সৌপ্তিক বন্দ্যোপাধ্যায় : ফাঁসির আগে চমকে দেওয়া ভবিষ্যদ্বাণী করে গিয়েছিলেন তরুণ বিপ্লবী। আর অদ্ভুত, মিলে গিয়েছিল সেই ভবিষ্যদ্বাণী। ইংরেজ জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের পরিণতি হয়েছিল চরম।

ঘটনা ১২ জানুয়ারির। কিন্তু ঘটনার পরিপ্রেক্ষিত জড়িয়ে ৩০ এপ্রিলের সঙ্গে। ১৯৩৩ সালের সেই ভোরবেলায় ঘড়িতে বাজছে সাড়ে পাঁচটা। ঢং-ঢং, শব্দ হল। একবারই। মৃত্যু ঘন্টা। প্রদ্যোৎ কুমার ভট্টাচার্য উঠে দাঁড়াল। বছর কুড়ির যুবক। সে জানে আর কিছুক্ষণ পরেই সে অতীত হয়ে যাবে। তবু কোনও ভয়ের ছাপ নেই চোখে মুখে। কনকনে ঠান্ডায় স্নান সেরে সে তৈরি। তৈরি মৃত্যুকে বরণ করে নেওয়ার জন্য। হয়ে গিয়েছে গীতাপাঠ। ছ’টা বাজার কিছুক্ষণ আগে প্রদ্যোৎকে নিয়ে যাওয়া হয় ফাঁসির মঞ্চে। জেলের বিভিন্ন সেল থেকে তখন উঠছে ‘প্রদ্যোৎ’ ধ্বনি। তাঁর সামনে এসে দাঁড়ালেন নয়া জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বার্জ। পুরনোকে তো খতম করেছেন বিপ্লবী প্রদ্যোৎই। নতুন না এসে আর যায় কোথায়? তিনিও পড়লেন ‘বাঘের’ মুখেই। বার্জ যেই না জিজ্ঞাসা করল, ‘Are you ready?’ শান্ত প্রদ্যোৎত্তর। বললেন , ‘এক মিনিট.আমি কিছু বলতে চাই।’ অনুমতি মিলতেই যুবক হাসতে হাসতে বলেন এক ভয়ংকর কথা। এক ভবিষ্যদ্বাণী। শুনে চমকে যান ম্যাজিস্ট্রেট।

কী এমন ভবিষ্যদ্বাণী যে চমকে গেলেন ব্রিটিশ ম্যাজিস্ট্রেট? কেউ যদি মৃত্যুর সামনে দাঁড়িয়ে অন্যের মৃত্যুর ভবিষ্যদ্বাণী করে চমকে যাওয়াটাই স্বাভাবিক। প্রদ্যোৎ বলেছিলেন , ‘We are determined, Mr. Burge, not to allow any European to remain at Midnapore. Yours is the next turn. Get yourself ready.’ অর্থাৎ আমরা ঠিক করে নিয়েছি মেদিনীপুরে আর কোনও ইউরোপিয় থাকবে না। এর পরেই লাইনে আছেন আপনি। তৈরি থাকুন।

এরপরেই বলেন, ‘I am not afraid of death. Each drop of my blood will give birth to hundreds of Prodyots in all houses of Bengal. Do your work please.’ অর্থাৎ আমি মৃত্যুকে ভয় পাই না। আমার প্রত্যেক বিন্দু রক্তে বাংলার ঘরে ঘরে জন্ম দেবে আমার মতোই শত শত প্রদ্যোৎ। আপনি আপনার কাজ করুন। কালো কাপড়ে ঢাকল মুখ। তীব্র কণ্ঠে বললেন, ‘বন্দে মাতরম’। শেষ বারের মতো। তারপর?

ঠিক মাস সাতেক বাদ। ফলে গেল প্রদ্যোতের ভবিষ্যদ্বাণী। নতুন ম্যাজিস্ট্রেট বার্জকে হত্যা করেন বিপ্লবীরা।

ফেরা যাক ৩০ এপ্রিল ১৯৩২-এ। জেলা বোর্ডের অফিসে মিটিংয়ে করছেন কালেক্টর ডগলাস । আঁটোসাঁটো নিরাপত্তা। ডগলাসের নিজের হাতেও বন্দুক। ভয় ছিল সম্ভবত। জানতেন যে কোনও সময়ে হামলা হতে পারে। সেদিন সেই মুহূর্তেই হবে কে জানত? জানত প্রদ্যোত আর প্রভাংশু।

লাফিয়ে এসে ডগলাসকে গুলি করলেন দু’জন। গুলিতে শেষ ডগলাস। মেরেই ছুট। প্রভাংশু ছুটন্ত অবস্থাতেই চালালেন গুলি। ছত্রভঙ্গ ইংরেজরা। নিমেষে উধাও। প্রদ্যোতের গুলি চলেনি। দৌড়নোর সময় ধুতিতে জড়িয়ে পড়ে যায়। ধরে ফেলে পুলিশ।

অবস্থাপন্ন পরিবারের ছেলে প্রদ্যোৎ। পড়াশোনাতেও ভালো। প্রবেশিকা পরীক্ষায় ফার্স্ট ডিভিশন। এমন ছেলে বদলে গেল কলেজে উঠেই। দীনেশ গুপ্তের সংস্পর্শে আসতেই বদলে যায় জীবন। ফাঁসি, দ্বীপান্তর, অকথ্য অত্যাচার সব কিছুকে তুচ্ছ মনে করেই নেমে পড়ে আন্দোলনে।

তারপর ডগলাস হত্যা। গ্রেফতার। মার খেতে খেতে অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছে ছেলে। তবু ভাঙা যায়নি তাকে। এবার বিচারের পালা। অনেক চেষ্টার পরেও দুই ইংরেজ বিচারপতি মৃত্যুদন্ড বহাল রাখে। তারপর ফাঁসির মঞ্চে ওই চমকে দেওয়া ভবিষ্যদ্বাণী।

লাল-নীল-গেরুয়া...! 'রঙ' ছাড়া সংবাদ খুঁজে পাওয়া কঠিন। কোন খবরটা 'খাচ্ছে'? সেটাই কি শেষ কথা? নাকি আসল সত্যিটার নাম 'সংবাদ'! 'ব্রেকিং' আর প্রাইম টাইমের পিছনে দৌড়তে গিয়ে দেওয়ালে পিঠ ঠেকেছে সত্যিকারের সাংবাদিকতার। অর্থ আর চোখ রাঙানিতে হাত বাঁধা সাংবাদিকদের। কিন্তু, গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভে 'রঙ' লাগানোয় বিশ্বাসী নই আমরা। আর মৃত্যুশয্যা থেকে ফিরিয়ে আনতে পারেন আপনারাই। সোশ্যালের ওয়াল জুড়ে বিনামূল্যে পাওয়া খবরে 'ফেক' তকমা জুড়ে যাচ্ছে না তো? আসলে পৃথিবীতে কোনও কিছুই 'ফ্রি' নয়। তাই, আপনার দেওয়া একটি টাকাও অক্সিজেন জোগাতে পারে। স্বতন্ত্র সাংবাদিকতার স্বার্থে আপনার স্বল্প অনুদানও মূল্যবান। পাশে থাকুন।.