অক্সিজেনের অভাবের মাঝেই মুম্বই জুড়ে ভেন্টিলেটরের আকাল, চূড়ান্ত ভোগান্তি কোভিড রোগীদের

দেশজুড়ে করোনা ভাইরাসের মারাত্মক দাপটে সংক্রমণ বাড়ছে হু হু করে। তারই মধ্যে গোটা দেশের স্বাস্থ্য পরিকাঠামো একেবারে ধসে যাওয়ার মুখে। নেই বেড, অক্সিজেন শূন্য হাসপাতাল, অথচ করোনা রোগীর চাপ দিনের পর দিন বেড়েই চলেছে। এরই মধ্যে মুম্বই ও সংলগ্ন মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন এলাকায় রবিবার ভেন্টিলেটরের হাহাকার পড়ে গিয়েছিল, যার জেরে একাধির বড় বড় সরকারি হাসপাতাল ভেন্টিলেটরের অভাবে রোগীদের দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করিয়ে রাখতে বাধ্য হয়।

সব আইসিইউ বেড ভর্তি

মীরা ভায়ান্ডার মিউনিসপ্যাল কর্পোরেশন হাসপাতালে ৪০টি আইসিইউ বেড রয়েছে বলে জানিয়েছেন ডেপুটি মিউনিসিপ্যাল কমিশন শম্ভাজি পনপাত্তে। তিনি বলেন, ‘‌এখন সব আইসিইউ বেড ভর্তি রয়েছে।'‌ ভসাই বিহার মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশনের অন্তর্গত ১৭টি কোভিড হাসপাতাল রয়েছে। বেড বরাদ্দের দায়িত্বে থাকা অবিনাশ গুঞ্জলকার বলেন, ‘‌আমাদের সব আইসিইউ ও ভেন্টিলেটর বেড ভর্তি রয়েছে। আমি রবিবার দুপুরেই শেষবারের মতো দেখেছি।'‌

আইসিইউ বেডের অভাবে মৃত্যু

আইসিইউ ওয়ার্ডে অক্সিজেনের অভাবে মৃত্যু হয় জগদীশ বাগাড়িয়ার, তিনি ভর্তি ছিলেন মীরা রোডের ম্যাক্স হাসপাতালে। কোভিড চিকিৎসার সব কঠিন পরিস্থিতি এরই মধ্যে দেখে ফেলেছেন জগদীশের দাদা নিমেশ বাগাড়িয়া। তিনি বলেন, ‘‌ভাইয়ের মৃত্যুর ২দিন আগে হাসপাতাল জানায় যে এখানে অক্সিজেন নেই এবং আমাদের অন্য হাসপাতাল দেখতে বলে।'‌ শুক্রবার জগদীশকে কান্দিভালির সেভেন স্টার হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। রবিবার এই হাসপাতালও জানায় যে অন্য হাসপাতালে আইসিইউ দেখে নেওয়ার জন্য। নিমেশ বাগাড়িয়া আরো বলেন, ‘‌আমার ভাইয়ের গুলিয়ান বের সিনড্রম থাকায় তার মাল্টি-স্পেশালিটি চিকিৎসার প্রয়োজন ছিল। আমি ১৮টি হাসপাতালে ফোন করি এবং পাঁচটা হাসপাতালে নিজে গিয়ে খোঁজ নিই, কিন্তু কোথাও কোনও আইসিইউ ওয়ার্ড ফাঁকা পাইনি।'‌ রবিবার সন্ধ্যায় কেইএম হাসপাতালের একটি আইসিইউ স্লট ফাঁকা থাকায় বাগাড়িয়া তাঁর ভাইকে সেখানে দ্রুত নিয়ে যান, কিন্তু ততক্ষণে জগদীশের মৃত্যু হয়েছে।

