সৌপ্তিক বন্দ্যোপাধ্যায় : তৈমুর লংয়ের ‘ভূত’ তাড়া করে বেরিয়েছিল স্তালিনকেও। নাদির শাহের সঙ্গেও একই ঘটনা ঘটেছিল। জনশ্রুতি এমনটাই। আজ সেই বিশ্ব বিভীষিকার জন্মদিন। সাড়ম্বরে পালন করার দিন মোটেই নয় বরং বহু বহু বছরের জনশ্রুতি বলছে তৈমুরকে শান্তিতে ঘুমোতে দেওয়া উচিৎ কবরে। জাগালেই বিপদ।
১৩৩৬ সালের ৯ এপ্রিল জন্ম তৈমুরের। জন্মস্থান বর্তমান উজবেকিস্তানে। সম্পূর্ণ নাম তৈমুর বিন তারাগাই বারলাস। বিশ্বজয়ে বেরিয়েছিলেন আলেকজান্ডার ও চেঙ্গিস খান। তারপরে তৈমুর লং। কিন্তু তার মতো ভয়ঙ্কর কেউ ছিল না। একের পর এক যুদ্ধে জিতে সাম্রাজ্য বিস্তার করেছিল তৈমুর। তাঁর সাম্রাজ্য শুরু হয়েছিল আধুনিক তুরস্ক থেকে। মাঝে সিরিয়া, ইরাক, কুয়েত, ইরান থেকে মধ্য এশিয়ার অধিকাংশ অংশ যার মধ্যে রয়েছে কাজাখস্তান, আফগানিস্তান, রাশিয়া, তুর্কমেনিস্তান, উজবেকিস্তান, কিরগিজিস্তান, ভারতবর্ষ এমনকি চিনের কাশগড়ও ছিল তার দখলে। এই যুদ্ধ করতে গিয়েই ডান পা অক্ষম হয়ে গিয়েছিল। তাতে কী?
অপরাজেয় সম্রাট থেমে যায়নি। ক্রমে বেড়েছিল তার নির্মমতা, নিষ্ঠুরতা, ভয়ংকর এক অর্থলোলুপ দস্যু লুঠেরার রূপ । ঐতিহাসিকদের মতে তৈমুর মোট ১৭ মিলিয়ন মানুষ হত্যা করেছিলেন যা সেই সময়ের হিসাবে সারা পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার প্রায় সাত শতাংশ । ১৩৯৮ সালে উত্তর ভারত আক্রমণ করে তৈমুর । সেই সময় দিল্লীর মসনদে সুলতান নাসিরুদ্দিন মাহমুদ শাহ তুঘলক। তৈমুর লংয়ের হাতে ভারতে তুঘলক শাসনের যবনিকাপতন ঘটে। ১৪০৫ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি চিন সীমান্তের কাছে ঠান্ডা লেগে মৃত্যু হয় তৈমুরের । তৈমুরকে কবর দেওয়া হয় উজবেকিস্তানের সমরখন্দ নামে এক জায়গায়। এরপর থেকে কাহিনী শুধুই তৈমুরের ‘ভূতের’, যা এলাকায় বছরের পর বছর ঘুরে বেরিয়েছে। বিংশ শতাব্দীতে পিছু ছাড়েনি স্তালিনেরও।
তৈমুরের সমাধি পাথর দিয়ে ঘেরা। সেখানে উজবেকি ভাষায় লেখা ছিল ‘যেদিন আমি নিদ্রা ভেঙে আবার জেগে উঠবো সেদিন দুনিয়া আবার কাঁপবে’। ভয়ে সমাধিস্থানের ধারে কাছেও ঘেঁষত না মানুষ। শোনা যায় ১৭৪০ সালে নাদির শাহ একবার চেষ্টা করেছিলেন সমাধি ভেঙে তৈমুরের দেহ নিয়ে যাওয়ার । কিন্তু বেশ কিছু দুর্ঘটনা ঘটে যাওয়ায় তিনি আর সেই পথ মাড়াননি ।
সোভিয়েত ইউনিয়নের সর্বেসর্বা জোসেফ স্তালিন কোনওরকম কুসংস্কারে মানতেন না। ১৯৪১ সালের মে মাসের শেষদিকে তিনি তাশ মুহাম্মদ কারি নিয়াজভ আর মিখাইল গেরাসিমভের নেতৃত্বে একদল প্রত্নতত্ববিদকে পাঠান সমরখন্দে। উদ্দেশ্য সমাধিগৃহ ভেঙে তৈমুরের দেহাবশেষ বার করে আনা ।
