের সভাপতি অরুণ চৌধুরি জানিয়েছেন যে তাঁদের শ্মশানে কোভিড দেহর জন্য আলাদা করে জায়গা করা রয়েছে, এখানেই দেহগুলি কোভিড বিধি মেনে প্লাস্টিকে করে নিয়ে এসে শুইয়ে রাখা হয়।

রাজ্য সরকারের বক্তব্য

তিনটে শ্মশান ও কবরস্থানের মৃতদের সংখ্যা নিয়ে জনস্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী ডঃ প্রভুরাম চৌধুরি বলেন, ‘‌রাজ্য সরকারের কোনও ইচ্ছা নেই মৃতের সংখ্যা গোপন করার। অনেক মৃত্যুই কোভিড সন্দেহ হওয়ায় কোভিড বিধি মেনে দাহকার্য হচ্ছে। আগেও এ ধরনের কেস সামনে এসেছে।'‌ অতিরিক্ত মুখ্য সচিব (‌স্বাস্থ্য)‌ মহম্মদ সুলেমান বলেন, ‘প্রকৃতপক্ষে, যদি মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে থাকে, তবে এটি রাজ্যবাসীর কাছে জানানো আরও গুরুত্বপূর্ণ, যাতে তারা টিকা নিতে পারে। এখনও পর্যন্ত কোভিড সেবা কেন্দ্রে, প্রধানত আইসোলেশনে মাত্র ২৬টি বেড দখল রয়েছে। ‌তবে মৃত্যুর সংখ্যা গোপন করা হয়নি, সরকারের কাছে যেমন যেমন তথ্য এসেছে সেরকমই প্রকাশ করা হয়েছে।'‌

প্রতীকী ছবি