মমতা না শুভেন্দু- কে জিতবেন হাইভোল্টেজ নন্দীগ্রামে, বুথ ফেরত সমীক্ষা ও কিছু অঙ্ক

২০২১-এর নির্বাচনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বনাম শুভেন্দু অধিকারীর সম্মুখ সমরের দিকে নজর গোটা দেশের। নন্দীগ্রামের এই নির্বাচনই বাংলার ভবিষ্যৎ ঠিক করে দেবে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। এখন এই যুদ্ধ জিতবে কে, কান পাতলই শোনা যাচ্ছে আলোচনা। যিনিই জিতুন, তিনিই হবেন বাংলার রাজনীতিতে প্রধান কাণ্ডারি।

সমীক্ষা দেখে হতাশ হবেন না! গণনা শেষ না হওয়া পর্যন্ত টেবিলে থাকুন, বার্তা আলুমিদ্দিনের ম্যানেজারদের

আলোচনা, কে জিতবেন প্রেস্টিজ ফাইটে

এক্ষেত্রে আরও একটি প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও শুভেন্দু অধিকারীর মধ্যে যিনি জিতবেন, তাঁর দলই কি বাংলায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে। নাকি যিনি জিতবেন তাঁকে বিরোধী শিবিরের নেতা হয়েই থাকতে হবে! তা নিয়েও থেমে নেই চর্চা। কিন্তু সবথেকে বেশি আলোচনা কে জিতবেন প্রেস্টিজ ফাইটে।

মমতা-শুভেন্দু ছিলেন নন্দীগ্রামে পরিপূরক

বুথ ফেরত সমীক্ষা নন্দীগ্রামের হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেই এগিয়ে রেখেছে। কিন্তু কোন অঙ্কে, তা বলা মুশকিল। দুই নেতা বা নেত্রীই ছিলেন একে অপরের পরিপূরক। নন্দীগ্রাম আন্দোলন যেমন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে পরিবর্তনের সরকারের পথ প্রশস্ত করেছিল, তেমনই শুভেন্দুর রাজনৈতিক ভিত তৈরি করে দিয়েছিল নন্দীগ্রাম।

মমতা নন্দীগ্রাম দেখেছেন শুভেন্দুর চোখ দিয়ে

নন্দীগ্রামে আন্দোলনের পর শুভেন্দু অধিকারীর হাত ধরেই তৃণমূল সংগঠনকে শক্তিশালী করে তুলেছিল। মোট কথা নন্দীগ্রামে মমতা নির্ভর করতেন শুভেন্দুর উপর। শুভেন্দু দলে থাকাকালীন কোনওদিন নন্দীগ্রামের দিকে ফিরে তাকাননি। তিনি নন্দীগ্রাম তথা পূর্ব মেদিনীপুরকে দেখে এসেছেন শুভেন্দু তথা অধিকারীদের চোখ দিয়েই।

শুভেন্দু শত্রুশিবিরে, তৃণমূল শিবির দু-ভাগে ভাগ

সেই শুভেন্দু অধিকারী ২০২১ ভোটের আগে তৃণমূল ছেড়ে শত্রু-শিবিরে যোগ দেওয়ার পর স্বাভাবিকভাবে তৃণমূল শিবির দু-ভাগে ভাগ হয়ে গিয়েছিল। একদিকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অন্যদিকে শুভেন্দু। এরই মধ্যে নন্দীগ্রাম কার, তা নিয়ে যুদ্ধের দামামা বেজে যায়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নন্দীগ্রামে নিজের নাম প্রার্থী হিসেবে ঘোষণার পর শুভেন্দুর সঙ্গে সম্মুখ সমর ছিল সময়ের অপেক্ষা।

বুথ ফেরত সমীক্ষার আভাসে মমতা এগিয়ে

সেইমতো মমতা বনাম শুভেন্দু যুদ্ধ হয়েছে নন্দীগ্রামে। দুই নেতৃত্বই দাবি করেছে, তাঁরা জিতছেন নন্দীগ্রাম-ব্যাটল। এরপর বুথ ফেরত সমীক্ষা আভাস দিয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একটু এগিয়ে থাকছেন নন্দীগ্রামে। এই অবস্থায় গণনার একদিন আগে টানটান উত্তেজনা। আর দু-পক্ষই নিজের নিজের সমর্থনে যুক্তি সাজাচ্ছেন।

ভোট মেরুকরণের রাজনীতি নন্দীগ্রামে

নন্দীগ্রামের ভোটযুদ্ধের ফল নিয়ে কাটাছেঁড়া করতে গিয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, নন্দীগ্রামে ২ লক্ষ ৭ হাজার ভোটের মধ্যে ১.৩৭ লক্ষ হিন্দু ভোট রয়েছে। আর সংখ্যালঘু মুসলিম ভোট ৭০ হাজারের মতো। শুভেন্দু প্রার্থী হওয়ার আগে থেকেই হিন্দু ভোটকে এক করতে মেরুকরণের রাস্তা নিয়েছিলেন। তৃণমূলের আশা ৭০ হাজার মুসলিম ভোট।

সংখ্যালঘু ভোট যেহেতু তৃণমূলের দিকে

তৃণমূল মনে করছে, এই ভোটের সিংহভাগ তাদের দিকে আসবে। বিজেপির একাংশও মনে করছে আইএসএফ এই কেন্দ্রে প্রার্থী দেবে বলে সরে আসে। সিপিএমকে এই আসন ছেড়ে দেওয়া হয়। এখানেই গোপন আঁতাত স্পষ্ট। আইএসএফ প্রার্থী হলে বেশি সংখ্যালঘু ভোট পেত, তাহলে তৃণমূলের ভোট কাটত। অর্থাৎ বিজেপিও মনে করছে সংখ্যালঘু ভোট তৃণমূলের দিকে।

বিজেপিকে হিন্দু ভোটের তিন-চতুর্থাংশ পেতে হবে

তাই যদি হয়, বিজেপিকে হিন্দু ভোটের তিন-চতুর্থাংশ পেতে হবে। তবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে টেক্কা দিতে পারবেন তিনি। বিজেপি অবশ্য ভরসা রেখেছে, নন্দীগ্রামের মাটিকে হাতের তালুর মতো চেনা শুভেন্দু হিন্দু ভোটকে এক করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে হারিয়ে দেবেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অপরাজেয় তকমা ঘুচে যাবে এবার।

Know all about
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।