হাসপাতালে অক্সিজেন নেই, জানত না মৃতের পরিবার, জয়পুর গোল্ডেন হাসপাতালে মৃত ২০ জন
করোনা ভাইরাসের দ্বিতীয় ওয়েভ যেন মারাত্মকভাবে দেখা দিয়েছে দেশের বিভিন্ন স্থানে। যার ফলে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা একেবারেই ভেঙে পড়েছে। দেশের জাতীয় রাজধানী দিল্লির একাধিক সরকারি–বেসরকারি হাসপাতালে বেড ও অক্সিজেনের অভাবে বহু রোগী ভুক্তভোগী। এরই মধ্যে জয়পুর গোল্ডেন হাসপাতালে শনিবার অক্সিজেনের অভাবে মৃত্যু হয় ২০ জন রোগীর আর মৃতদের পরিবার এই মৃত্যুর কারণ জানার জন্য এখনও হাসপাতালের থেকে উত্তরের অপেক্ষা করছেন।

প্রিয়জনের শোকে কাতর পরিবার
প্রিয়জনের শোকে কাতর হরি সিং তোমার, তাঁর পরিবারের সদস্যকে বাঁচাতে চিকিৎসার জন্য বাড়ি বন্ধক রেখেছে। চোখে জল নিয়ে তিনি বলেন, ‘আমার ৩৪ বছরের শ্যালিকা চিকিৎসায় সাড়া দিচ্ছিল। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আমাদের একবারও অক্সিজেনের ঘাটতি রয়েছে সে বিষয়ে জানায়নি। যদি তারা বলত, তবে আমরা শেষপর্যন্ত চেষ্টা করতাম অক্সিজেন নিয়ে আসার, যেমনটা আমরা প্লাজমা এবং অন্যান্য জিনিস এনেছি। তারা শুধু তাদের বিল নিয়ে চিন্তিত।' জয়পুর গোল্ডেন হাসপাতালের মেডিক্যাল ডিরেক্টর ডিকে বালুজা এই মৃত্যুর পেছনের কারণ হিসাবে জানিয়েছেন যে অক্সিজেনের চাপ নিতে পারেননি গুরুতর অসুস্থ ওই রোগী। এই ঘটনার একদিন আগেই দিল্লির সবচেয়ে বড় ও সর্বাধিক স্বাস্থ্য পরিষেবা যুক্ত হাসপাতাল স্যার গঙ্গা রামে ২৫ জন রোগীর মৃত্যু হয়।

অক্সিজেন নেই হাসপাতালে
শোকাহত আর এক পরিবার জানিয়েছে যে তারা বিশ্বাস করতে পারছে না যে তাদের ছোট ভাই আর বেঁচে নেই। পরিবারের এক সদস্য জানান তাংর ভাই ভালোই ছিলেন এবং শুক্রবারও ফোনে কথা হয়েছে তাঁর ভাইয়ের সঙ্গে। মৃত দীনেশ কাটারিয়ার (৩৮) ভাই বলেন, ‘আমার সঙ্গে শুক্রবার রাত আটটা নাগাদ কথা হয়। সে ভালোই ছিল। তাকে আইসিইউতে রাখা হয় কিন্তু ভেন্টিলেটরে নয়। তার অক্সিজেন স্যাচুরেশন স্তর ৯২ ছিল। আমি জানিনা হঠাৎ কি হল এবং সেটাই আমরা হাসপাতালের থেকে জানতে চাইছি।'

নিরুত্তর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ
করোনায় প্রাণ কেড়েছে কমল খেরার ভাই ও তাঁর স্ত্রীয়ের। তিনি হাসপাতালের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে জানান যে অক্সিজেনের ঘাটতি রয়েছে সে বিষয়ে না তাঁকে আর না পরিবারের অন্য কোনও সদস্যকে জানানো হয়েছে। কমল খেরা বলেন, ‘হাসপাতাল আমাদের কিছুই জানায়নি। আমি হাসপাতালে আসি এবং আমায় শুধু বলা হয় যে আমার ভাই এবং তাঁর স্ত্রী মারা গিয়েছে। আমায় তাঁদের দেহ নেওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে বলা হয়। কি কারণে মৃত্যু সে বিষয়ে হাসপাতাল কিছুই জানায়নি।'
মাস শেষ হওয়ার আগেই বেঙ্গালুরুতে মৃত্যু ছাড়ালো হাজার, অক্সিজেনের অভাবে অসহায় কর্নাটক

বাড়ানো হয়েছে শ্মশানের এলাকা
দিল্লিতে শেষ ১২ দিনে এই মারণ ভাইরাসে মৃত্যু হয়েছে প্রায় ২৫০০ জনের। দেহ দাহ করার জন্য প্রশাসন দক্ষিণ দিল্লির সরাই কালে খান এলাকার শ্মশানটিকে প্রসারিত করেছে। দিল্লি প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, শ্মশানের ভেতরে থাকা পার্কটিকেও দেহ দাহ করার কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। শনিবারই জাতীয় রাজধানীতে একদিনে কোভিড-১৯-এ মৃত্যু হয়েছে ৩৫৭ জনের বেশি রোগীর। এর পাশাপাশি নতুন করে আক্রান্ত হয়েছে ২৪ হাজার জন।