মোদীর টিকা উৎসব ঘোষণা সত্ত্বেও ভারতে টিকাকরণ হার নিম্নগামী, চিন্তায় বিশেষজ্ঞরা

গত ১ এপ্রিল থেকে শুরু হয়েছে ৪৫ বছর বা তার বেশি বয়সের ব্যক্তিদের টিকাকরণ কর্মসূচি। যদিও দৈনিক টিকাকরণের সংখ্যাটা দিন দিন কমছে, এমনকী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর '‌টিকা উৎসব’‌ ঘোষণার পরও টিকা নিতে আসা সুবিধাভোগীদের সংখ্যা বাড়াতে পারেনি।

ভারতে টিকা উৎসব

টিকা উৎসবের সময়কালে এবং গোটা মাস ধরে চলা গড় টিকাকরণের সংখ্যায় খুব একটা পার্থক্য দেখা যায়নি। ১১ থেকে ১৪ এপ্রিল টিকা উৎসব চলাকালীন গোটা দেশে গড় টিকাকরণ হয়েছে ৩৩.‌৪৭ লক্ষ এবং গোটা মাস ধরে চলা ১৭ এপ্রিল পর্যন্ত গড় টিকাকরণ হয়েছে ৩১.‌৩৮ লক্ষ। প্রসঙ্গত রবিবারই একদিনে ২.‌৬ লক্ষের বেশি নতুন করে করোনায় আক্রান্ত সনাক্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রক। ১৭ এপ্রিল পর্যন্ত সরকারি টিকাকরণ করা হয়েচে ১২.‌২৬ কোটি, যা দেশের জনসংখ্যা থেকে ৯ শতাংশ কম।

টিকাকরণের সংখ্যা হ্রাস ভারতে

কিছুদিন আগেই ভারতে একদিনে ৪৩ লক্ষের বেশি টিকাকরণ হচ্ছিল এরপরই এই সংখ্যাটি হ্রাস পেযে মাত্র ১৬ লক্ষে চলে আসে। ১১ এপ্রিল একদিনে ২৯.‌৩৩ লক্ষ টিকাকরণ হয়। ১২ এপ্রিল সেই সংখ্যা পৌঁছায় ৪০.‌০৪ লক্ষে, ১৩ এপ্রিল ৩১.‌৩৯ লক্ষ এবং ১৪ এপ্রিল ৩৩.‌১৩ লক্ষ। ১৫ এপ্রিল টিকাকরণের সংখ্যা ফের নামতে শুরু করে এবং ১৬ এপ্রিল একদিনে ৩০ লক্ষ টিকাকরণ হয় বলে জানা যায়।

ভারতের টিকাকরণের হার এত ধীরগতিতে হওয়ায়, যা বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ জায়গায় রয়েছে, তা বিশেষজ্ঞদের চিন্তা বাড়িয়েছে। তাঁদের মতে, বেশ কিছু বছর পর ভারত তার জনসংখ্যাকে ভ্যাকসিনের ২টি ডোজ দিতে সক্ষম হবে। টিকাকরণের তথ্য অনুযায়ী ১৭ এপ্রিল পর্যন্ত ভারত বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক নীচে রয়েছে, যারা তাদের জনসংখ্যার মধ্যে কমপক্ষে একজনকে একটি ডোজ দিতে সক্ষম হয়েছে।

টিকাকরণের শীর্ষে রয়েছে ইজরায়েল

টিকাকরণের শীর্ষে রয়েছে ইজরায়েল, আমেরিকা ও বাহারিন, যেখানে যথাক্রমে জনসংখ্যার ৬১.‌৭৩, ৩৮.‌৭২ ও ৩৪.‌৭৮ শতাংশের মধ্যে কমপক্ষে একটি ডোজ দেওয়া সম্পন্ন হয়েছে। ভারত এবং রাশিয়া টিকাকরণে সবচেয়ে নীচের দিকে অবস্থান করছে, এই দুই দেশে জনসংখ্যার মাত্র ৭.‌৭১ ও ৬.‌৮০ শতাংশ কমপক্ষে একটি ডোজ নিয়েছে।

২০ শতাংশ ভারতীয়র পূর্ণ টিকাকরণে আট বছর সময়

কেরলের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত অর্থনীতিবিদ রিজো এম জন জানুয়ারিতে এক পরিসংখ্যান দিয়ে জানিয়ে ছিলেন যে ভারতে যে হারে লোকেদের ভ্যাকসিন দেওয়া হচ্ছে, সেখানে ২০ শতাংশ ভারতীয়কে দুটি ডোজ দিয়ে টিকা দিতে কমপক্ষে আট বছর সময় লাগবে। তিনি ১৭ জানুয়ারি টুইট করে বলেন, ‘‌গতকাল (‌১৬ জানুয়ারি)‌ ১.‌৯১ লক্ষ মানুষকে কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনের একটি ডোজ দেওয়া হয়েছে। এই হারে যদি চলতে থাকে, তবে ২০ শতাংশ ভারতীয়র ২টি ডোজ নিতে কমপক্ষে আট বছর সময় লাগবে। ২৭ মাসে জনসংখ্যার কেবল ৬০ শতাংশকে টিকা দিতে প্রতিদিন ২০ লক্ষ ডোজের প্রয়োজন রয়েছে।'‌ জনের শেয়ার করা তথ্যে এও জানা যায় যে ১৭ এপ্রিল মাত্র ৭.‌৭২ শতাংশ ভারতীয় একটি ডোজ নিয়েছেন।

২–৩ মাসের মধ্যে ৩০ কোটি মানুষকে টিকাকরণ

মহামারিবিদ গিরিধর আর বাবু, যিনি দেশের জনস্বাস্থ্য সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন, তিনি জানিয়েছেন যে দুই থেকে তিনমাসের মধ্যে দেশের সরকারকে ৩০ কোটি মানুষকে ভ্যাকসিন দেওয়ার জন্য দৈনিক এক কোটি করে টিকাকরণ করাতে হবে। তিনি বলেন, ‘‌এটি করে, আমরা পরবর্তী সময়গুলিতে তাঁদের মৃত্যুর ঝুঁকি হ্রাস করাতে সক্ষম হব। বর্তমানে এটি দ্বিতীয় ওয়েভকে হ্রাস করার ক্ষেত্রে সরাসরি প্রভাব ফেলবে না,কারণ করোনা কেসগুলি বাড়ছে এবং এটি হ্রাস করার জন্য আমাদের দৃঢ় সংযোজন ব্যবস্থার প্রয়োজন। তবে যদি টিকাকরণের লক্ষ্য ও সময় একেবারে সঠিক থাকে তাহলে দেশে তৃতীয় ওয়েভ আসলেও তা দেশের জনসংখ্যাকে মৃত্যুর ঝুঁকি থেকে দূরে রাখবে।'‌

মানবতা বিরোধী অপরাধ, রেমডেসিভির মজুতের অভিযোগ তুলে ফড়নবিশকে নিশানা প্রিয়ঙ্কার