বিভিন্ন রাজ্যের করোনা পরিস্থিতি
দেশের মধ্যে মহারাষ্ট্র করোনায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত রাজ্য, এখানে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আক্রান্ত হয়েছে ৬৭ হাজার ও মৃত্যু হয়েছে ৬৭৬ জন। অন্যদিকে উত্তরপ্রদেশে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আক্রান্ত হয়েছে ৩৮ হাজার জন এবং মৃত্যু হয়েছে ২২৩ জনের। কেরলেও শনিবার ২৬ হাজার নতুন করোনায় আক্রান্ত হয়েছে এবং দিল্লিতেও ২৪ হাজার নতুন কেসের পাশাপাশি ৩৫৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। ২৪ এপ্রিল স্বাস্থ্য মন্ত্রকের বুলেটিনে বলা হয়েছে যে দেশের ১০টি রাজ্যের মধ্যে অন্যতম ছত্তিশগড়ে নতুন করোনা আক্রান্তের হার ৭৪.১৫ শতাংশ, এ রাজ্যে নতুন করে ১৬ হাজার জন আক্রান্ত হয়েছেন। গুজরাত, তামিলনাড়ু এবং পশ্চিমবঙ্গে প্রত্যেক রাজ্যে ১৪ হাজার করে নতুন কেস, মধ্যপ্রদেশ ও বিহারে ১২ হাজার ও অন্ধ্রপ্রদেশে শনিবার ১১ হাজার নতুন করোনায় আক্রান্তের সন্ধান মিলেছে।
ভারতে ভ্যাকসিন
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রকের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে ভারতে আপৎকালীন অনুমোদিত দু'টি ভ্যাকসিনের ১৪ কোটি ডোজ ৯৯ দিনে দেওয়া হয়েছে। আগামী ২৮ এপ্রিল থেকে তৃতীয় পর্যায়ের টিকাকরণের নাম নথিভুক্ত করার কাজ শুরু হবে কোউইন ও আরোগ্য সেতু অ্যাপে। ১ মে থেকে শুরু হওয়া এই ভ্যাকসিনেশনে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে ১৮ বছরের ঊর্ধ্বে থাকা সকল নাগরিকদের। ইতিমধ্যেই বিনামূল্যে তাদের রাজ্যের বাসিন্দাদের টিকাকরণ করা হবে বলে ঘোষণা করেছে উত্তরপ্রদেশ, ছত্তিশগড়, বিহার, মধ্যপ্রদেশ, তেলাঙ্গনা ও জম্মু-কাশ্মীর।
ভ্যাকসিন মূল্য
শনিবার সিরাম ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডিয়ার পক্ষ থেকে করোনা ভাইরাস ভ্যাকসিন কোভিশিল্ডের দাম নিয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে। বিবৃতিতে পুনের এসআইআই জানিয়েছে যে প্রতি ডোজের মূল্য ৬০০ টাকা করে সীমিত সংখ্যায় ডোজ বিক্রি করা হবে বেসরকারি হাসপাতালগুলিকে। ভারত বায়োটেকের পক্ষ থেকে তাদের দেশীয় কোভ্যাকসিনের ডোজের মূল্য নির্ধারণ করে ঘোষণা করা হয়েছে। রাজ্য সরকারকে এই ডোজ দেওয়া হবে ৬০০ টাকায় এবং ১২০০ টাকায় এই ডোজ পাবে বেসরকারি হাসপাতালগুলি।
মেডিক্যাল অক্সিজেন, অক্সিজেন সিলিন্ডারের ঘাটতি
কোভিড-১৯ রোগীর জন্য বেড, অক্সিজেনের তীব্র ঘাটতি দেখা দিয়েছে দেশজুড়ে। সোশ্যাল মিডিয়া এই সংক্রান্ত খবরের জোয়ারে ভেসে যাচ্ছে। হাসপাতাল ও চিকিৎসকরা বিভিন্ন জায়গা থেকে এ ধরনের ফোন পাচ্ছেন। শনিবার দিল্লিতে জয়পুর গোল্ডেন হাসপাতালে অক্সিজেনের অভাবে মৃত্যু হয়েছে ২০ জনের। এই মৃত্যুর ২৪ ঘণ্টারও কম সময় আগে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ টুইট করে জানিয়েছিল যে মেডিক্যাল অক্সিজেনের