আইসিইউ বেড খালি নেই শহরে

অন্য একটি মামলায় জিতেন্দ্র ধানজভাই বাড়িতেই প্রত্যেক মিনিটে ৩-৪ লিটার অক্সিজেন সাপোর্টে ছিলেন, শনিবার তাঁর অক্সিজেন স্যাচুরেশন স্তর ৮২-তে নেমে যায়। স্থানীয় চিকিৎসক তাঁকে দ্রুত আইসিইউতে ভর্তি করতে বলেন। তাঁর মেয়ে জিগনিশা গোটা দিন ধরে আইসিইউ বেডের খোঁজ শুরু করেন। অবশেষে রবিবার দুপুরে অক্সিজেন বেড পাওয়া যায় দাহিসার জাম্বো কেন্দ্রে এবং পরিবার সিদ্ধান্ত নেয় যে তাঁকে সেখানে ভর্তি করানো হবে। চিকিৎসক জানিয়েছেন যে ২৬ জন রোগী অপেক্ষা করে রয়েছেন তাই আইসিইউ বেড পাওয়া যাবে কিনা তা পরিবারকে নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না। তিনি বলেন, ‘‌আমাদের কাছে ৫টি ভেন্টিলেটর রয়েছে কিন্তু সেখানে কোনও বেড বা অক্সিজেন পোর্ট যুক্ত নয়। ওই পাঁচটি ভেন্টিলেটর এখানে বেকার হয়ে পড়ে রয়েছে।'‌

আকাল ভেন্টিলেটর ও অক্সিজেনের

বিএমসির ড্যাশবোর্ডে দেখা গিয়েছে, কোভিড-১৯ রোগীদের জন্য শহরে ১,৪৪৪ ভেন্টিলেটরের মধ্যে ১৭টি ভেন্টিলেটর ও ২,৮৬১টি আইসিইউ-এর মধ্যে ৬০টি ফাঁকা রয়েছে। অন্যদিকে মুম্বইতে মাত্র ৬টি ভেন্টিলেটর ও ২১টি আইসিইউ বেড খালি রয়েছে। কিন্তু একটি সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম পরীক্ষা করে দেখেছে যে রোগীদের জন্য কেবলমাত্র একটি ভেন্টিলেটর ও ১৫টি আইসিইউ বেড ফাঁকা রয়েছে। জানা গিয়েছে, টাটা মেমোরিয়াল হাসপাতালের ২টি ভেন্টিলেটর ক্যান্সার রোগীদের জন্য সংরক্ষিত, যক্ষ্মা হাসপাতালের ২টি ভেন্টিলেটর টিবি রোগীদের জন্য, পাসাদান হাসপাতালে একটি এবং ঘাটকোপারের ট্রাস্টে থাকা ভেন্টিলেটর ইতিমদ্যে দখল। ট্রাস্টের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘‌আমাদের ৫টি ভেন্টিলেটর রয়েছে কিন্তু সেগুলি সব ভর্তি। আমরা কোনও অপেক্ষারত রোগীদের তালিকা নিয়ে বসে নেই। যত দ্রুত ভেন্টিলেটর উপলব্ধ হবে আমরা পরের রোগীকে সেখানে ভর্তি করে দেব।'‌ পিডি হিন্দুজা হাসপাতালেএকটি ভেন্টিলেটর রয়েছে কিন্তু তা আপৎকালীন পরিস্থিতির জন্য। সরকারি হাসপাতালে কোনও ভেন্টিলেটর নেই।

করোনায় কাবু ভারত, সঙ্কটকালীন পরিস্থিতিতে সাহায্যের হাত বাড়াল মাইক্রোসফট

চাহিদা রয়েছে ভেন্টিলেটর বেডের

হাসপাতালের আভ্যন্তরীণ ড্যাশবোর্ডে দেখা গিয়েছে যে ১১টি হাসপাতালে ২১টি ভেন্টিলেটর রয়েছে, যার মধ্যে কেবলমাত্র সরকারি ক্ষেত্রে বিকেসি জাম্বো হাসপাতালে পাঁচটি আইসিইউ রয়েছে। আর বাকিটা বেসরকারি হাসপাতালে রয়েছে। কমিশনার আই এস চাহাল জানিয়েছেন, দ্বিতীয় ওয়েভ চলাকালীন শহরজুড়ে আইসিইউ ১৫০০ থেকে ২৮০০ বেড করে দেওয়ার পরেও চাপ রয়েছে। তিনি বসলেন, ‘‌আমরা এই সপ্তাহে আরও ১০০ টি আইসিইউ চালু করার চেষ্টা করছি।'‌ ১১টি হাসপাতালের ড্যাশবোর্ড অনুযায়ী ৬টি হাসপাতালে কোনও অক্সিজেন বা বেড উপলব্ধ নেই।