সৌপ্তিক বন্দ্যোপাধ্যায় : স্বামীর বিশাল ছায়ায় ঢাকা পড়ে যাওয়া এক চরিত্র তিনি। বৈবাহিক জীবনে যে সব আশা আকাঙ্ক্ষা থাকে সে সব প্রায় কিছুই মেলেনি, কারণ স্বামী যে মহাত্মা। দেশের জন্য কাজ করতে হবে যাকে তার কি পরিবারের জন্য ভাবার অত সময় আছে? ভাবেননি কস্তুরবা গান্ধী। সমস্ত কিছু দূরে ঠেলে রেখে স্বামীর পাশে দাঁড়িয়েছেন, আন্দোলনে সামিল হয়েছেন। কিন্তু সে সব ইতিহাস খুব একটা সামনে আসে না। স্বামীর ছত্রছায়া যে বিশাল।
সাত বছর বয়সে বিবাহ হয় পাঁচ মাসের ছোট বর মোহনদাসের সঙ্গে। ১৫ বছর বয়সে প্রথম সন্তান। সে আবার মারা যায়। সেই সন্তান শোক কাটিয়ে উঠতে সময় লেগেছিল মেয়ের। ধীরে ধীরে মানিয়ে নিয়েছিলেন। সময়ের সঙ্গে মানিয়ে নিয়েছিলেন অনেক কিছু। শেষে কখন কীভাবে স্বামীর দেশ স্বাধীন করার আন্দোলনে নিজেকে জড়িয়ে ফেলেছিলেন তা নিজেও জানতেন না। আফ্রিকায় থাকার সময়েই ভারতীয় কলোনিতে প্লেগ রোগীদের সেবায় সদিচ্ছায় নেমে পড়েছিলেন। ১৯২০ সালে অসহযোগ আন্দোলনে ব্যাপকভাবে যুক্ত ছিলেন কস্তুরবা গান্ধী। এসব কথা বিশেষ প্রকাশ্যে আসে না। ১৯৪২ সালে ভারত ছাড়ো আন্দোলন যখন শুরু হচ্ছে গ্রেফতার করা হয় গান্ধীজীকে। শিবাজি পার্কে তাঁর ভাষণ দেওয়ার কথা বিকেলে। তার আগেই গ্রেফতার করা হয়। স্বামীর স্থান পূরণ করেছিলেন কস্তুরবা। দিয়েছিলেন ভাষণ। সুশীলা নায়ারের সঙ্গে বসে লিখে ফেললেন সেই ভাষণ। বলেছিলেন , ‘গান্ধীর আদর্শ অনুসরণ ছাড়া আমাদের অন্য পথ নেই। ভারতের মেয়েরা তাঁদের শক্তির পরিচয় দিন। তাঁরা সবাই আন্দোলনে যোগ দিন, জাতিবর্ণের বিভেদ ভুলে। সত্য ও অহিংসাই হোক আমাদের মন্ত্র।’ এমন বহু উদাহরণ আছে যেখানে এভাবেই এগিয়ে এসেছেন গান্ধী জায়া।
১৮৬৯-এর ১২ এপ্রিলে কস্তুরবার জন্ম। স্বামীর চেয়ে তিনি কয়েক মাসের বড়, এই নিয়ে কস্তুর পরিহাসও করেছেন। কস্তুরবা গোকুলদাস কাপাডিয়া এবং ভিরাজকুনয়েরবা কাপাডিয়া পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। পরিবারটি গুজরাটি ব্যবসায়ীর মোধু বনিয়া প্রজাতির অন্তর্গত ছিল এবং উপকূলীয় শহর পোরবন্দরে অবস্থান করছিল। কস্তুরবা প্রথম জীবনে সামান্য পরিচিত ছিলেন। ১৮৮৩ সালের মে মাসে, ১৪ বছর বয়সী কস্তুরবার সঙ্গে ১৩ বছর বয়সী মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধীর বিয়ে হয়। দুই পরিবারের অভিভাবরা বিয়ের ব্যবস্থা করেছিলেন, এবং তাদের সনাতন হিন্দু পদ্ধতিতে বিয়ে হয়েছিল। একসঙ্গে কাটিয়েছেন মোট বাষট্টি বছর।
তাদের বিয়ের দিন স্মরণ করে গান্ধীজী নিজেই বলেছিলেন, ‘আমরা বিয়ে সম্পর্কে কিছু জানতাম না, আমাদের জন্য এটা ছিল শুধুমাত্র নতুন জামা পড়া, মিষ্টি খাওয়া এবং আত্মীয়স্বজনদের সঙ্গে খেলা করার দিন।’ যাইহোক, প্রচলিত ঐতিহ্য হিসাবে, কিশোরী নববধূ বিয়ের প্রথম কয়েক বছর (তার স্বামীর সাথে সঙ্গতিপূর্ণ হওয়ার আগপর্যন্ত) তার পিতামাতার বাড়িতে এবং তার স্বামীর কাছ থেকে দূরে কাটানোর নিয়ম ছিল। অনেক বছর পরে লেখা, মোহনদাস তার নববধূর জন্য যে অনুভূতি প্রকাশ করেছিলেন, সে সম্পর্কে দুঃখের সাথে বর্ণনা করেছিলেন, ‘স্কুলে গিয়েও আমি ওঁর কথা ভাবতাম, এবং আমাদের পরবর্তী সাক্ষাতগুলোতে সে আমাকে কখনোই হতাশ করেনি।’
লাল-নীল-গেরুয়া...! 'রঙ' ছাড়া সংবাদ খুঁজে পাওয়া কঠিন। কোন খবরটা 'খাচ্ছে'? সেটাই কি শেষ কথা? নাকি আসল সত্যিটার নাম 'সংবাদ'!
'ব্রেকিং' আর প্রাইম টাইমের পিছনে দৌড়তে গিয়ে দেওয়ালে পিঠ ঠেকেছে সত্যিকারের সাংবাদিকতার। অর্থ আর চোখ রাঙানিতে হাত বাঁধা সাংবাদিকদের।
কিন্তু, গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভে 'রঙ' লাগানোয় বিশ্বাসী নই আমরা। আর মৃত্যুশয্যা থেকে ফিরিয়ে আনতে পারেন আপনারাই। সোশ্যালের ওয়াল জুড়ে বিনামূল্যে পাওয়া খবরে 'ফেক' তকমা জুড়ে যাচ্ছে না তো? আসলে পৃথিবীতে কোনও কিছুই 'ফ্রি' নয়। তাই, আপনার দেওয়া একটি টাকাও অক্সিজেন জোগাতে পারে। স্বতন্ত্র সাংবাদিকতার স্বার্থে আপনার স্বল্প অনুদানও মূল্যবান। পাশে থাকুন।.