‌কোভিড সনাক্ত করতে ব্যর্থ আরটি–পিসিআর টেস্ট!‌ এই টেস্ট নিয়ে কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা জেনে নিন

‌আরটি–পিসিআর টেস্টে নাকি নোভেল করোনা ভাইরাসের নতুন রূপ ধরা পড়ছে না, এমনটাই শোনা যাচ্ছে বেশ কিছুদিন ধরে। ভারত সহ বিশ্বের একাধিক দেশে কোভিড–১৯–এর বারবার মিউটেশন বা চরিত্র বদল ঘটছে বলে জানা গিয়েছে। সংবাদমাধ্যমে এ জাতীয় খবর প্রকাশিত হওয়ার পর শুক্রবার কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডঃ হর্ষ বর্ধন তা খারিজ করে দিয়ে টুইটে জানিয়েছেন যে আরটি–পিসিআর টেস্টে সার্স–কোভ–২–এর নানারকম চরিত্র বদল ধরা পড়বে, তাদের চিহ্নিত করতে ব্যর্থ হয় না এই টেস্ট।

আরটি–পিসিআর টেস্টে নেগেটিভ রিপোর্ট

শোনা যাচ্ছে দিল্লি ও লখনউয়ের একাধিক পরিবারের আরটি-পিসিআর টেস্ট রিপোর্ট রহস্যজনকভাবে নেগেটিভ আসছে আর কয়েকদিন পরই তাঁরা করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন। দিল্লির এক পরিবারের ২২ বছরের ছেলের আরটি-পিসিআর টেস্ট নেগেটিভ আসে, কিন্তু তাঁর পজিটিভ হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল ছিল। চিকিৎসকের পরামর্শে ওই যুবক দ্বিতীয়বার করোনা টেস্ট করান এবং রিপোর্ট পজিটিভ আসে। ওই যুবক জানিয়েছেন আরটি-পিসিআর টেস্টের চারদিন পর উপসর্গ দেখা দেয় এবং রিপোর্ট পজিটিভ আসে। শুধু তাই নয়, পরিবারের অন্য সদস্যরাও করোনা পজিটিভ ধরা পড়ে। অবসরপ্রাপ্ত মহামারি বিদ্যা বিশারদ ডঃ রমন গঙ্গাকেডকর মিউট্যান্ট তত্ত্ব খারিজ করে বলেন, ‘‌এখনও পর্যন্ত কোনও তথ্য বা সমীক্ষা হয়নি বিশ্বের কোথাও যেখানে কোনও ভ্যারিয়ান্ট আরটি-পিসিআর পরীক্ষাকে হারাতে পারে। তবে কীভাবে জোরালো সোয়াব এবং নমুনা সংগ্রহ এই পরীক্ষার উপর প্রভাব ফেলতে পারে তা প্রমাণ করার জন্য পর্যাপ্ত প্রমাণ রয়েছে।'‌

সোয়াব সংগ্রহকারীরা সঠিকভাবে প্রশিক্ষিত নন

অশোকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাঃ শাহিদ জামিল এই মন্তব্যে একমত হয়ে বলেন, ‘‌সোয়াব সংগ্রহ করে যাঁরা টেস্টের জন্য পাঠাচ্ছেন তাঁদের অনেকেই ঠিকমতো প্রশিক্ষিত নন। আর সেটাই আমার চিন্তা। আর সেইজন্য সবকিছু ভুল হচ্ছে।'‌ গঙ্গাকেডকর বলেন, ‘‌টেস্টের জনয় সময় খুব গুরুত্বপূর্ণ। সংক্রমণ চক্রে আপনি খুব আগে বা খুব পরে যদি টেস্ট করান, তবে আপনার কাছে সঠিক তথ্য নাও আসতে পারে। এটি মিথ্যে বা নেগেটিভ হওয়ার আরও একটি কারণ হতে পারে।'‌

সংস্পর্শে আসার সপ্তম দিনে করোনা টেস্ট

বিশেষজ্ঞদের মতে, সংক্রমিত ব্যক্তির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ/‌সংস্পর্শ ওই ব্যক্তির ক্ষেত্রে ক্ষতিকর হতে পারে। সংক্রমিত ব্যক্তি শুধুমাত্র একটি হাঁচির মাধ্যমে আপনাকে আক্রান্ত করতে পারে। তাই মাস্ক ও সামাজিক দুরত্ব খুব গুরুত্বপূর্ণ। মুম্বইয়ের ডাঃ ত্রুপ্তি গিলাদা বলেন, ‘‌আপনি কারোর খুব কাছে গেলেন, ওই ব্যক্তির অসুস্থ হওয়ার পাশাপাশি আপনিও ২ দিন থেকে ১০ দিনের মধ্যে আক্রান্ত হয়ে পড়বেন।' গিলাডা বলেন, ‘‌বেশিরভাগ কেসে, ভাইরাসের সংস্পর্শে আসার ৫-১৪ দিনের মধ্যে ‌আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই আরটি-পিসিআর টেস্ট করার শ্রেষ্ঠ সময় হল সংস্পর্শে আসার সপ্তম দিন। এমনকী যদি আপনি উপসর্গহীন হন, তাও সংস্পর্শে আসার সপ্তাহ শেষ হওয়ার আগে এই টেস্ট করিয়ে নিন। এর আগে হলে আরটি-পিসিআর টেস্ট ভাইরাস সনাক্ত না হওয়ার সম্ভাবনা খুব বেশি থাকে।'‌

কোন সময় নেগেটিভ রিপোর্ট আসতে পারে

তিনি আরও জানিয়েছেন যে সংক্রমণটি ধরা পরার ৫-১০ দিন পরে লক্ষণগুলি আসতে পারে, তবে লক্ষণগুলি দেখা দেওয়ার ৪৮-৭২ ঘন্টা আগে ভাইরাসটি সবচেয়ে সংক্রমক। সুতরাং নিজেকে খোলা না রেখে শীঘ্রই আলাদা করে ফেলাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে। গিলাদা জানিয়েছেন, করোনা সংক্রমক ধরা পড়ার পর তা ১৪ দিন থাকে তাই এরও এক সপ্তাহ পর টেস্ট রিপোর্ট নেগেটিভ আসে এবং ওই ব্যক্তির কোনও উপসর্গ থাকে না।