নজফগড়ের ললিত
দিল্লির নজফগড়ের খৈরা গ্রামে বড় হয়েছেন ললিত যাদব। তাঁর পিতা জিলে সিং যাদব একটি বেসরকারি সংস্থার ইঞ্জিনিয়ার। তাঁর কথায়, ছোটো থেকেই গলি-মহল্লায় ক্রিকেট খেলে বেড়াত ললিত। ৬ বছর বয়সে দাদা তরুণের সঙ্গে বাড়ির বাইরে একদিন ক্রিকেট খেলছিল ললিত। ললিতের একটি শট লেগে বাড়ির জানালার কাঁচ ভেঙে যায়। এরপর আর বাড়িতে নয়, ক্রিকেট খেলতে ললিত আর তরুণকে পাঠাই বাড়ির কাছেই সামার ক্যাম্পে। তরুণ ক্রিকেট নিয়ে খুব বেশি আগ্রহী না হলেও ললিত কিন্তু তখন থেকেই নিয়মিত অনুশীলন চালিয়ে যায়। বছর দুয়েক সেখানে অনুশীলনের পর নজফগড়ে স্পোর্টিং ক্রিকেট ক্লাবের কোচ অমিত বশিষ্ঠের তত্ত্বাবধানেই ললিতের ক্রিকেট প্রতিভা বিকশিত হয়।
(ছবি- টুইটার)
অলরাউন্ডার হিসেবে বিবর্তন
প্রথমদিকে ললিত উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলতেন। দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে থাকা শ্রদ্ধানন্দ কলেজের ক্রিকেট টিমে পার্ট-টাইম উইকেটকিপার হিসেবেই আন্তঃ কলেজ টুর্নামেন্টও খেলেছেন। কিন্তু কোচ অমিত বশিষ্ঠের পরামর্শেই ললিত বোলিং করায় জোর দেন এবং ক্রমেই নির্ভরযোগ্য অলরাউন্ডার হয়ে ওঠেন। অমিত বশিষ্ঠ জানিয়েছেন, ২০০৭ সাল নাগাদ ললিত আমার কাছে আসে। উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান হিসেবে শুরু করলেও নেটে স্পিন বোলিংও করত। একবার আন্তঃ স্কুল টুর্নামেন্টে বোলার কম থাকায় উইকেটকিপিংয়ের পাশাপাশি ললিতকে দিয়ে কয়েক ওভার বোলিং করানো হয়। উইকেটও পায়। এরপর থেকে নেটে নিয়মিত বোলিং করত ললিত, পরে অন্যতম প্রধান বোলার হয়ে ওঠে।
(ছবি- বিসিসিআই/আইপিএল)
ললিতের নজির
শ্রদ্ধানন্দ কলেজ থেকে স্নাতক হওয়ার পাশাপাশি স্পোর্টস কোটায় আয়কর বিভাগে চাকরি পেয়ে যান ললিত। ক্লাব ক্রিকেটে একবার নয়, দু-দুবার ছয় বলে ছটি ছক্কা মারার নজিরও গড়েছেন। নজফগড় স্পোর্টস কমপ্লেক্সে টি ২০ প্রতিযোগিতায় দুবার ছয় বলে ছয় ছক্কা মারেন ললিত। একবার তো ললিতের দল স্পোর্টিং ক্লাব টি ২০ ম্যাচে ২১০ রান করেছিল, ললিত ৪৬ বলে ১৩০ রান করেছিলেন। এ ছাড়া অনূর্ধ্ব ১৪ বিভাগে ৪০ ওভারের ম্যাচে দ্বিশতরানও করেছিলেন ললিত।
(ছবি- বিসিসিআই/আইপিএল)
চমকের অপেক্ষা
দিল্লি ক্যাপিটালসে ললিতের প্রতিভার বিকাশে সবরকম সহযোগিতার আশ্বাস দিয়ে পন্থ বলেন, চিপকের এমন উইকেটে আরও চমক দেখাতে পারেন ললিত। তাঁকে আমরা আমরা গ্রুম করতে চাই। সে কারণেই আমার আগে তাঁকে ব্যাট করতে পাঠাই। ললিত যথেষ্ট পরিণত ক্রিকেট খেলছেন। উল্লেখ্য, এখনও অবধি ৩টি আইপিএল ম্যাচে ২টি ইনিংসে অপরাজিত থেকে ৫৪রান করেছেন ললিত। সর্বাধিক মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের বিরুদ্ধে ম্যাচ জেতানো অপরাজিত ২২। রাজস্থান রয়্যালসের বিরুদ্ধে ২০ রান করার পাশাপাশি পাঞ্জাব কিংসের বিরুদ্ধে ৬ বলে ১২ রান করেছিলেন। দিল্লির হয়ে সৈয়দ মুস্তাক আলি টি ২০ ও বিজয় হাজারে ট্রফিতেও ভালো পারফর্ম করে আইপিএলের আসরে এসেছেন ললিত। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অভিষেক ২০১৭ সালে। ঘরোয়া সীমিত ওভারের ক্রিকেটে অভিষেক ২০১৮ সালে। ১৫টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচে ৫৭০ রান করেছেন, গড় ৪০.৭১, সর্বাধিক ৯১। ৯টি উইকেট রয়েছে। ঘরোয়া ওয়ান ডে-তে ২৪ ম্যাচে ৪৫৯ রান করেছেন, উইকেট আছে ২৯টি। ৩৮টি টি ২০ ম্যাচে ১৪২.৭৯ স্ট্রাইক রেট ও ৩৮-এর উপর গড় রেখে করেছেন ৬১৪ রান। সর্বাধিক অপরাজিত ৫২। টি ২০-তে ২৮টি উইকেটও রয়েছে তাঁর।
(ছবি- বিসিসিআই/আইপিএল)