করোনা মোকাবিলায় মহারাষ্ট্রে অক্সিজেন সরবরাহের চাহিদা মেটাতে কেন্দ্রকে চিঠি দিলেন উদ্ধব ঠাকরে

মহারাষ্ট্রে বাড়তে থাকা করোনা সংক্রমণ নিয়ে উদ্বেগে রয়েছে রাজ্য সরকার। ইতিমধ্যে এই রাজ্যে ১৫ দিনের জনতা কার্ফু কার্যকর করা হয়েছে। কোভিড–১৯–এর দ্বিতীয় ওয়েভের সঙ্গে লড়াই করার চ্যালেঞ্জ নিয়ে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে রাজ্যে দ্রুত পদক্ষেপে মেডিক্যাল অক্সিজেন বিমানে করে পৌঁছে দেওয়া সহ সকল বিকল্প ব্যবহার করার জন্য জাতীয় দুর্যোগ পরিচালনা কর্তৃপক্ষকে (‌এনডিএম)‌–কে চাপ দিতে অনুরোধ করেছেন।

অক্সিজেন সরবরাহ করতে কেন্দ্রকে অনুরোধ

মুখ্যমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীকে দেশীয় বাজারে রেমডেসিভির রপ্তানিকারক ইউনিটগুলিকে বাধ্যতামূলক লাইসেন্স দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেন। গত ১৩ এপ্রিল উদ্ধব ঠাকরে প্রধানমন্ত্রীকে লেখা চিঠিতে জানিয়েছেন যে মহারাষ্ট্রে ৩০ এপ্রিলের মধ্যে সক্রিয় করোনা কেসের সংখ্যা ১১.‌৯ লক্ষে পৌঁছাতে পারে। তিনি চিঠিতে লেখেন, ‘‌লিক্যুইড মেডিক্যাল অক্সিজেন সরবরাহ নিয়ে সবচেয়ে বড় উদ্বেগ রয়েছে। বর্তমানে রাজ্য ১২০০ এমটি লিক্যুইড মেডিক্যাল অক্সিজেন তৈরি করতে পারে। তবে এখন রাজ্যে ২০০০ এমটি অক্সিজেন দরকার প্রতিদিন এপ্রিলের শেষদিন পর্যন্ত।' তিনি চিঠিতে জানিয়েছেন যে রাজ্য কাছাকাছি জায়গা থেকে বিমানে করে ‌অক্সিজেন নিয়ে আসছে। এটি দূরবর্তী স্থান থেকে অক্সিজেন সিলিন্ডারগুলি তুলতে ট্যাঙ্কারগুলি জড়ো করছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‌কিন্তু কিছু কিছু এলাকা অনেকটাই দূরে এবং সেখানে ঝুঁকি রয়েছে। আমি তাই অনুরোধ করব যে এনডিএমকে চাপ দিয়ে এই পদক্ষেপ করানো হোক এবং বিমানে করে অক্সিজেন নিয়ে আসা সহ সব বিকল্প ব্যবহার করার জন্য অনুমতি দেওয়া হোক।'‌

রেমডেসিভির রপ্তানিকারদের লাইসেন্স

কেন্দ্র সরকার রেমডেসিভিরের রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারিকে স্বাগত জানিয়ে উদ্ধব ঠাকরে চিঠিতে লেখেন, ‘‌ইন্ডিয়ান পেটেন্টস আইন ১৯৭০-এর ৯২ ধারা অনুযায়ী সরাসরি কর্তৃপক্ষকে বাধ্যতামূলক লাইসেন্স দেওয়ার জন্য আমি আপনাকে অনুরোধ করব, এতে দেশীয় বাজারে রেমডেসিভির উৎপাদন ও বিক্রির ক্ষেত্রে সুবিধা পাওয়া যাবে।'‌ আর একটি চিঠিতে ঠাকরে মোদীকে অনুরোধ করে জানিয়েছেন যে মহামারিতে আক্রান্ত মানুষদের ত্রাণ সরবরাহের জন্য বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক। মার্চ ও এপ্রিলে জিএসটি রিটার্নের মেয়াদ তিনমাস বাড়িয়ে দেওয়ার কথাও জানিয়েছেন ঠাকরে

আক্রান্তদের সাহায্য করার অনুমতি

চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘যাঁদের নাম এএওয়াই ও পিএইচএইচ রেশন কার্ডে রয়েছে, সেই সব পরিবারের সদস্যদের অন্তোদয়া অন্ন যোজনা (‌এএওয়াই)‌ ও প্রায়োরিটি হাউস হোল্ডের (‌পিএইচএইচ)‌‌ অধীনে লকডাউন চলাকালীন প্রাপ্তবয়স্কদের একশো টাকা ও শিশুদের ৬০ টাকা করে টাকা দেওয়ার অনুমতি দেওয়া হোক রাজ্যকে।' সরকারি আধিকারিকেরা জানিয়েছেন যে কেন্দ্র যদি রাজ্যের প্রস্তাবে সায় দেয় তবে জাতীয় খাদ্য সুরক্ষা আইনের অন্তর্গত ৭ কোটি মানুষ উপকৃত হবে। ‌

করোনাকে প্রাকৃতিক বিপর্যয় অ্যাখা

এদিন করোনা মহামারিকে ‘প্রাকৃতিক বিপর্যয়' আখ্যা দেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে কেন্দ্রকে চিঠি দিয়েছে উদ্ধব ঠাকরে। তিনি কেন্দ্র সরকারকে অনুরোধ করেন করোনা মহামারিকে ‘প্রাকৃতিক বিপর্যয়' হিসাবে আখ্যা দেওয়ার জন্য। ‘প্রাকৃতিক বিপর্যয়' আখ্যা দিলে রাজ্য সরকারগুলি ক্ষতিগ্রস্থদের আর্থিক সহায়তা দেওয়ার জন্য রাজ্য দুর্যোগ মোকাবিলা তহবিল ব্যবহার করতে পারবে। রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা আইন অনুযায়ী কেন্দ্র এই সিদ্ধান্ত নিতে পারে। প্রত্যেক রাজ্যের এখন প্রয়োজন অর্থের। মূলত, বন্যা, ভূমিকম্প, সাইক্লোনের মতন প্রাকৃতিক দুর্যোগে রাজ্যগুলো এই তহবিল থেকে অর্থ নিয়ে থাকে এবং রাজ্যের বিপর্যয় মোকাবিলায় কাজে লাগায়।

করোনা সঙ্কটে দেশের একশোটি হাসপাতালে তৈরি হবে অক্সিজেন প্ল্যান্ট, ঘোষণা কেন্দ্রের