২ জনকে এনকাউন্টার করে আম্বানি বোমাতঙ্ক কাণ্ড মীমাংসা করার পরিকল্পনা ছিল ধৃত সচিন বেজের

মুকেশ আম্বানি বোমাতঙ্ক কাণ্ডের তদন্তে নেমে এনআইএ ফের চাঞ্চল্যকর তথ্যের হদিশ দিল। এনআইএ জানিয়েছে যে ধৃত পুলিশ অফিসার শচিন বেজের মাথায় চলছিল চরম কিছু করার পরিকল্পনা। বেজ ভেবেছিল আম্বানি বোমাতঙ্ক কাণ্ডের দোষ চাপিয়ে দু’‌জনকে খতম করে দেওয়া।

দু’‌জনকে এনকাউন্টার করার পরিকল্পনা

এনকাউন্টারের দৃষ্টিভঙ্গী দিয়ে এখন এনআইএ বিষয়টি দেখছে। সচিন বেজের বাড়ি থেকে উদ্ধার হওয়া পাসপোর্ট অ্যান্টিলিয়া বোমাতঙ্কের পাজলের গুরুত্বপূর্ণ টুকরো হতে পারে। এনআইএর সূত্রের খবর, সচিন বেজের পরিকল্পনা ছিল পাসপোর্টের মালিক ও তাঁর সঙ্গে অন্য এক জনের ঘাড়ে আম্বানির বাড়ির সামনে জিলেটিন স্টিক সহ এসইউভি গাড়ি রাখার অভিযোগ চাপিয়ে তাঁদের একেবারে সরিয়ে দেবে। প্রসঙ্গত এই বোমাতঙ্ক কাণ্ড মহারাষ্ট্র জুড়ে দারুণ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে উদ্ধব ঠাকরের সরকারের মধ্যে তা রাজনৈতিক নাটকের সূচনা করে।

প্রকৃত পরিকল্পনা ছিল অন্য

গত ২৫ ফেব্রুয়ারি মুকেশ আম্বানির বাড়ির সামনে থেকে উদ্ধার হয় এসইউভি গাড়ি। প্রকৃত পরিকল্পনা অনুযায়ী, দু'‌জন ব্যক্তিকে (‌এনআইএ এখনও যাদের সনাক্ত করতে পারেনি)‌ সচিন বেজ গুলি করে মেরে দেবে এবং ওইদিন আম্বানি মামলার মীমাংসা হয়ে গিয়েছে বলে দাবি করবে সচিন বেজ। গত ১৭ মার্চ সচিন বেজের বাড়িতে তল্লাশি অভিযান চালানোর সময় এই পাসপোর্টটি উদ্ধার হয়। এনআইএ সূত্রের এও খবর যে পরিকল্পনা ছিল ওই দুই ব্যক্তি মারুতি ইকো গাড়ি চালিয়ে ভেতরে আইডি বিস্ফোরণ রেখে তা অ্যান্টিলিয়ার সামনে রাখবে। ওই গাড়িটি তারা ঔরঙ্গাবাদ থেকে চুরি করেছিল। এনআইএ ওই গাড়ির নম্বর প্লেট মিঠি নদী থেকে উদ্ধার করে।

মনসুখ হিরেনের এসইউভি গাড়ি ব্যবহার

তবে ভাগ্য খারাপ ছিল সচিন বেজের তাই ওই পরিকল্পনাটি বাস্তব রূপ নেয়নি। এর বদলে বেজ প্ল্যান বি প্রয়োগ করে, এর অনুযায়ী থানের ব্যবসায়ী মনসুখ হিরেনের এসইউভি গাড়ি ব্যবহার করা হয়। পরে এই মনসুখ হিরেনকে খুন করা হয়। মনসুখ হিরেনের খুনের পেছনে বেজের হাত রয়েছে তা আগেই তদন্ত করে জানিয়েছিল এটিএস। এটিএসের এক সূত্রের খবর, বেজ এনকাউন্টার স্পেশালিস্ট হয়েও পুরো প্লটকে খুব দুর্বলভাবে পরিকল্পনা করেছিল। সচিন বেজ এসইউভি গাড়ির নম্বর প্লেট বদলে দেয় এবং স্করপিও গাড়ির নম্বর আঁচড়ে তা না বোঝার অবস্থায় ছেড়ে দেয়। যদিও এটিএস গাড়িতে থাকা বিমা সংস্থার ফোন থেকে এই গাড়ির নম্বর পায় এবং হিরেন পর্যন্ত পৌঁছায় এবং এই মনসুখ হিরেনই বেজের পরিকল্পনা ভেস্তে দেয়।

বেজ এনকাউন্টারের পরিকল্পনা করেছিল এবং এই আম্বানি মামলা সমাধান করে নিজেকে নায়ক হিসাবে ভাবতে চেয়েছিল। এনআইএ জানায় যে এই মামলাটি পরিকলপনা করে আ সমাধান করার মাধ্যমে অভিযুক্ত কিছু লাভ করতে চেয়েছিল।

নিখোঁজ মোবাইল ফোনের সন্ধান চলছে

যদিও এখনও খোঁজ চলছে সন্দেহজনক ব্যক্তির, যে মনসুখ হিরেনকে শ্বাসরোধ করে খুন করে। সচিন বেজ তার কিছু ঊর্ধ্বতন আধিকারিকের নাম জানিয়েছে, যারা এই মামলার সঙ্গে যুক্ত, তবে এনআইএ বেজের এই দাবির স্বপক্ষে প্রমাণ জোগাড়ের চেষ্টা করছে। সূত্রের খবর, প্রাক্তন মুম্বই পুলিশ কমিশনার পরম বীর সিংকে জিজ্ঞাসাবাদের সময় তিনি অস্বীকার করেছেন যে বেজের কোনও দুষ্কর্ম সম্পর্কে তিনি অবহিত ছিলেন না। তবে এই ধাঁধার আরও একটি বড় অংশ নিখোঁজ মোবাইল ফোন। এই ফোনটি তথ্য সমন্বিত গুপ্তধন হতে পারে। জানা গিয়েছে, গ্রেপ্তারের আগে সচিন বেজ ও ই মোবাইল ফোনটি ব্যবহার করেছিল, যা তারপর থেকে আর পাওয়াই যায়নি। যদিও বহু জিনিস উদ্ধার হয়েছে, কিন্তু পাওয়া যায়নি মোবাইল ফোনটি।

এই কাণ্ডে ধৃতরা

এনআইএ এই বোমাতঙ্ক কাণ্ডে ইতিমধ্যেই সচিন বেজ সহ সাসপেন্ডেড কনস্টেবল বিনায়ক শিন্ডে, ক্রিকেট বুকি নরেশ গৌর ও বেজের সহকর্মী রিয়াজ কাজিকে গ্রেফতার করেছে।