রোহিতের রেকর্ড, ধোনির 'ফ্লপ শো'! ২০২০-তে কেমন কেটেছিল আট দলের ক্যাপ্টেনদের আইপিএল?

বলা হয় একজন অধিনায়ক ততটাই ভালো যতটা তাঁর দল। এই প্রবাদটা যতটা সত্যি, ততটাই সত্যি এর উল্টোটাও। আইপিএলে মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের সাফল্যের নেপথ্যে রোহিত শর্মার অবদান কোনও ভাবেই অগ্রাহ্য করার নয়। ২০১৩ সালে রোহিত যখন প্রথমবার মুম্বইয়ের হাল ধরেছিলেন, তখন দলের বেহাল দশা। সেখান থেকে তুলে ধরে প্রথমবার দলকে ট্রফি এনে দিয়েছিলেন রোহিত। তারপর এক এক করে আরও চারটি। ক্রিকেটে একজন অধিনায়কের মর্ম যে কতটা তা, আইপিএলে রোহিত-ধোনিদের দেখে অনায়াসে বোঝা যায়। দলকে অনুপ্রেণিত করে ট্রফি নিয়ে আসার ক্ষেত্রে রোহিত-ধোনিদের জুড়ি মেলা ভার। তবে খুব একটা পিছিয়ে নেই বাকি ছয় দলের অধিনায়করাও। চলতি আইপিএলে আট দলের অধিনায়ক হওয়া খেলোয়াড়রা ২০২০ সালে কোন ফর্মে ছিলেন, তার উপর অনেকটাই নির্ভর করছে যে চলতি আইপিএলে তাঁরা তাদের দলকে কোন পথে চালিক করবেন। তাই একনজরে দেখে নেওয়া যাক ২০২০ সালের আইপিএলে আট অধিনায়কের ফর্ম।

রোহিত শর্মা (মুম্বই ইন্ডিয়ান্স)

আইপিএলের ইতিহাসে সবথেকে সফল অধিনায়ক রোহিত শর্মা। ২০১৬ সালের আইপিএলে তিনি ১২টি ম্যাচ খেলেন। ৩টে হাফ সেঞ্চুরি সহ ৩৩২ রান করেন তিনি। তিনি সর্বোচ্চ রান সংগ্রহকারীদের তালিকায় ২৩তম স্থানে ছিলেন রোহিত। ২৭টি চার এবং ১৯টি ছক্কা মারা রোহিতের গড় ছিল ২৭, স্ট্রাইক রেট ১২৮। মোটের উপর ব্যাটসম্যান হিসেবে অতি সাধারণ আইপিএল কাটান রোহিত। তবে অধিনায়ক রোহিত মুম্বইকে তাদের পঞ্চম ট্রফি এনে দেন।

বিরাট কোহলি (আরসিবি)

কোনওদিন আইপিএল জিততে না পারলেও আইপিএলের উপর গভীর প্রভাব রয়েছে বিরাট কোহলির। ২০২০ সালে ১৫টি ম্যাচে খেলা বিরাট ৪২-এর গড়ে ৪৬৬ রান করেন। ২৩টি চার এবং ১১টি ছক্কা মারা বিরাটের স্ট্রাইকরেট ছিল ১২১। গত মরশুমে বিরাট তিনটি হাফ সেঞ্চুরি করেন। অধিনায় হিসেবে বিরাট ১৫টির মধ্যে ৭টি ম্যাচ জেতেন, আটটিতে হারেন। আরসিবি এলিমিনেটরে সানরাইজার্স হায়দরাবাদের কাছে হেরে যায়।

মহেন্দ্র সিং ধোনি (চেন্নাই সুপার কিংস)

২০২০ সালের আইপিএল খুব একটা ভালো কাটেনি মহেন্দ্র সিং ধোনির। সিএসকের হয়ে ১৪টি ম্যাচ খেলেন ধোনি। ১২ ইনিংসে ধোনির ব্যাট থেকে আসে মাত্র ২০০ রান। ২৫-এর গড় এবং ১১৬-এর স্ট্রাইক রেট একেবারেই ধোনিচিত ছিল না। তাছাড়া উইকেটরক্ষক হিসেবে ধোনি ১৫টি ক্যাচ ধরেন এবং একটি স্ট্যাম্পিং করে। এদিকে অধিনায়ক ধোনির অধীনে সিএসকের ঝুলিতে ১৪ ম্যাচে মাত্র ছয়টি জয় আসে।

ইয়ন মর্গ্যান (কলকাতা নাইট রাইডার্স)

