সুমন ভট্টাচার্য: বাংলার ভোট কে পাখির চোখ করতে গিয়েই কি নরেন্দ্র মোদীর সরকার করোনার দ্বিতীয় ঢেউ কে বুঝতে ব্যর্থ হলো?

দিল্লির রাজনীতিতে আপাতত এটাই প্রধান চর্চার বিষয়। দিল্লি, উত্তরপ্রদেশ কিংবা নরেন্দ্র মোদীর নিজের রাজ্য গুজরাটে সংক্রমণের বাড়বাড়ন্ত, রোজই চমকে দেওয়া মৃত্যুর খবর কেন্দ্রকে রীতিমতো ব্যাকফুটে ঠেলে দিয়েছে। কংগ্রেস নেতা এবং প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদাবম্বরম টুইট করে, সর্বভারতীয় সংবাদপত্রে উত্তর সম্পাদকীয় লিখে ইতিমধ্যেই সরাসরি এই অভিযোগটা তুলেছেন। আর একেবারে ক্রোনোলজি মানে দিনের পরে দিনের হিসেব দিয়ে একই কথা বলেছেন সুপ্রিম কোর্ট বার কাউন্সিলের প্রাক্তন সভাপতি এবং দেশের শীর্ষ আইনজীবী দুষ্মন্ত দাভে। চিদম্বরম এবং দুষ্মন্ত দাভে দুজনেই দুঁদে আইনজীবী। তাঁরা একদম দিনক্ষণ দিয়ে উল্লেখ করে বলছেন, যখন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নরেন্দ্র মোদীর কোভিড এর দ্বিতীয় ঢেউ সামলাতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া উচিত ছিল,তখন তিনি বাংলায় নির্বাচনী প্রচারে ব্যস্ত ছিলেন।

পশ্চিমবঙ্গকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এতটা গুরুত্ব দেন, এটা হয়তো বাঙালি হিসেবে আমাদের স্লাঘা দিত, যদি না কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় কেন্দ্রের বেআব্রু অবস্থাটা এইভাবে প্রকাশ পেয়ে যেত। ভ্যাকসিন এর অপ্রতুলতা, অক্সিজেন এর সংকট, রেমিডিসিভি এর যোগান নিয়ে বিজেপি নেতাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দেশের স্বাস্থ্য পরিষেবাকে আবার কঠিনতম চ্যালেঞ্জের মুখে ঠেলে দিয়েছে। অথচ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সেই সময় স্বাস্থ্যমন্ত্রক, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এবং রাজ্য সরকারগুলির সঙ্গে সমন্বয় করে তাঁর যে রোডম্যাপ তৈরির দায়িত্ব ছিল,তার থেকে অনেক দূরের বাস্তবতায় গিয়ে নরেন্দ্র মোদী পশ্চিমবঙ্গে জেলায় জেলায় একাধিকবার করে নির্বাচনী প্রচার করে বেড়িয়েছেন।

বিরোধীদের এই অভিযোগ আলাদা তাৎপর্য পেয়ে যাচ্ছে যখন টেলিভিশন চ্যানেলগুলো দেখাচ্ছে দেশের হাসপাতালে অক্সিজেন এর সংকটে করোনা রোগীরা অসহায়ের মতো মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন কিংবা রেমিডিসিভি না পেয়ে রোগীর আত্মীয়স্বজনরা হাহুতাশ করছেন। গুজরাট কিংবা মধ্যপ্রদেশে করোনায় মৃত্যুর খবর যত আসছে, তত পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচন মরিয়া গেরুয়া শিবিরের স্বাস্থ্য পরিষেবার উন্নতিতে দেওয়া প্রতিশ্রুতিগুলো অন্তঃসারশূন্য মনে হচ্ছে। বাংলার ভোটাররাও হয়তো ভাববেন, যদি দু যুগ ধরে বিজেপি শাসিত মধ্যপ্রদেশ কিংবা গুজরাটের করোনা সামলাতে গিয়ে এইরকম কঙ্কালসার স্বাস্থ্য পরিষেবা বেরিয়ে পড়ে, তাহলে পশ্চিমবঙ্গে গেরুয়া শিবিরের শাসন শুরু হলে কি লাভ হবে?

