দেশে ঊর্ধ্বমুখি গ্রাফ কোভিডের, একা এপ্রিলেই ৬৬ লক্ষের বেশি করোনা কেস ভারতে

দেশে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ বৃদ্ধি প্রতিদিনই রেকর্ড গড়ছে। ভারতে শুধু এপ্রিলেই কোভিড–১৯ কেস রিপোর্ট হয়েছে ৬৬ লক্ষের বেশি। একই মাসে মোট নতুন কেসের যা সংখ্যা, তা আগের ৬ মাসের সংখ্যার সঙ্গে সমান। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে ৩.‌৮৬ লক্ষের বেশি নতুন কেস সনাক্ত হয়েছে। কোভিড–১৯ কেস ১,২১,৪৯,৩৩৫ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২০২১ সালের মার্চ মাসের শেষে গিয়ে দাঁড়িয়েছে ১,৮৭,৬৭,৯৬২টি।

ভারতে করেনা ভয়াবহ, সংক্রমণের আতঙ্কে ভারতীয়দের আমেরিকায় প্রবেশে নিয়ন্ত্রণ জারি করল বাইডেন প্রশাসন

এপ্রিল থেকে বৃদ্ধি সংক্রমণ

এর আগে করোনার বোঝা ৬৬ লক্ষের ওপর যেতে ২২ সেপ্টেম্বর থেকে ছয় মাসের বেশি সময় লেগেছিল। স্বাস্থ্য মন্ত্রক জানিয়েছে যে এপ্রিল থেকে করোনা মামলার সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। ৫ এপ্রিলে ভারতে একদিনে নতুন কেস রিপোর্ট হয় এক লক্ষের বেশি। এরপর ১৫ এপ্রিল থেকে ২২ এপ্রিল দৈনিক করোনা কেস ২ লক্ষ অতিক্রম করে এবং এর পরের দিনগুলিতে তা তিন লক্ষের বেশি দেখা যায়। মহারাষ্ট্র, দিল্লি, উত্তরপ্রদেশ, ছত্তিশগড়, গুজরাত, ঝাড়খণ্ড, পাঞ্জাব, মধ্যপ্রদেশ এবং রাজস্থান গত চার সপ্তাহে উদ্বেগের রাজ্য হিসাবে সামনে এসেছে বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের যুগ্ম সচিব লভ আগরওয়াল।

ফেব্রুয়ারিতে অবদান

তিনি জানিয়েছেন, ৪-১৭ ফেব্রুয়ারি করোনার ৪৬ শতাংশ কেস এসেছে কেরল থেকে, ২৫.‌৬ শতাংশ এসেছে মহারাষ্ট্র থেকে এবং ৪.‌২ শতাংশ এসেছে তামিলনাড়ু থেকে। বাকি ২৪.‌৪ শতাংশ করোনা কেস দেশের অন্যান্য জায়গা থেকে চিহ্নিত হয়েছে। এছাড়াও দেশের মোট সংক্রমণে ১৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ৩ মার্চ মহারাষ্ট্র ৪৮.‌৫ শতাংশ, কেরল ২৫.‌৯ শতাংশ এবং পাঞ্জাব ৩.‌৩ শতাংশ এবং বাকি দেশ থেকে ২২.‌৩ শতাংশ কেসের অবদান রয়েছে।

মার্চের অবদান

মার্চের ৪-১৭ মহারাষ্ট্র ৫৯.‌৫ শতাংশ, কেরল ১০ শতাংশ ও পাঞ্জাব ৩.‌৩ শতাংশ এবং বাকি দেশ থেকে ২৪.‌৬ শতাংশ কেস মোট কেসে অবদান রেখেছে। ১৮-৩১ মার্চ মহারাষ্ট্র মোট সংক্রমণের ৬০ শতাংশ, পাঞ্জাব ৫ শতাংশ এবং কর্নাটক ৪.‌৩ শতাংশ অবদান রেখেছে। বাকি দেশ থেকে ৩০ শতাংশ অবদান পাওয়া গিয়েছে মোট সংক্রমণে।

এপ্রিলে অবদান

এপ্রিলের ১-১৪ দেশের মোট সংক্রমণে মহারাষ্ট্রের অবদান ছিল ৪৩.‌২ শতাংশ, এরপর ছত্তিশগড় (‌৭.‌৪ শতাংশ)‌ এবং উত্তরপ্রদেশ (‌৬.‌২ শতাংশ)‌। এছাড়া ৪৩.‌১ শতাংশ কেসের অবদান বাকি দেশের। ১৫-২৮ এপ্রিলে মহারাষ্ট্র ২১.‌৬ শতাংশ, উত্তরপ্রদেশ (‌১০.‌৪ শতাংশ)‌ এবং দিল্লি (‌৭.‌৮ শতাংশ)‌ অবদান রয়েছে। এই সময়ের মধ্যে বাকি দেশের অবদান ৬০.‌২ শতাংশ।

মৃত্যু সংখ্যা কমলেও বেড়েছে আক্রান্তের সংখ্যা

আগরওয়াল জানিয়েছেন যে গত বছরের সেপ্টেম্বরে কোভিড-১৯ মৃত্যু দাঁড়িয়েছিল ১,২৯০-তে, এ বছরের মার্চে তা হ্রাস পেয়ে ৭৭-এ থেমেছে। তবে এপ্রিলেই তা বৃদ্ধি পেয়ে ৩,৪৯৮-তে চলে গিয়েছে। মোট মৃত্যুর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি অবদান রয়েছে মহারাষ্ট্র, কেল ও পাঞ্জাবের। আগরওয়াল বলেন, ‘‌আমরা সেপ্টেম্বরে করোনা কেস বৃদ্ধি দেখি। এরপর তা আবার দেখা যায় এপ্রিলে। তৃতীয় প্রবণতা অন্যান্য দেশেও দেখা গিয়েছে। কিছু দেশে তৃতীয় ওয়েভও দেখা যাচ্ছে।'‌ তিনি আরও বলেন, ‘‌সেপ্টেম্বরে এমন অনেকগুলি রাজ্য যা শীর্ষে দাঁড়িয়েছিল তারা উচ্চ সংখ্যার রেকর্ড করেছে এবং এটি স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে চাপের মুখে ফেলেছে এবং এটি নিয়ে কাজ করা খুব জরুরি।'‌ আগরওয়াল উদাহরণ স্বরূপ জানান যে মহারাষ্ট্রে সেপ্টেম্বরে ২৪,৮৮৬টি কেস সনাক্ত হয় যা এপ্রিলে এসে বাড়ে ৬৮,৬৩১। যা ২.‌৮ গুণ বেশি। একই জিনিস দেখা যায় উত্তরপ্রদেশেও, এখানে করোনা কেস সেপ্টেম্বরের তুলনায় এপ্রিলে ৫.‌৪ গুণ বেশি, ছত্তিশগড়ে ৪.‌৫ গুণ বেশি, দিল্লিতে ৩.‌৩ গুণ বেশি, রাজস্থানে ৫ গুণ এবং অন্ধ্রপ্রদেশে ১.‌৪ গুণ বেশি।