স্থানীয় মানুষেরা তৈমুরের অভিশাপের কথা মনে করিয়ে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেছিল তাদের। কিন্তু স্তালিন তো স্তালিন। কে কার কথা শোনে! ১৯৪১ সালের ২০ জুন দেওয়াল ভেঙে মূল কবরের কাছে পৌছায় বিশেষজ্ঞদের দল। দেখা যায় আরও এক সাবধানবাণী। লেখা ছিল , ‘যে বা যারা আমার পবিত্র কবর কলুষিত করার সাহস দেখাবে তাদের দেশ আমার থেকেও ভয়ঙ্কর আর দুর্মদ কোনো ব্যক্তির হাতে ছারখার হয়ে যাবে’। এসবে পাত্তা না দিয়ে কবরের উপরের পাথর সরিয়ে বার করে ফেলা হয়েছিল তৈমুরের কঙ্কাল। তারপর যা হওয়ার তাই হয়েছিল।
১৯৪১ সালের ২২ জুন, ঠিক দু’দিন পর হিটলার আক্রমণ করেন সোভিয়েত রাশিয়া । ‘অপারেশন বারবারোসা’। দেড় বছর লড়াই চলার পর স্তালিনগ্রাদে লালফৌজ একটা প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সক্ষম হয়। আধুনিক ইতিহাসের ভয়ংকরতম যুদ্ধ। স্তালিনগ্রাদের যুদ্ধে লক্ষা লক্ষ সেনা, সাধারন মানুষ মারা যায়। এই সময় থেকেই ফিরে আসতে শুরু করে তৈমুর ‘ভূত’ তত্ব। বহু জায়গা থেকে অনুরোধ জানানো হয় তৈমুরের অভিশপ্ত দেহাবশেষ পুনরায় তার সমাধিস্থ করার। জনমতের চাপে তৈমুর লং-এর কঙ্কালকে ফের সমাধিস্থ করা হয় সমরখন্দে। ঘটনা ১৯৪৩ সালের ৩১ জানুয়ারীর। সঙ্গে সঙ্গে যুদ্ধ জয়। কাকতালীয় হলেও ইতিহাস বলছে এমনটাই। তৈমুরকে নতুনভাবে সমাধিস্থ করার পরে থেকেই জার্মান সেনা সোভিয়েত ইউনিয়নের কাছে ঘাড় ধাক্কা খেয়ে পেছোতে শুরু করে। ১৯৪৫ সালে বার্লিন শহরে জার্মান বাহিনী পুরোপুরি আত্মসমর্পন করে মিত্র বাহিনীর কাছে।
লাল-নীল-গেরুয়া...! 'রঙ' ছাড়া সংবাদ খুঁজে পাওয়া কঠিন। কোন খবরটা 'খাচ্ছে'? সেটাই কি শেষ কথা? নাকি আসল সত্যিটার নাম 'সংবাদ'!
'ব্রেকিং' আর প্রাইম টাইমের পিছনে দৌড়তে গিয়ে দেওয়ালে পিঠ ঠেকেছে সত্যিকারের সাংবাদিকতার। অর্থ আর চোখ রাঙানিতে হাত বাঁধা সাংবাদিকদের।
কিন্তু, গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভে 'রঙ' লাগানোয় বিশ্বাসী নই আমরা। আর মৃত্যুশয্যা থেকে ফিরিয়ে আনতে পারেন আপনারাই। সোশ্যালের ওয়াল জুড়ে বিনামূল্যে পাওয়া খবরে 'ফেক' তকমা জুড়ে যাচ্ছে না তো? আসলে পৃথিবীতে কোনও কিছুই 'ফ্রি' নয়। তাই, আপনার দেওয়া একটি টাকাও অক্সিজেন জোগাতে পারে। স্বতন্ত্র সাংবাদিকতার স্বার্থে আপনার স্বল্প অনুদানও মূল্যবান। পাশে থাকুন।.