বিরোধী দলের নেতারা তো বটেই, বিশেষজ্ঞরাও মনে করছেন, করোনার দ্বিতীয় ঢেউ এর আঘাত কতটা তীব্রভাবে ভারতে আঘাত হানতে পারে, সেই সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী কিংবা তাঁর সরকারের শীর্ষ নেতৃত্বের একটা ধারণা থাকা উচিত ছিল। কারণ গতবছরই, মানে ২০২০ তেই ব্রিটেন কিংবা ইউরোপের দেশগুলো করোনার দ্বিতীয় ঢেউ সামলেছিল। সেই উদাহরণ থেকে দেখে ভারতের, নরেন্দ্র মোদীর সরকারের আরো আগে থেকে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত ছিল। কিন্তু করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের পর দেশবাসীর উদ্দেশ্যে নরেন্দ্র মোদীর বক্তৃতাই বলে দিয়েছে, গত বছরের মতো তিনি প্রতিটি বিষয়ে একেবারে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেওয়ার জায়গায় নেই। বরং অনেক বিষয়েই তরুণ প্রজন্মকে দায়িত্ব নিতে বলছেন, সাধারণ মানুষের উপর দায়িত্ব ছেড়ে দিয়েছেন। ২০২০ র আত্মপ্রত্যয়ী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে ২০২১ র ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর এই তফাৎ টা কারোরই চোখ এড়ানোর কথা নয়।

সেই জন্যই প্রশ্ন উঠছে, বাংলায় ভোট প্রচার করতে গিয়েই কি নরেন্দ্র মোদীর করোনা র দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় এতটা অপ্রস্তুত অবস্থা?

এবং যদি তাই হয়, তাহলে ১৩০ কোটির দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে কেন এই পথে হাঁটলেন? কেন পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনের জন্য গোটা দেশের স্বাস্থ্যপরিষেবা কে এইরকম বেহাল অবস্থায় যেতে দিলেন? তাঁর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ র কাছে না হয় বাংলা প্রেস্টিজ ফাইট ছিল, কিন্তু নরেন্দ্র মোদীর মতো বিচক্ষণ নেতা সেই ভুল পথে কেন হাঁটবেন?

লাল-নীল-গেরুয়া...! 'রঙ' ছাড়া সংবাদ খুঁজে পাওয়া কঠিন। কোন খবরটা 'খাচ্ছে'? সেটাই কি শেষ কথা? নাকি আসল সত্যিটার নাম 'সংবাদ'! 'ব্রেকিং' আর প্রাইম টাইমের পিছনে দৌড়তে গিয়ে দেওয়ালে পিঠ ঠেকেছে সত্যিকারের সাংবাদিকতার। অর্থ আর চোখ রাঙানিতে হাত বাঁধা সাংবাদিকদের। কিন্তু, গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভে 'রঙ' লাগানোয় বিশ্বাসী নই আমরা। আর মৃত্যুশয্যা থেকে ফিরিয়ে আনতে পারেন আপনারাই। সোশ্যালের ওয়াল জুড়ে বিনামূল্যে পাওয়া খবরে 'ফেক' তকমা জুড়ে যাচ্ছে না তো? আসলে পৃথিবীতে কোনও কিছুই 'ফ্রি' নয়। তাই, আপনার দেওয়া একটি টাকাও অক্সিজেন জোগাতে পারে। স্বতন্ত্র সাংবাদিকতার স্বার্থে আপনার স্বল্প অনুদানও মূল্যবান। পাশে থাকুন।.

করোনা পরিস্থিতির জন্য থিয়েটার জগতের অবস্থা কঠিন। আগামীর জন্য পরিকল্পনাটাই বা কী? জানাবেন মাসুম রেজা ও তূর্ণা দাশ।