সর্দার-পুত্র
হরপ্রীত ব্রারের জন্ম পাঞ্জাবের মোগায় ১৯৯৫ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর। জিকারপুরের হরপ্রীত পাঞ্জাব পুলিশের ড্রাইভার মোহিন্দর সিংয়ের পুত্র। পাঞ্জাব পুলিশের কাজে যোগদানের আগে ২৬ বছর সেনাবাহিনীতেও ছিলেন হরপ্রীতের বাবা। সর্দার-পুত্র হরপ্রীত বাজার যাওয়ার সময় একটি ক্রিকেট আকাদেমি দেখে ক্রিকেট খেলার প্রতি আগ্রহী হন। তাঁর আদর্শ যুবরাজ সিং। ক্লাব ক্রিকেটের ম্যাচে এক ওভারে পাঁচটি ছক্কা মারার নজির রয়েছে ব্রারের।
(ছবি- বিসিসিআই/আইপিএল)
নাছোড়বান্দা লড়াই
অনূর্ধ্ব ১৬ ক্রিকেটের পর অনূর্ধ্ব ১৯ বা অনূর্ধ্ব ২৩ পাঞ্জাব দলে জায়গা করতে পারছিলেন না। জুনিয়র নির্বাচকদের সবুজ সঙ্কেত না পেয়ে হতাশা গ্রাস করছিল ব্রারকে। তবে পারফরম্যান্সের ধারাবাহিকতা বজায় রাখায় জোর দেন। ২৩ বছর বয়সে সুযোগ পান পাঞ্জাবের অনূর্ধ্ব ২৩ দলে। কিংস ইলেভেন পাঞ্জাব দলের ট্রায়ালে চারবার এসে চারবার প্রত্যাখ্যাতও হয়েছিলেন। সবমিলিয়ে অবস্থা এমন জায়গায় গিয়েছিল যে ক্রিকেট ছেড়ে উচ্চশিক্ষার জন্য কানাডায় দিদির কাছে চলে যাবেন বলেও ঠিক করেন।
(ছবি- বিসিসিআই/আইপিএল)
ভাগ্য ফিরল মোহালিতে
পাঞ্জাবের আন্তঃ জেলা ক্রিকেট টুর্নামেন্ট কাতোচ শিল্ডে রোপরের হয়ে খেলতেন হরপ্রীত। ৪০ উইকেটও রয়েছে রোপরের হয়ে। যদিও সেই দলের অবনমন হওয়ায় পরে মোহালিতে চলে আসেন হরপ্রীত। পাঞ্জাবের অলরাউন্ডার গুরকিরাত সিং মান তাঁকে প্রস্তাব দিয়েছিলেন মোহালির হয়ে খেলার জন্য। দুই ম্যাচে নয় উইকেট নিয়ে নজর কাড়েন। নির্বাচকদের চোখে পড়ে ৬ ফুট ২ ইঞ্চির অলরাউন্ডার পাঞ্জাব অনূর্ধ্ব ২৩ দলে সুযোগ পান। কর্নেল সি কে নাইডু ট্রফিতে ১৮টি উইকেট নেন, ৫ ম্যাচে ২০৬ রানও করেন।
(ছবি- বিসিসিআই/আইপিএল)
আইপিএলের দরজা খুলল
বারবার প্রত্যাখ্যাত হয়েও হরপ্রীত হাল ছাড়েননি কিংস ইলেভেন পাঞ্জাব দলে ঢোকার। চারবার ট্রায়ালে অংশ নেওয়ার পর অবশেষে ২০১৯ সালে তাঁকে ২০ লক্ষ টাকায় নেয় পাঞ্জাবের ফ্র্যাঞ্চাইজি। আইপিএল নিলামে যখন সুযোগ পান তখন বাবা মোহিন্দর সিং চোখের জল ধরে রাখতে পারেননি। হরপ্রীত তখন জয়পুরে রাজস্থানের বিরুদ্ধে পাঞ্জাবের হয়ে অনূর্ধ্ব ২৩ ম্যাচ খেলছিলেন। ২০১৯ সালে ২টি ম্যাচ খেলেন, মোট পাঁচ ওভার বল করে ৪৮ রান দেন। দিল্লি ক্যাপিটালসের বিরুদ্ধে ২৪ রান খরচ করে কোনও উইকেট না পাওয়াই ছিল আইপিএলে এতদিন তাঁর সেরা পারফরম্যান্স। গত বছর আইপিএলে একটি ম্যাচেই সুযোগ পান। চেন্নাই সুপার কিংসের বিরুদ্ধে চার ওভারে দেন ৪১ রান।
(ছবি- বিসিসিআই/আইপিএল)
চার নম্বর ম্যাচেই সেরা
