বাংলা ও মতুয়া ভোটব্যাঙ্ক
প্রসঙ্গত, মতুয়ারা পরিসংখ্যানের দিক থেকে জনসংখ্যার বিচারে ৫০ মিলিয়ন। যার মধ্যে ৩০ মিলিয়নের বসবাস বাংলায়। এঁদের মধ্যে দেড়কোটি মতুয়া জনজাতি বাংলার ভোটার তালিকায় নথিভুক্ত। সেই জায়গা থেকে এই এলাকার ভোটব্যাঙ্কে রাজনৈতিক নজর চিরকালই ছিল। ২০১৯ সালে বাংলায় বিজেপির দাপটের নেপথ্যে অন্যতম শক্তি এই মতুয়া ভোটব্যাঙ্ক। যেখানে রাত পোহালেই এই ভোটব্যাঙ্ক ঘিরে অগ্নিপরীক্ষার সামনে তৃণমূল, বিজেপি দুই পক্ষ।
কত আসনে মতুয়াদের দাপট?
মূলত বাংলার বুকে বনগাঁ, কোচবিহার, দিনাজপুর, বর্ধমানে মতুয়াদের ব্যাপক দাপট রয়েছে ভোটব্যাঙ্কের নিরিখে। পশ্চিমবঙ্গের বেশ কয়েকটি বিধানসভা কেন্দ্রের নির্বাচনের ফলাফলকে প্রভাবিত করতে পারেন মতুয়ারা। ৩৭ থেকে ৪০টি আসনে মতুয়াদের দাপট প্রবল। এছাড়া আরও ৪০-৫০টি আসনে মতুয়ারা রয়েছেন।
২০১৯ এর লোকসভা ভোটের ফলাফল ও মতুয়া ভোটব্যাঙ্ক
২০১৯ সালের ভোটে মতুয়াগড় হিসাবে পরিচিত বনগাঁ এলাকায় বিজেপি দাপট বাড়ায়। বনগাঁ উত্তরে ১,০৪৫৫৮ ভোটে ও বনগাঁ দক্ষিণে ১,০৫,১৫৬ ভোটে বিজেপি লিড নেয়। গাইঘাটাতেও বিজেপি ১ লাখের বেশি ভোটে এগিয়ে যায়। এদিকে, এই সমীকরণ যখন ভোটের ইভিএম থেকে মিলছে, তখন রাজনৈতিক পট মতুয়াদের ঘিরে লোকসভা ভোট পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন দিকে মোড় নেয়। যার মূলে ছিল সিএএ।
সিএএ, ঠাকুরবাড়ি ও অমিত শাহ
ঠাকুরবাড়ি রাজনৈতিক দিক থেকে দুই ভাগে বিভক্ত আপাতত! একদিকে তৃণমূলের মমতা বালা ঠাকুর, অন্যদিকে বিজেপির শান্তনু ঠাকুর। তবে দুই শিবিরের এই হেভিওয়েটদের সঙ্গে তাঁদের সংশ্লিষ্ট দলের সম্পর্ক নিয়ে ভোটের কিছু আগে বহু গুঞ্জন শোনা যায়। এদিকে, তৃণমূল ও বিজেপি দুই তরফই ঠাকুরবাড়ির আবেগকে ছুঁয়ে যাওয়ার চেষ্টায় ব্রতী! সেই জায়গা থেকে মতুয়াগড়ে বিধানসভা ভোটের আগে অমিত শাহের প্রথম সভা ভেস্তে যাওয়ার পর , পরবর্তী সভায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সিএএ নিয়ে দরাজ প্রতিশ্রুতি দেন। জানান ভ্যাকসিন পর্ব মিটলেই দেশে সিএএ হবে। প্রসঙ্গত, নাগরিকত্বকে কেন্দ্র করে মতুয়াদের বহুদিনের দাবি দাওয়া রয়েছে। সিএএ লাগু হলে বহু মতুয়া সম্প্রদায়ভূক্ত মানুষই সেই নাগরিকত্ব পাবেন , এমন সম্ভাবনাকে সামনে রেখে বাংলার ভোটে মতুয়া ভোটব্যাঙ্ক ধরে রাখা বিজেপির কাছে বড় চ্যালেঞ্জ। যেখানে গোটা দেশের কাছে সিএএ প্রবল সমালোচিত হয়েছে, সেখানে এই সিএএ তাস বিজেপিকে মতুয়াদের মনে কতটা জায়গা করে দেয় সেদিকে নজর সকলের।
সিএএ, ঠাকুরবাড়ি ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মসনদে অধীষ্ঠানের নেপথ্যেও এককালে ছিল মতুয়া ভোটব্যাঙ্ক। ২০১৯ সালে মতুয়াগড়ের পিচ খানিকটা বেগ দেয় মমতা শিবিরকে। সেই জায়গা থেকে সিএএকে অস্ত্র করেই ঠাকুরবাড়ির আবেগকে নিজের সঙ্গে রাখতে মরিয়া চেষ্টা চালাতে দেখা যায় তৃণমূল সুপ্রিমোকে। মমতা নিজে জানান, মতুয়ারা যেহেতু এতদিন বাংলায় বসবাস করছেন, ফলে কেউ তাঁদের সরাতে পারবেননা। এক্ষেত্রে সিএএ প্রতিশ্রুতি নিয়ে বিজেপির সমালোচনায় মুখর হন তিনি। এছাড়াও ঠাকুরবাড়ির বড় মা যখন অসুস্থ ছিলেন তখন ঘাসফুল সরকারের তৎপরতাও মতুয়াগড়ের বহু সভায় মনে করিয়ে দেন দিদি। আর এমন এক যুযুধান লড়াইয়ের মাঝে রাত পোহালে মতুয়াগড়ের ভোট কোনদিকে যাবে, তার উত্তরের দিকে তাকিয়ে ২ রা মে।