সৌপ্তিক বন্দ্যোপাধ্যায় : ১৩ এপ্রিল গুলি চলেছিল প্রায় ১৬৫০ রাউন্ড। বেসরকারি তথ্য বলছে মৃত ১৬০০। আহত ১০০০। আজ থেকে ১০২ বছর আগে যখন এই নারকীয় হত্যালীলা চলছে তখন সেখানে উপস্থিত ছিলেন এক বাঙালি ডাক্তারবাবু। তাঁর চেষ্টাতেই হত্যাকাণ্ডের প্রমান লোপাট করতে পারেনি ইংরেজরা। আজ যেখানে হত্যাকাণ্ডের স্মৃতি সৌধ, এই বাঙালি জেদ চেপে ধরে না বসলে সেখানে তখন বাজার হয়ে যেত, হয়তো চাপা পড়ে যেত ইতিহাসও। হতে দেননি এই বাঙালি। আজও অবশ্য তাঁর পরিবার আগলে রেখেছে জালিয়ানওয়ালাবাগকে। সেই বাঙালি ষষ্ঠীচরণ মুখার্জি।
ষষ্ঠীচরণ ডাক্তারি সূত্রে থাকতেন এলাহাবাদে। মদনমোহন মালব্যর প্রিয়পাত্র ছিলেন। তিনিই ষষ্ঠীচরণকে অমৃতসর পাঠিয়েছিলেন ১৯১০–সালে। এরপর আর বাংলায় ফেরেননি বাংলায়। ডাক্তার মুখার্জি নিজের চোখের সামনে দেখেছিলেন জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যকান্ড। মঞ্চের নীচে লুকিয়ে কোনও মতে প্রাণ বাঁচিয়েছিলেন। তারপর বানিয়েছিলেন স্মৃতিসৌধ।
ব্রিটিশরা কাপড়ের মার্কেট করতে চেয়েছিল। নেমে পড়েছিল স্থানটি অধিগ্রহণ করতে, উদ্দেশ্য গণহত্যার প্রমাণ লোপাট। হতে দেননি বাঙালি ডাক্তারবাবু। তখন সাড়ে ছয় একর জালিয়ানওয়ালাবাগের জমির মালিক ছিলেন হিম্মত সিং।ষষ্ঠীচরণ কিনবেন বলে ঠিক করে নেন। কিন্তু অত বড় জমি, তখনই দাম ৫ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা। কীভাবে হবে? গান্ধীজির সহায়তা ছিল কিন্তু মুখার্জিবাবু নিজে দরজায় দরজায় ঘুরে সংগ্রহ করেন অর্থ। ওঠে প্রায় ৯ লক্ষ টাকা। আর ফিরে তাকাতে হয়নি। জমি কিনে নিয়েছিলেন। জমি কেনার জন্য তাঁকে জেলেও যেতে হয়। দমে যাননি। জেল থেকে বেরিয়ে আরও আগলে ধরেছিলেন ওই জমি। অনেক চেষ্টা করেও ব্রিটিশরা তাঁর থেকে জমি দখল করে নিতে পারেনি।
ব্রিটিশ এদেশ ছেড়ে যাওয়ার পর পয়লা মে ১৯৫১ গঠিত হয় জালিয়ানওয়ালাবাগ ন্যাশনাল মেমোরিয়াল ট্রাস্ট। যার প্রথম সম্পাদক ডাক্তার ষষ্ঠীচরণ মুখার্জি। চেয়ারম্যান হন ভারতের প্রধানমন্ত্রী। স্মৃতিসৌধের নকশা বানান আমেরিকার স্থপতি বেঞ্জামিন পোলক। ১৯৬১–এর ১৩ এপ্রিল, আর এক বৈশাখীর দিনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর উপস্থিতিতে ভারতের রাষ্ট্রপতি ডঃ রাজেন্দ্র প্রসাদ জালিয়ানওয়ালাবাগ শহিদ স্মৃতি সৌধ উদ্বোধন করেন। আজও ট্রাস্টের সম্পাদক ডাক্তার মুখার্জি–র নাতি সুকুমার মুখার্জি।
রাওলাট সত্যাগ্রহকে কেন্দ্র করে যে ব্যাপক আন্দোলন সূচনা হয় তার চরম পরিণতি ঘটে পাঞ্জাবের এই জালিয়ানওয়ালাবাগের নির্মম হত্যাকাণ্ড। ১৯১৯, ১৩ এপ্রিল অমৃতসরের বৈশাখী উৎসবের জন্য জনগণ শহরের পূর্ব দিকে অবস্থিত জালিয়ানওয়ালাবাগে একত্রিত হয়েছিল। ভিতরে মঞ্চ গড়ে হচ্ছিল রাওলাটের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী সভাও। এই সময়েই ভিড়ে ঠাসা অঞ্চলে ব্রিটিশরা গুলি চালায়। নির্মম ভাবে হত্যা করে হাজার হাজার মানুষকে। এই বছর ১০২ বছরে পড়ল নারকীয় হত্যাকাণ্ড।
জালিয়ানওয়ালা বাগ উদ্যানে প্রবেশের জন্য একটি চওড়া পথ ছিল এবং বেরোনোর জন্য চারটি পথ ছিল। স্থানটির চারিদিক ঘেরা ছিল বড় বড় বাড়ি এবং ১০০ ফুট উঁচু পাঁচিলে। ওইসময় জেনারেল ডায়ারের নির্দেশে অমৃতসরের সমস্ত সভা-সমিতি নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। অনেকেই এই নিষেধাজ্ঞা জানতেন না। তাই অজান্তেই জমায়েত করেছিল সাধারণ মানুষ। ব্রিটিশ পুলিশ মানুষের কোনওরকম নির্দেশ না দিয়ে গুলি চালাতে শুরু করে। সেখানে উপস্থিত তখন প্রায় ১০ হাজার মানুষ।
লাল-নীল-গেরুয়া...! 'রঙ' ছাড়া সংবাদ খুঁজে পাওয়া কঠিন। কোন খবরটা 'খাচ্ছে'? সেটাই কি শেষ কথা? নাকি আসল সত্যিটার নাম 'সংবাদ'!
'ব্রেকিং' আর প্রাইম টাইমের পিছনে দৌড়তে গিয়ে দেওয়ালে পিঠ ঠেকেছে সত্যিকারের সাংবাদিকতার। অর্থ আর চোখ রাঙানিতে হাত বাঁধা সাংবাদিকদের।
কিন্তু, গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভে 'রঙ' লাগানোয় বিশ্বাসী নই আমরা। আর মৃত্যুশয্যা থেকে ফিরিয়ে আনতে পারেন আপনারাই। সোশ্যালের ওয়াল জুড়ে বিনামূল্যে পাওয়া খবরে 'ফেক' তকমা জুড়ে যাচ্ছে না তো? আসলে পৃথিবীতে কোনও কিছুই 'ফ্রি' নয়। তাই, আপনার দেওয়া একটি টাকাও অক্সিজেন জোগাতে পারে। স্বতন্ত্র সাংবাদিকতার স্বার্থে আপনার স্বল্প অনুদানও মূল্যবান। পাশে থাকুন।.