সৌপ্তিক বন্দ্যোপাধ্যায় : রোম্যান্টিসিজম কাকে বলে? এক কথায় বলা যেতে পারে, ‘উল্লাসকর দত্ত’। তিনি যে কোন প্রেমে ডুবেছিলেন তিনিই জানতেন। একদিকে বৈপ্লবিক জীবনের পড়তে পরতে ঝুঁকি। অপরদিকে এক মেয়ের প্রতি অমোঘ ভালোবাসা। একদিকে দেশপ্রেম , অপরদিকে এক ‘মানবীর’ প্রতি প্রেম। ব্যালেন্স কীভাবে করতে হয় তিনি জানতেন। না হলে ব্রিটিশের অত্যাচারে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে কীভাবে পক্ষাঘাতে জর্জরিত প্রাক্তন প্রেমিকাকে বিয়ে করে সারাজীবন তাঁর সেবা করা যায়! এর উত্তর শুধু উল্লাসকর দত্তই জানেন।
তিনি আলিপুর বোমা মামলার আসামি, তিনি পাগল প্রেমিক, বোমা বিশেষজ্ঞ, তিনি যে বিপ্লবী উল্লাসকর দত্ত। বাড়ির ল্যাবরেটরিতেই তিনি বোমা তৈরি করে ফেলেছিলেন। সেই সময়ে তবু বোমা তৈরির উন্নত শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে দেশের বাইরে। নেপথ্যে রাসবিহারী বসু। ডাক পড়েছিল দেশের বাইরে যাবার, যাননি। প্রেমকে দেশে ফেলে তিনি কীভাবে এখন দেশের বাইরে চলে যাবেন। বিয়ের পাকাকথা হয়ে গিয়েছে। এমন মোক্ষম সময়ে মুরারীপুকুর বোমা মামলায় গ্রেফতার হলেন তিনি। প্রথমে ফাঁসির আদেশ এসেছিল। দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাসের চেষ্টায় ফাঁসি না হলেও সাজা হল আন্দামানে দীপান্তরের। এই খবর শুনে তাঁর প্রেম বিপিনচন্দ্র মেয়ে লীলা পাল আত্মহত্যাই করতে গিয়েছিলেন। পড়ে অন্য ছেলের সাথে তাঁর বিবাহ হয়ে যায়।
হাল ছাড়েননি উল্লাসকর। দীপান্তরে প্রচণ্ড অত্যাচারে প্রায় পাগলই হয়ে গিয়েছিলেন। একের এক মানসিক ভারসাম্যহীনদের থাকার স্থানই তখন তার ঘর বাড়ি। আন্দামান পাগলা গারদ তো কখনও মাদ্রাজ পাগলা গারদ। কিন্তু প্রেম? না ভুলে যাননি। সুস্থ হয়ে উঠতে প্রায় এক দশক সময় চলে যায়। ১৯৩১ সালে আবারও তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। এসময় তাঁকে বিনাবিচারে ১৮ মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। মুক্তি পাওয়ার পর তিনি আর স্বাধীনতা আন্দোলনে যুক্ত হননি। সেই শারীরিক অবস্থাই ছিল না যে।
এবার সেই মেয়ের কাছে ফেরার পালা। কিন্তু সে যে এখন অন্য কারও। না, বিপিন পালের মেয়ে তখন বিধবা। দায়িত্ব নিলেন উল্লাসকর দত্ত। কিন্তু যে মেয়েকে বিয়ে সেই প্রেমিকা তখন শয্যাশায়ী। বিদ্যাসাগর সেই কবেই বিধবা বিবাহ আইন পাশ করিয়ে গিয়েছেন। কিন্তু সমাজ? তা মেনে নিতে পারেনি সহজে। মাথা গোঁজার জায়গাটুকুও কেউ দেয়নি। অতঃপর ব্রাহ্মসমাজের কোণের এক ঘরে ঠাই পেলেন স্ত্রী’কে নিয়ে।
সেখান থেকে অসুস্থ স্ত্রী’কে নিয়ে দেশের বাড়ী শ্রীহট্টে চলে আসেন। পাগলের মতো সেবা করতেন অসুস্থ পঙ্গু স্ত্রী’র। ১৯৪৮ সাল থেকে ভারত সরকার কর্তৃক স্বাধীনতা সংগ্রামে অবদানের জন্য ভাতা মঞ্জুর করলে, তিনি তা গ্রহণে অস্বীকার করেন। তিন বছর পর ১৯৫১ সালে শিলচরে আসেন। শেষ জীবনের ১৪টা বছর ওই শহরেই কাটান। তখন তিনি ব্রিটিশের নির্যাতনে মানসিক ভারসাম্য হারানো এক উদাসী। সঙ্গে তাঁর পক্ষাঘাতে পঙ্গু স্ত্রী। শিলচরের মানুষই তখন তাঁদের থাকা-খাওয়া-চিকিৎসার যাবতীয় দায়িত্ব নিয়েছিলেন। কিন্তু ৬২ সালে লীলাদেবীর মৃত্যুতে হয়। স্ত্রীর মৃত্যুর পরেও বিশ্বাস করেননি যে তিনি নেই। ঘরের দরজা বন্ধ রাখতেন না, খোলা রাখতেন। বলতেন, দরজা বন্ধ দেখলে যদি স্ত্রী ফিরে যান। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত নিজের খাবার থেকে এক ভাগ স্ত্রীর নামে রাখতেন, যদি স্ত্রী ফিরে এসে খেতে চায়। ১৯৬৫ সালের ১৭ মে প্রয়াত হন উল্লাসকর দত্ত।
লাল-নীল-গেরুয়া...! 'রঙ' ছাড়া সংবাদ খুঁজে পাওয়া কঠিন। কোন খবরটা 'খাচ্ছে'? সেটাই কি শেষ কথা? নাকি আসল সত্যিটার নাম 'সংবাদ'!
'ব্রেকিং' আর প্রাইম টাইমের পিছনে দৌড়তে গিয়ে দেওয়ালে পিঠ ঠেকেছে সত্যিকারের সাংবাদিকতার। অর্থ আর চোখ রাঙানিতে হাত বাঁধা সাংবাদিকদের।
কিন্তু, গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভে 'রঙ' লাগানোয় বিশ্বাসী নই আমরা। আর মৃত্যুশয্যা থেকে ফিরিয়ে আনতে পারেন আপনারাই। সোশ্যালের ওয়াল জুড়ে বিনামূল্যে পাওয়া খবরে 'ফেক' তকমা জুড়ে যাচ্ছে না তো? আসলে পৃথিবীতে কোনও কিছুই 'ফ্রি' নয়। তাই, আপনার দেওয়া একটি টাকাও অক্সিজেন জোগাতে পারে। স্বতন্ত্র সাংবাদিকতার স্বার্থে আপনার স্বল্প অনুদানও মূল্যবান। পাশে থাকুন।.