চলতি আইপিএলের দুই বিদেশি অধিনায়কের মধ্যে অন্যতম হলেন ইয়ন মর্গ্যান। বিশ্বকাপজয়ী এই অধিয়াকের উপরই ভরসা রাখছে কেকেআর। আইপিএলে গম্ভীর জমানা ফেরার আশায় মর্গ্যানের উপর কেকেআরের টিম ম্যানেজমেন্ট ভরসা দেখায় গত টুর্নামেন্টের আর্ধেক শেষ হওয়ার পর। ২০২০ সালে মর্গ্যান ১৪টি ম্যাচে ৪১৮ রান করেন। ৪২-এর গড় এবং ১৩৮ স্ট্রাইক রেটে খেলা মর্গ্যানের ঝুলিতে ২০২০-তে একটি মাত্র হাফ সেঞ্চুরি আসে। টুর্নামেন্টে ৩২টি চারের পাশাপাশি ২৪টি ছক্কা হাকান তিনি। ক্যাপ্টেন মর্গ্যান ৭ ম্যাচে দলকে মাত্র তিনটি জয় এনে দিতে সক্ষম হন।

কেএল রাহুল (পাঞ্জাব কিংস)

গত আইপিএলের অন্যতম শ্রেষ্ঠ খেলোয়াড় ছিলেন কেএল রাহুল। যদিও তাঁর দুর্দান্ত পারফর্ম্যান্সও তাঁর দলকে প্লে-অফে নিয়ে যেতে পারেনি। ক্রমতালিকায় ষষ্ঠ স্থানে থেকে আইপিএল শেষ করে পাঞ্জাব। ২০২০ সালে ১৪ ম্যাচে রাহুল ৬৭০ রান করেন। পাঁচটি হাফসেঞ্চুরি ছাড়াও একটি সেঞ্চুরি হাকান রাহুল। টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ রান সংগ্রহক ছিলেন রাহুল। তিনি ১০টি ক্যাচ ধরেন টুর্নামেন্টে। তবে তাঁর অধিনায়কত্বে দল মাত্র ছটি ম্যাচে জেতে। হারের মুখ দেখে আটটি ম্যাচে।

ঋষভ পন্থ (দিল্লি ক্যাপিটালস)

শ্রেয়স আইার চোটের জেরে আইপিএল থেকে ছিটকে যাওয়ায় দিল্লি ক্যাপিটালসের দায়িত্ব বর্তেছে ঋষভ পন্থের উপর। ২৩ বছর বয়স এই উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান গতবছর ১৭টি ম্যাচ খেলে। ১৪ ইনিংসে পন্থের ব্যাট থেকে আসে ৩৪৩ রান। মাত্র একটি হাফসেঞ্চুরি করেন তিনি। এছাড়া ১৩টি ক্যাচ ধরেন তিনি। তবে সম্প্রতি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ভালো ফর্মে রয়েছেন ঋষভ। এই পরিস্থিতিতে ঋষভের উপর নজর থাকবে ক্রিকেট মহলের।

সঞ্জু স্যামসন (রাজস্থান রয়্যালস)

এই প্রথমবার রাজস্থানের অধিনায়কত্বের দায়িত্ব বর্তাচ্ছে কেরলের এই বিধ্বংসী উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যানের কাঁধে। গতবছর দুর্দান্ত ভাবে টুর্নামেন্ট শুরু করেও পরে ফর্ম পড়ে যায় তাঁর। ১৪টি ইনিংস খেলে সঞ্জুর ঝুলিতে ৩৭৫ রান আসে। ১৫৯ স্ট্রাইকরেটে সঞ্জু ২১টি চার এবং ২৬টি ছক্কা মারেন। উইকেটরক্ষক হিসেবে সঞ্জু ৯টি ক্যাচ ধরেন এবং দুটি স্ট্যাম্পিং করেন।

ডেভিড ওয়ার্নার (সানরাইজার্স হায়দরাবাদ)

২০১৭ সালে শেষবার আইপিএল জিতেছিল সানরাইজার্স হায়দরাবাদ। গতবছর গ্রুপ লিগে তৃতীয় হয়েও ফাইনালে যাওয়া হয়নি তাদের। দলের অধিনায়ক ডেভিড ওয়ার্নার আইপিএলের ইতিহাসে অন্যতম শ্রেষ্ঠ ব্যাটসম্যান। গত আইপিএলে ১৬টি ম্যাচে ডেভিড ওয়ার্নার ৫৪৮ রান করেন। অব়্যাঞ্জ ক্যাপের দৌড়ে তিনি তৃতীয় স্থানে ছিলেন। ৩৯.১৪-এর গড়ে ওয়ার্নারের ঝুলিতে ৪টি হাফসেঞ্চুরি করেন। ৫২টি চার এবং ১৪টি ছক্কা মারেন ওয়ার্নার।

আইপিএলের উদ্বোধনী ম্যাচে চেন্নাইয়ে মুখোমুখি মুম্বই ইন্ডিয়ান্স ও আরসিবি, শেষ মুহূর্তের অনুশীলনে বিরাট-রোহিতরা