২০১০ সাল থেকে ভারতী ভিজের কাছে প্রশিক্ষণ নেন হরপ্রীত। বল ঘোরানোর পাশাপাশি উচ্চতাকে কাজে লাগিয়ে পিচ থেকে বাউন্স আদায় করতে পারেন। ঠিক এই গুণের জন্যই রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোরের বিরুদ্ধে এই ফিঙ্গারস্পিনারকে খেলানোর পরিকল্পনা হয় বলে ম্যাচের শেষে জানিয়েছেন লোকেশ রাহুল। অর্শদীপ সিংয়ের জায়গায় প্রথম একাদশে এসে অধিনায়ক ও টিম ম্যানেজমেন্টের আস্থার মর্যাদা দারুণভাবেই দিয়েছেন হরপ্রীত। শক্তিশালী আরসিবি-র ব্যাটিং লাইন আপের বিরুদ্ধে অনবদ্য পারফর্ম করে, ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে, আইপিএলে নিজের চতুর্থ ম্যাচেই পেলেন সেরার পুরস্কার। চার ওভারে একটি মেডেন-সহ ১৯ রানের বিনিময়ে হরপ্রীতের ঝুলিতে তিনটি বিগ উইকেট!
(ছবি- বিসিসিআই/আইপিএল)
ঘরোয়া ক্রিকেটেও সফল
২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে ভারত বনাম বাংলাদেশের অনূর্ধ্ব ২৩-এর ম্যাচে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অভিষেকের পর এখনও অবধি চারটি ম্যাচ খেলেছেন। উইকেট রয়েছে পাঁচটি। এবারের বিজয় হাজারে ট্রফিতে বিদর্ভের বিরুদ্ধেই প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে তাঁর সেরা বোলিং ফিগার, ৪৩ রানের বিনিময়ে চার উইকেট। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ওই ম্যাচেই অপরাজিত ২৪ তাঁর কেরিয়ারের সেরা। ২০টি টি ২০-তে ২৪টি উইকেট রয়েছে। সেরা বোলিং চলতি বছরের সৈয়দ মুস্তাক আলি টি ২০-তে, রেলওয়েজের বিরুদ্ধে ২২ রানের বিনিময়ে চার উইকেট। ব্যাট হাতে সেরা আরসিবি ম্যাচে অপরাজিত ২৫।
(ছবি- বিসিসিআই/আইপিএল)
ছক্কা খেয়েও ঘাবড়াননি
এবারের আইপিএলে হরপ্রীতের প্রথম ম্যাচে প্রথম বলেই ছক্কা হাঁকিয়েছিলেন বিরাট কোহলি। তারপর সেই বিরাটকে ফিরিয়েই আইপিএলে প্রথম উইকেট পেয়ে যারপরনাই আনন্দিত হরপ্রীত। তিনি বলেন, ওই ছক্কার পর নিজেকে বলেছিলেন ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ আসবে। বিরাট কোহলির উইকেটটাই তাই আমার কাছে স্পেশ্যাল। ওই উইকেটটা পাওয়ার পরই আত্মবিশ্বাস বেড়ে যায়। হরপ্রীত আরও বলেন, বাবা-মায়ের স্বপ্নপূরণ করতে পেরেছি। আমি নিশ্চিত বাড়িতেও সকলে আজ খুশি। তাঁদের জন্যই আমার এই জায়গায় আসতে পারা। আইপিএলের আকাশে নতুন তারার আবির্ভাবে খুশি প্রাক্তন ও বর্তমান ক্রিকেটার থেকে শুরু করে ধারাভাষ্যকাররাও। আইডল যুবরাজ সিং ও হরভজন সিং টুইটে ব্রারকে তাঁর পারফরম্যান্সের জন্য প্রশংসায় ভরিয়ে দিয়ে উৎসাহিত করেছেন। যুবি বলেছেন, রাজ্য ক্রিকেটেও সমালোচকদের জবাব এই পারফরম্যান্স! সর্বোপরি বিরাট হাত মিলিয়ে উৎসাহিত করেছেন। ধারাবাহিকতা বজায় রাখাই এখন লক্ষ্য সর্দার-পুত্র ব্রারের।
(ছবি- বিসিসিআই/আইপিএল)