ঘাটতির জন্য ২০০ জন মানুষের প্রাণ ঝুঁকিতে রয়েছে। একই ধরনের পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে পাঞ্জাবের অমৃতসরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে, যেখানে মেডিক্যাল অক্সিজেন না পেয়ে মারা গিয়েছে ৬ জন। একদিকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে যে তারা অক্সিজেনের অভাবের ব্যাপারে সরকারকে অবহিত করেছিল কিন্তু পাঞ্জাব সরকার জানায় যে হাসপাতাল থেকে এ ধরনের কোনও অনুরোধ করা হয়নি। অন্যদিকে, অক্সিজেনের অভাবে দিল্লির সর্দার প্যাটেল হাসপাতালে মারা গিয়েছে ২ জন রোগী, এরপর থেকে আর কোনও নতুন রোগী ভর্তি নিচ্ছে না হাসপাতাল। তরল মেডিক্যাল অক্সিজেনের যোগান পর্যাপ্ত নয় বলে শনিবারই জিটিবি ও রাজীব গান্ধী সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল কোভিড-১৯ রোগীদের বেড সংখ্যা কমিয়ে দিয়েছে। অক্সিজেন সিলিন্ডার কেনা বা রিফিল পুনরায় ভর্তি করার জন্য পশ্চিমবঙ্গ সরকার কিছু বিধি-নিষেধ জারি করেছে। কেউ যদি সিলিন্ডার কিনতে বা সিলিন্ডার ভরতে চান তবে চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন বাধ্যতামূলক।
দেশজোড়া করোনা আতঙ্কের মাঝে মহারাষ্ট্রে নিম্নমুখী সংক্রমণের গতি, তবে কী ‘লকডাউনেই' মিলছে সুফল?
কেন্দ্রের বিভিন্ন উদ্যোগ অক্সিজেন সহজলভ্য করতে
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী শনিবার একটি উচ্চ পর্যায়ের একটি বৈঠক করেন। যেখানে সিলিন্ডার সহ সমস্ত অক্সিজেন এবং অক্সিজেন সম্পর্কিত সরঞ্জামকে মৌলিক শুল্ক ও স্বাস্থ্য কর থেকে অব্যাহতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। কোভিড-১৯ টি ভ্যাকসিন আমদানির ক্ষেত্রে একই পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। ভারতীয় রেলের উদ্যোগে অক্সিজেন এক্সপ্রেস মহারাষ্ট্রের নাসিক ও উত্তরপ্রদেশে মেডিক্যাল অক্সিজেন নিয়ে পৌঁছেছে। অন্যদিকে সিঙ্গাপুর থেকে অক্সিজেন নিয়ে ভারতীয় বায়ু সেনা ভারতে এসে পৌঁছেছে। আইএএফের এই একই বিমান পুনে ও ইন্দোর থেকে খালি সিলিন্ডার নিয়ে গুজরাতের জামনগর থেকে তা ভর্তি করে নিয়ে আসে।
বিভিন্ন রাজ্যে কড়া নিষেধাজ্ঞা
শনিবার তামিলনাড়ু সরকার নির্দেশ দিয়েছে যে সিনেমা, উপাসনার জায়গা, শপিং মল, পানশালা, রেস্তোরাঁ, জিম ও সেলুন বন্ধ রাখতে হবে। অন্ধ্রপ্রদেশ সরকারও রাত ১০ টা থেকে ভোর পাঁচটা পর্যন্ত নৈশ কার্ফু জারি করেছে। অন্যদিকে জম্মু-কাশ্মীর প্রশাসন সপ্তাহান্তের কার্ফু জারি করেছে। উত্তরাখণ্ড সরকারও নির্দেশ দিয়েছে সব সরকারি দপ্তর বন্ধ রাখার। একই কড়াকড়ি জারি করা হয়েছে মহারাষ্ট্র, দিল্লি, উত্তরপ্রদেশ, পাঞ্জাব, কেরল ও আরও অন্যান্য রাজ্যগুলিতে।
দেশে সুস্থতার হার
ভারতে এখনও পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়ে সুস্থ হয়ে উঠেছেন ১,৩৮,৬৭,৯৯৭ জন। দেশজুড়ে মহামারি শুরু হওয়ার পর এখনও পর্যন্ত মারা গিয়েছে ১,৮৯,৫৪৪ জন।